নিজেদের অধীন ‘স্পেশাল ডেডিকেটেড রেসপন্স ফোর্স’ চান ডিসিরা
Published: 17th, February 2025 GMT
জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অধীন বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে ১০ থেকে ১৫ জনের একটি ‘স্পেশাল ডেডিকেটেড রেসপন্স ফোর্স’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কর্তব্যরত অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাধ্যতামূলকভাবে বডি ক্যামেরা রাখা, জনবিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মারণাস্ত্র ও ছররা গুলি ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবও দিয়েছেন ডিসিরা।
গতকাল রোববার থেকে শুরু হওয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসকেরা জননিরাপত্তা বিভাগ-সম্পর্কিত আলোচনায় এ রকম ১১টি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন। তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিনে আগামীকাল মঙ্গলবার জননিরাপত্তা বিভাগ-সম্পর্কিত কার্য অধিবেশন হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া এদিন জনপ্রশাসন, আইন মন্ত্রণালয়সহ আরও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ–সম্পর্কিত কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এবার জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রায় ১ হাজার ৫০টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩৫৪টি আলোচনার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক সম্মেলনে এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। প্রতিবছর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় এই জেলা প্রশাসক সম্মেলন। জেলা প্রশাসকেরা মাঠপর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকেন। সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়, উন্নয়ন কর্মসূচি ও অন্যান্য বিষয়ে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে থাকেন তাঁরা। এ জন্য এই সম্মেলন ও তাঁদের প্রস্তাবকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়।
জননিরাপত্তা বিভাগ-সম্পর্কিত আলোচনার জন্য লিখিত প্রস্তাবে মাগুরার জেলা প্রশাসক ‘স্পেশাল ডেডিকেটেড রেসপন্স ফোর্স’ গঠনের প্রস্তাব করেছেন। এর যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) নিজে কিংবা তাঁর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, উচ্ছেদ অভিযান, বিভিন্ন জরুরি কার্যক্রম তথা ত্রাণ বিতরণ ও দুর্যোগে তাৎক্ষণিক সেবা দিয়ে থাকেন। নিজস্ব সুরক্ষা, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ও জরুরি সেবা কার্যক্রম বেগবান করার জন্য জেলা প্রশাসকের অধীন বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে ‘স্পেশাল ডেডিকেটেড রেসপন্স ফোর্স’ গঠন প্রয়োজন। কারণ, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে বিদ্যমান বিভিন্ন বাহিনীর সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে প্রস্তুতিমূলক কারণে সময়ক্ষেপণ হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি স্বার্থ বিঘ্নিত হয়।
এ ছাড়া জেলার পুলিশ বাহিনীর সার্বিক কার্যক্রমের ওপর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন গাইবান্ধা ও সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক। গোপনীয় এই প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জননিরাপত্তা বিভাগ একটি নির্দিষ্ট কাঠামো বা ফরম্যাট তৈরি করে দিতে পারে বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর যুক্তি হিসেবে বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে। এতে আরও বলা হয়, জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (জেলা প্রশাসক) প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কার্যক্রমে মূলত পুলিশ বাহিনীর ওপর নির্ভর করতে হয়।
পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি রাখার সুপারিশ করেছেন মাগুরা ও মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক। যুক্তি হিসেবে তাঁরা বলেছেন, এর ফলে নিয়োগপ্রক্রিয়া অধিকতর কার্যকর, ফলপ্রসূ ও গ্রহণযোগ্য হবে।
এ ছাড়া অপরাধ তথ্যভান্ডার ও জাতীয় পরিচয়ের তথ্যভান্ডারে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (জেল প্রশাসক) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন মাগুরার জেলা প্রশাসক।
ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের বিধিমালা করা এবং এই আদালতের দণ্ডবিধির কিছু ধারায় অর্থদণ্ড বাড়ানো ইত্যাদি প্রস্তাবও এসেছে। দণ্ডবিধির কিছু ধারায় ন্যূনতম অর্থদণ্ড ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক। নরসিংদী জেলার চরাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে আলাদা থানা গঠনের প্রস্তাব করেছেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক।
আইন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত আলোচনার জন্য জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে জেলা পর্যায়ে স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট গঠন, নিবন্ধন অধিদপ্তরকে আইন মন্ত্রণালয়ের হাত থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যস্ত করাসহ আরও বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প শ ল ড ড ক ট ড র সপন স ফ র স র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।”
উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”
পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।”
তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস