অন্তর্বর্তী সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ ও উপলব্ধির জায়গা বেড়েছে। কিন্তু খুব বেশি গুছিয়ে কাজ এগোয়নি। জলবায়ু নিয়ে বহুদিন হলো কাজ হচ্ছে। তবে কাজগুলো খুব বিচ্ছিন্নভাবে হয়। ন্যায্যতার কথা বলা হলেও বরাদ্দে তার প্রতিফলন থাকে না।

‘লিঙ্গ সমতা ও জলবায়ু জোট-বাংলাদেশ’ সম্মেলনে তিনি এ বলেন। সুইডেন দূতাবাসের অর্থায়নে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) ক্রিয়া প্রকল্প এ সম্মেলনের আয়োজন করে। আজ রোববার সকালে গুলশানের একটি হোটেলে এ সম্মেলন হয়। সম্মেলনের ‘উইমেন লিডিং দ্য ওয়ে: ইনফ্লুয়েন্সিং পলিসি অ্যান্ড কলাবোরেটিভ ক্লাইমেট অ্যাকশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু নিয়ে ঢালাও রাষ্ট্রীয় বয়ান দিয়ে আর হবে না। বয়ানে পরিবর্তন আনতে হবে। নীতিমালার মাধ্যমে চরম দুর্যোগপীড়িত এলাকার জন্য আলাদা করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে। এ নিয়ে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে ‘টাইম পভার্টি, জেন্ডার ইকুইটি অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ ইমপ্যাক্ট’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এমজেএফের পরিচালক, রাইটস অ্যান্ড গভর্ন্যান্স প্রকল্প বনশ্রী মিত্র নিয়োগী। ‘ইফেক্টিভ এনগেজমেন্ট অব উইমেন ইন ন্যাপ অ্যান্ড এনডিসি প্রসেস অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো.

শামসুদ্দোহা।

বক্তারা বলেন, যেকোনো দুর্যোগে নারীদের ওপর গৃহস্থালির চাপ ও নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে যায় এবং তাঁদের উপার্জনমূলক কাজ কমে যায়। কিন্তু জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে নারীরা কতটা দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছেন, কতটা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন—সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও জেন্ডারের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয় না। সব মিলিয়ে নাগরিক অধিকার থেকে নারীরা বঞ্চিতই থেকে যান।

সভাপ্রধানের বক্তব্যে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এ–বিষয়ক নীতিমালা তৈরির সময় নারীদের কথা সাধারণত গুরুত্ব পায় না। তাই জেন্ডার–সমতা ও জলবায়ু জোট-বাংলাদেশের মাধ্যমে নীতিমালা তৈরির জন্য একেবারে তৃণমূলের নারীদের বক্তব্য তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।

মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় ইউএন উইমেনের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট দিলরুবা হায়দার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলা হলেও এর পেছনের কারণ নিয়ে আলোচনা হয় না। অঞ্চল ও প্রয়োজনভেদে শ্রেণিবিভক্ত তথ্য সংগ্রহ না করার ফলে যথাযথভাবে পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় যে বরাদ্দ আসে, তা ব্যবহারেও নারীর কথা বিবেচনায় থাকে না।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, কমিউনিটিভিত্তিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তৃণমূলের মতামত ও পরামর্শগুলো তুলে এনে নীতিনির্ধারণী পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইউএনডিপির জেন্ডার টিম লিডার শারমিন ইসলাম, অক্সফাম বাংলাদেশের হেড অপ. ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস রাইটস মোহাম্মদ ইমরান হাসান, পরিবেশবিজ্ঞানী আহসান উদ্দিন আহমেদ, সুইডেন দূতাবাসের হেড অপ. ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন মারিয়া স্ট্রিডসম্যান, নাগরিকতা-সিভিক এনগেজমেন্ট ফান্ডের ডেপুটি টিম লিডার ক্যাথারিনা কোনিগ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের রেজিলিয়েন্ট লাইভলিহুডের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মেহের নিগার ভূঁইয়া প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ