ইমান আরবি শব্দ। আরবি ‘আমনুন’ শব্দ থেকে এর উৎপত্তি। শব্দটির মূল অর্থ বিশ্বাস করা, স্বীকৃতি দেওয়া এবং বিশ্বস্ততা বা হৃদয়ের স্থিতি। এ ছাড়া আনুগত্য করা, শান্তি, নিরাপত্তা, অবনত হওয়া এবং আস্থা অর্থেও ইমান শব্দটি ব্যবহৃত হয়। (মুয়জামুল মাকায়িসিল লুগাহ, ১/১৩৩)
বিশ্বাস বা ধর্মবিশ্বাস বোঝাতে পবিত্র কোরআনে ও হাদিসে ইমান শব্দটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর বিশ্বাসী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে মুমিন শব্দটি।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘আর কেউ ইমান প্রত্যাখ্যান করলে তার কর্ম বিনষ্ট বা নিষ্ফল হবে এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৫)। আরও এরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। আর তোমাদের মধ্যে রয়েছে কতক কাফির এবং কতক মুমিন। (সুরা তাগাবুন, আয়াত: ২)
আরও পড়ুনশিক্ষিত নারী সাহাবি হজরত শিফা (রা.)১১ মে ২০২৩
ইমান কী? ইমানের মূল পরিচয় একটি হাদিসে সহজভাবে বিবৃত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে একবার হজরত জিবরাইল (সা.) মানুষের বেশে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইমান কী? তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর পুস্তকগুলো (আসমানি কিতাব), তাঁর সাক্ষাতে, তাঁর রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং শেষ দিবসে পুনরুত্থান ও তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন (করার নাম ইমান)। (বুখারি, হাদিস: ৫০)
বিভিন্ন ইমামের কাছ থেকে পরিভাষাগতভাবে ইমানের বিভিন্ন আঙ্গিকের সংজ্ঞা পাওয়া যায়। তবে সেসব সংজ্ঞার মূল বক্তব্য কাছাকাছি। ইমাম আবু হানিফা (র.) বলেছেন, ‘ইমান হচ্ছে অন্তরের সত্যায়ন ও মুখের স্বীকৃতি।’ ইমাম শাফেয়ি, মালেক ও আহমদ ইবনে হাম্বল (র.)-র মতে, ‘অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি এবং আমলে বাস্তবায়ন করার নাম ইমান।’ (শারহুল ফিকহিল আকবর, মোল্লা আলী কারী, পৃষ্ঠা: ১৪১-১৫০)
আরও পড়ুনহজরত উমর (রা.) ছিলেন সুশিক্ষিত সাহাবি০৩ মে ২০২৩পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াত (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৩৬, ১৭৭ ও ১৮৫; সুরা কামার, আয়াত: ৪৯; সুরা নিসা: ১৩৬) এবং হাদিসের (বুখারি, হাদিস: ১/৯৬-৯৭; মুসলিম, হাদিস: ১/১৫৭) ভিত্তিতে ইমানের আরকান বা স্তম্ভ মোট ছয়টি সাব্যস্ত। ছয়টি মৌলিক বিশ্বাসের সমষ্টির নাম ইমান। বিষয় ছয়টি হলো: ১. আল্লাহর প্রতি, ২. ফেরেশতাদের প্রতি, ৩. নবী-রাসুলদের প্রতি, ৪. আল্লাহ প্রেরিত কিতাবগুলোর প্রতি, ৫. পরকাল, পুনরুত্থান বা শেষ দিবসের প্রতি এবং ৬. তাকদিরের (ভাগ্য) প্রতি ইমান (বিশ্বাস স্থাপন করা) আনা। অনেক গবেষক শেষ দিবস বা কিয়ামত আর পুনরুত্থানকে আলাদাভাবে পেশ করেছেন। সে হিসাবে, তাদের দৃষ্টিতে, ইমানের আরকান মোট সাতটি।
এই ৬ থেকে ৭টি বিষয়ের সব কটির ওপর যদি কেউ সমভাবে ইমান না আনে, তবে তাঁর ইমান পূর্ণাঙ্গ হবে না। (কিবাতুল ঈমান, ড. মুহাম্মাদ নাঈম ইয়াসিন, অনুবাদ: ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক, পৃষ্ঠা: ১৭)
নবী-রাসুলদেরটি ছাড়া ইমানের অন্য সব কয়টি রোকন অদৃশ্য। আর নবী-রাসুলগণকেও এই যুগে এখন আর চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং ইমানের সার্বিক বিষয়াবলি গায়েব বা অদৃশ্য। পবিত্র কোরআনে মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা অদৃশ্য বা গায়েবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩)
আরও পড়ুনহজরত উমর (রা.) ছিলেন সুশিক্ষিত সাহাবি০৩ মে ২০২৩পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইমান বা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে নির্দেশ করা হয়েছে, যাকে আমরা কালিমায়ে শাহাদত নামে চিনি বা জানি। এ কালিমার প্রথম বিষয় হচ্ছে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য বা মাবুদ নেই।’ দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ‘আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।’ বিভিন্ন হাদিসে এই দুটি বিষয় একাধিক রূপে বর্ণিত হয়েছে। তবে মূল আলোচ্য এই দুটিই। উল্লিখিত দুটি বিষয়ের ওপর সাক্ষ্য দিয়ে সাহাবিদের ইসলাম গ্রহণ করার বর্ণনা বিভিন্ন হাদিসে পাওয়া যায়। (বুখারি, হাদিস: ১/১৭৬, ৩/১২১১; মুসলিম, হাদিস: ১/৩০২, ৩/১৩৮৬; নাসাঈ, হাদিস: ১/১০৯।) সেই ধারাবাহিকতায় আজও নতুনভাবে কেউ ইসলাম গ্রহণ করতে আগ্রহী হলে, তাকে কালিমায় শাহাদত পাঠ করানো হয়। এ ছাড়া ইমান বা বিশ্বাসের পরিচায়ক হিসেবে কালিমায়ে তাইয়্যেবা নামে আরও একটি কালিমার ব্যবহার রয়েছে। সেখানেও তওহিদ বা একত্ববাদ এবং রিসালাত বা নবুওয়াত সাক্ষ্য বিদ্যমান। তবে শুধু এই কালিমা মুখে পাঠ করার নাম ইমান নয়। এ কালেমা দুটোর মূল বিষয়বস্তুকে অন্তরে বিশ্বাস করতে হবে, মুখে স্বীকার করতে হবে এবং আমলে বাস্তবায়ন করতে হবে।
আরও পড়ুনলোকদের দীন শেখান হজরত জিবরাইল (আ.) ০৬ মে ২০২৩একজন মুমিন-মুসলমানের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবাদ সম্পদ ইমান। কারণ, ইমানহীন আমল বা কাজ মূল্যহীন বা নিষ্ফল। (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৫) ইমানের বিপরীত হলো কুফর বা শিরক। ইমানের স্তর ও পরিচয় নিয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন আলোচনা রয়েছে। ভালো ও নেক কাজে ইমান বাড়ে এবং পাপ ও খারাপ কাজে ইমান কমে। সে কারণে প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের প্রধান দায়িত্ব হলো ইমানের প্রতি যত্নবান হওয়া।
আরও পড়ুননবীজি (সা.)-এর মুজিজা২৫ এপ্রিল ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ ত হয় ছ ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
ঘাড়ব্যথার কারণগুলো কী কী, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা জেনে রাখুন
অনেক কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
১. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস
২. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস
৩. সারভাইক্যাল রিবস
৪. সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া
৫. সারভাইক্যাল ডিস্ক প্রলেপস বা হারনিয়েশন যেখানে হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে
৬. মাংসপেশি, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি
৭. অস্বাভাবিক পজিশনে নিদ্রা
৮. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগ
৯. হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ এবং ক্ষয়
১০. অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোগ
১১. হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া
১২. রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ আর্থ্রাইটিস
১৩. সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস
১৪. ফাইব্রোমায়ালজিয়া
১৫. সামনে ঝুঁকে বা পাশে কাত হয়ে ভারী কিছু তুলতে চেষ্টা করা
১৬. হাড়ের ইনফেকশন
১৭. ডিস্কাইটিস (ডিস্কের প্রদাহ)
১৮. পেশাগত কারণে দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু বা উঁচু করে রাখলে ইত্যাদি।
উপসর্গ
ঘাড়ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত ছড়াতে পারে।
কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব।
বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে।
সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে আছে মনে হয়।
ঘাড়ের মুভমেন্ট করলে, ঘাড় নিচু করে ভারী কিছু তোলার পর তীব্র ব্যথা।
হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়।
ব্যথা মাথার পেছন থেকে শুরু হয়ে মাথার সামনে আসতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
ঘাড়ব্যথার কারণ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা হতে পারে—রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, ঘাড়ের এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান।
চিকিৎসা
চিকিৎসা এর কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে।
কনজারভেটিভ চিকিৎসা: ১. ব্যথা বা প্রদাহনাশক ওষুধ ২.ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যেমন ম্যানুয়াল বা ম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোমেডিকেল ইকুইপমেন্ট যেমন ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথারমি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা: মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ু সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে দুর্বলতা এবং অবশ ভাব দেখা দিলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
ঘাড়ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়
১. সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না।
২. মাথার ওপর কোনো ওজন নেবেন না।
৩. প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে।
৪. শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন।
৫. শোবার সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে দেবেন।
৬. তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো (টুইসটিং) বন্ধ করা।
৭. সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না।
৯. কাত হয়ে শুয়ে পড়বেন না বা টেলিভিশন দেখবেন না।
১০. কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখবেন।
১১. গরম প্যাড, গরম পানির বোতল দিয়ে গরম সেঁক দেবেন।
১২. ঘাড়ের পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।
এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ঢাকা
আরও পড়ুনকাঁধের ব্যথা বা কাঁধ জমে যাওয়ার কারণ ও করণীয়১৭ এপ্রিল ২০২৫