সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়া চাকরিপ্রার্থীরা ১০ দিন ধরে রাজপথে আছেন। দিনে তাঁরা শাহবাগে অবস্থান নেন আর রাতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে ঘুমান। এরই মধ্যে দুদিন পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করেছে। চাকরিপ্রার্থীরা লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন, যঁাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী।

প্রথম আলোর অনলাইন খবর অনুযায়ী, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে শনিবারও রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীরা।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি। তাঁরা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চাকরিতে যোগদান করেছেন। কিন্তু তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ আটকে যায় উচ্চ আদালতে নিয়োগবঞ্চিত কয়েকজনের রিটের কারণে। আদালত উল্লিখিত চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে দেন। এর পর থেকে তাঁরা লাগাতার আন্দোলন করে আসছেন।

আন্দোলনকারীরা রাজপথে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁদের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখা হবে; কিন্তু আদালতের ওপর তাঁদের হাত নেই। সরকারের এই আশ্বাস আন্দোলনকারীদের মোটেই আশ্বস্ত করতে পারেনি। তাঁদের অব্যাহত আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে।

আন্দোলনকারীদের বক্তব্য হলো একই প্রক্রিয়ায় দুই দফায় অন্যদের নিয়োগ হলেও তাঁদের ক্ষেত্রে কেন আপত্তি করা হলো? এটা এমন নয় যে সাবেক সরকারের আমলে পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষার ফল বের হয়েছে এই সরকারের আমলেই, গত বছরের ৩১ অক্টোবর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৪ জুন তৃতীয় ধাপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত পরীক্ষা হয় ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় একই বছরের ২১ এপ্রিল। ১২ জুন সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ৩১ অক্টোবর ফল প্রকাশিত হয়। এতে ৬ হাজার ৫৩১ জন চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।

 প্রশ্ন হলো, কয়েক দফা রাস্তায় হাঙ্গামা সৃষ্টির পর কেন সরকার আপিল করল? আগে করলে হয়তো এই চাকরিপ্রার্থীদের দিনের পর দিন রাস্তায় আন্দোলন করতে হতো না। আমরা মনে করি, আদালতের দোহাই দিয়ে এখানে সরকারের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। এক আইনে তো দুই ফল হতে পারে না। আর সব ক্ষেত্রে যাঁরা আদালতের দোহাই দেন, তাঁদের গত বছরের জুলাই–আগস্টের কথাও স্মরণ করতে বলব। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল আদালতের একটি রায়কে কেন্দ্র করেই।

আমরা চাই সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে চাকরিপ্রার্থীদের বিষয়টি ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে দেখবে। তারা এমন কিছু করবে না, যাতে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস রাস্তায় বিপুল সংখ্যক চাকরিপ্রার্থীকে রাস্তায় থাকতে হয়। তাঁরা নিজেদের থেকে কোনো দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন না; আন্দোলন করছেন সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবিতে, আগের দুই দফায় যেভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ কর প র র থ র সহক র সরক র র পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

মুশফিকের প্রেমকাহিনির মঞ্চে ম্যাথুসের বিদায়ী সুর

* শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৬ টেস্টে বাংলাদেশের একটাই জয়। সেটি আবার শ্রীলঙ্কাতে। সেই জয় বাংলাদেশের শততম টেস্টে বলে আপনার তা খুব ভালোমতোই মনে থাকার কথা।

* টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ৬০০ ছাড়ানো একমাত্র স্কোরটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেটিও শ্রীলঙ্কাতে।

* টেস্টে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, সেটিও শ্রীলঙ্কাতেই।

শেষ দুটি আবার একে অন্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দুটি একই টেস্টে। ২০১৩ সালে যে টেস্টে বাংলাদেশের ৬৩৮, সেটিতেই মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি। টানা ১২ টেস্টে হারার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ড্র-ও।

এই পুরোনো প্যাচাল খুব বেশি অপ্রাসঙ্গিক লাগবে না, যখন জানবেন ওই টেস্টটা হয়েছিল গল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। পশ্চাৎপটে অতিকায় গল ফোর্টের পাথুরে কাঠামো আর দুই পাশে সাগর মিলিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়ামের একটি। ২০০৪ সালে সুনামিতে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার পর পুনর্জন্ম নেওয়া গলের সেই মাঠেই আজ শুরু বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট। শুরু আসলে তিন ধরনের ক্রিকেটেই একে অন্যের নাড়ি-নক্ষত্র বুঝে নেওয়ার লড়াই। যাতে টেস্ট আছে, ওয়ানডে আছে, আছে টি-টোয়েন্টিও। দুই টেস্টের পর সাদা বলের সিরিজে তিনটি করে ম্যাচ।

আরও পড়ুনআমিনুল ইসলাম বুলবুলকে চিনতে হলে এই লেখাটা পড়তে হবে০২ জুন ২০২৫

দুই দল পরস্পরের খুব চেনা। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ২৬টি টেস্ট খেলেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ঘন ঘন দেখা হলে হৃদ্যতা যেমন হয়, তেমনি রেষারেষিও। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। গত কয়েক বছরে এই দুই দল মুখোমুখি হলেই মাঠে বা মাঠের বাইরে উত্তেজনার ফুলকি ছুটেছে। ‘টাইমড আউট’ হয়তো সেটির এক নম্বরে, এর বাইরেও নানা কিছু মিলে লঙ্কা-বাংলা এখন গনগনে এক দ্বৈরথের নাম।

গত চার বছর দুই দলের মধ্যে চতুর্থ টেস্ট সিরিজ। দুই দলের জন্যই রণকৌশল ঠিক করা তাই খুব সহজ হওয়ার কথা। বাংলাদেশ দলের জন্য হয়তো তা থাকছে না শ্রীলঙ্কা দলে নতুনের সমারোহে। ১৮ জনের দলের এক–তৃতীয়াংশই এখনো টেস্ট খেলার অপেক্ষায়। বাংলাদেশ দলেও কিছু পরিবর্তন আছে, তবে তা ধর্তব্যের মধ্যে নয়।

টেস্টের প্রস্তুতিতে গলে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল

সম্পর্কিত নিবন্ধ