নিজেদের সুবিধার আশায় একদল সাংবাদিক স্বৈরাচারের দালালি করেছে: প্রেস সচিব
Published: 16th, February 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাড়াও গত ১৫ বছরে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে সাংবাদিকদের একটি দল নিজেদের সুবিধার আশায় দালালি করেছে। তারা স্বৈরাচারকে স্থায়ী করতে, বৈধতা দিতে বয়ান তৈরি করে মানুষকে হয়রানি করেছে, অধিকার হরণ করেছে। বর্তমান বাংলাদেশে সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় যাচ্ছে। দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক সাংবাদিকতা করার সময় এসেছে।
আজ রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শফিকুল আলম। ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ‘গণমাধ্যমের ফ্যাসিবাদী বয়ান: ফিরে দেখা ১-৩৬ জুলাই’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
শফিকুল আলম বলেন, সাংবাদিকেরা কী ভূমিকা পালন করেন, তার সব থেকে যায়। প্রতিটি দালালি ডকুমেন্টেড (নথিভুক্ত) হয়ে গেছে। ১-৩৬ জুলাই ছাড়াও ২০০৯ সাল থেকে বড় বড় ঘটনার বয়ান তৈরি করেছে এই দালালেরা। বড় কোনো ঘটনার সময়েও ফেসবুকে একটা বড় গ্রুপ, সাংবাদিকদের একটা গ্রুপ বয়ান তৈরি করত। তারা ঘটনাগুলোকে বৈধতা দিত। এগুলো করার মাধ্যমে স্বৈরাচারকে স্থায়ী ও মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। মানুষকে মারার বৈধতা দেওয়া হতো।
বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে গণমাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা ছিল বলে উল্লেখ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তিনি বলেন, মেধা কতটুকু, কী সাংবাদিকতা করে, সেটা মুখ্য বিষয় নয়। ব্যক্তিজীবন, রাজনৈতিক মতাদর্শ কী, সেটা ছিল বিবেচ্য। এসব দেখার জন্য একটি গোষ্ঠী ছিল। জুলাই অভ্যুত্থানে শুধু পত্রিকাতেই দালালি হয়নি, বিভিন্ন ইউটিউব ভিডিও ও টক শোতেও হয়েছে। ভয়াবহ সাংবাদিকতা হয়েছে। এগুলো করার মূল কারণ ছিল পূর্বাচলে একটা প্লট বা অ্যাকাউন্টে অনেক টাকা।
তবে সব সাংবাদিক দালালি করেননি বলে উল্লেখ করেন শফিকুল আলম। তিনি বলেন, এই গণ-অভ্যুত্থানে পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। অনেকে এখনো ‘ট্রমাটাইজ’ (মানসিক আঘাতগ্রস্ত)। দেশের অনেক পত্রিকা, সাংবাদিকের ভালো ভূমিকা ছিল। অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে থেকে গত ১৫ বছরে হাসিনাশাহির স্বৈরতন্ত্রের রক্তচক্ষুকে পাত্তা না দিয়ে তারা সাংবাদিকতা করেছে, মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখ করেছে। বাধা সত্ত্বেও ডিজিএফআই, রাজনীতিবিদ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সাংবাদিক লীগকে উপেক্ষা করে যারা সাংবাদিকতা করেছে, তাদের স্যালুট।
বিগত সরকারের সময়ে যে সাংবাদিকতা হয়েছে, তার ওপর গবেষণা করার আহ্বান জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গবেষণা সরকারি উদ্যোগে হলে ধরা হবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হচ্ছে। তাই বেসরকারি উদ্যোগে করতে হবে।
শফিকুল আলম বলেন, এখন স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ সময় যাচ্ছে। এমন বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে কেউ দালালি করবে না। নতুন বাংলাদেশে দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক সমালোচনার সাংবাদিকতা করতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে বলা যাবে। প্রমাণসহ যাকে ইচ্ছা সমালোচনা করা যাবে। স্বাধীন সাংবাদিকতা প্রয়োজন, যেখানে প্রতিটা সরকারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। এ মাসের শেষে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেবে।
আলোচনা সভায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো.
‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ প্ল্যাটফর্মটির মুখপাত্র প্লাবন তারিক অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্ল্যাটফর্মটি ১-৩৬ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত শতাধিক সংবাদ-সম্পাদীয়কে ‘কেস’ হিসেবে নিয়ে পর্যালোচনা করেছে। সেগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করে কালের কণ্ঠ, জনকণ্ঠ ও ভোরের কাগজে প্রকাশিত ১০টি সংবাদ-সম্পাদকীয় আজকের অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে উপস্থাপন করা হয়। এই সংবাদগুলোকে ফ্যাসিবাদের বয়ান হিসেবে উল্লেখ করেছে প্ল্যাটফর্মটি।
‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক সাংবাদিক জয়নাল আবেদিন শিশির অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আরও বক্তব্য দেন উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবুল আলম, ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম সরক র র ব দ কত র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ব্যানার, তদন্তের দাবিতে প্রক্টর অফিসে একদল শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলাভবনের ‘শ্যাডোতে’ নিষিদ্ধঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একটি ব্যানারের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রতিবাদে শুক্রবার রাতে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেন। তবে শেষ পর্যন্ত মিছিল কর্মসূচি স্থগিত করে ৯-১০ জন শিক্ষার্থীর একটি দল সহকারী প্রক্টরদের সঙ্গে আলোচনা করে।
আলোচনা শেষে রাত ৯টার দিকে প্রক্টর অফিসের সামনে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ব্যানার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য লজ্জাজনক। তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) আজিজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের আনাগোনা আমাদের বারবার ব্যথিত করছে। প্রশাসনের কাছে যখনই জানতে চাই, তারা বলে, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সম্পর্কে আমরা আজও জানতে পারিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী শেখ হাসিনার পক্ষে মিছিল করেছেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। (২০২৪ সালের) ১৫ জুলাই হামলায় জড়িত ছাত্রলীগের বিচার এখনো পর্যন্ত আমরা দেখতে পাইনি।’
আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা দেখতে পাই আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা রাতের বেলা কলাভবনে বসে বাদাম খান। তাঁদের কাজ কি বাদাম খাওয়া? নাকি পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা? সেই প্রশ্ন আজকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে রেখেছি।’
এই ছাত্রনেতা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে এবং পরবর্তী সময়ে সেই প্রতিবেদন তাঁদের কাছে পেশ করা হবে।