যুক্তরাষ্ট্রে পুরোপুরি ক্লেপটোক্রেসি বা লুটপাটতন্ত্র কায়েম হয়েছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর ধ্বংস ট্রাম্পের অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। এই তন্ত্র কয়েকজনকে অত্যধিক ধনী করে তোলে, যা অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করে। মাফিয়া পুঁজিবাদ সব সময় মাফিয়া রাষ্ট্রের দিকে পরিচালিত করে। দুই ক্ষমতাসীন দল আমাদের প্রথমটা দিয়েছে। এখন আমরা দ্বিতীয়টা পেতে যাচ্ছি। এটি শুধু আমাদের সম্পদ নয়, স্বাধীনতাও কেড়ে নেয়।  

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনের পর ইলন মাস্কের সম্পদ ১৭০ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে তাঁর সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৩৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। মার্ক জাকারবার্গের বেড়েছে ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বর্তমানে মোট ২৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ পরিমাণ অর্থের সামনে বাইবেলে বর্ণিত মলুচ দেবতাও নতজানু হয়ে পড়বে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের একটি পর্যালোচনা অনুসারে, ট্রাম্প প্রশাসনের ধ্বংসাত্মক নীতি অন্তত ১১টি ফেডারেল সংস্থাকে প্রভাবিত করেছে, যার ৩২টিরও বেশি তদন্তাধীন, কিছু অভিযোগ মুলতবি কিংবা চলমান, যেখানে মাস্কের ছয়টি কোম্পানিও অন্তর্ভুক্ত। 
মাফিয়া রাষ্ট্র আইনি বাধানিষেধ ও নিয়মাবলি উপেক্ষা করে। এতে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের অভাব দেখা দেয়। এটি প্রাণ-প্রকৃতি, বাস্তুতন্ত্রসহ সবকিছু গিলে ফেলে, যতক্ষণ তা বিরান ভূমিতে পরিণত না হয়। এটি বাস্তবতা ও বিভ্রমের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না, যা স্থূল অক্ষমতাকে অস্পষ্ট করে রাখে এবং তা বাড়িয়ে তোলে। তারপর ফাঁপা ভবনটি ধসে পড়বে, যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণুর সমন্বিত পরিণতির ফল। এভাবে রোমান ও সুমেরীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছে। মায়া সভ্যতা ও ফরাসি রাজা ষোড়শ লুইয়ের রাজত্বেরও অবসান ঘটেছিল এভাবে। 

সব সাম্রাজ্যের ক্ষয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেও শাসকরা শুধু ব্যক্তিগত সমৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করেছিল। তারা ভার্সাই বা ‘দ্য ফরবিডেন সিটি’র মধ্যে আবদ্ধ ছিল। ক্রমবর্ধমান নিপীড়িত, দরিদ্র জনসংখ্যা ও বিধ্বস্ত পরিবেশ থেকে মুনাফার শেষ ফোঁটাও নিংড়ে নিয়েছিল। অভূতপূর্ব সম্পদ থেকে সৃষ্টি হলো অভূতপূর্ব দারিদ্র্য। 
জীবন যত চরম রূপ নেয়, ততই চরম মতাদর্শ গড়ে ওঠে। জনসংখ্যার বিশাল অংশ হতাশা ও অন্ধকার দূর করতে অক্ষম; বিশ্বব্যবস্থার বাস্তবতা থেকে তারা বিচ্ছিন্ন। এটি কাল্পনিক চিন্তাধারায় মত্ত থাকতে চায়। এটি উদ্ভট সহস্রাব্দবাদের ধারণা দেয়, যা আমাদের জন্য একটি খ্রিষ্টীয় ফ্যাসিবাদ রূপে মূর্ত। এ ব্যবস্থা শিল্পী, মূর্খ, অপরাধী, প্রতারক, গুন্ডা ও দুর্বৃত্তদের মহাপুরুষে পরিণত করে এবং যারা লুটপাট ও দুর্নীতিকে প্রকাশ্যে ঘৃণা করে, তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে চিহ্নিত করে। ধাবমান আত্মহননের এই প্রক্রিয়া বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক পক্ষাঘাতকে ত্বরান্বিত করে।

মাফিয়া রাষ্ট্র সবার মঙ্গল সাধনের ভান করে না। তাই ট্রাম্প, মাস্ক ও তাদের অধস্তনরা স্বাস্থ্য, পরিবেশগত ও নিরাপত্তা বিধি, খাদ্য সহায়তা, এমনকি হেড স্টার্টের মতো শিশুযত্নের কর্মসূচি সম্পর্কিত নির্বাহী আদেশ দ্রুত বাতিল করছে। আদালত তাদের কনজিউমার ফিন্যান্সিয়াল প্রটেকশন ব্যুরো ভেঙে দেওয়ার আদেশ স্থগিত করেছে। তারা আদালতের সেই আদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটি ঋণ বাতিল, আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং অন্যান্য ধরনের ভোক্তা তহবিল মঞ্জুর করে ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ সাধারণ আমেরিকানদের পকেটে দিতে হয়েছে।
তারা আন্তর্জাতিক উন্নয়নের জন্য মার্কিন এজেন্সি বাতিল করছে। তারা ফেডারেল ডিফেন্ডারদের অফিস বন্ধ করছে, যা দরিদ্রদের আইনি সুবিধা নিশ্চিত করে। তারা বায়োমেডিকেল গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষাগুলো বিপন্ন করে জাতীয় স্বাস্থ্য খাতের ইনস্টিটিউটের বাজেট থেকে বিলিয়ন ডলার কেটে রাখছে। সৌর ও বায়ু প্রকল্পের অনুমতি স্থগিত করেছে, যার মধ্যে ব্যক্তিগত জমিতে প্রকল্প সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় অনুমতির বিষয়ও রয়েছে। 

তাদের প্রকল্প ২০২৫ হলো মাফিয়া রাষ্ট্রের নীলনকশা, যেখানে চরম সামাজিক বৈষম্য, রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা, নির্বিচারে পরিবেশগত লুণ্ঠন ও আইনের শাসন উচ্ছেদের ইতিহাসকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
স্বাধীনতা এমনি এমনি আসে না। পতনের দুই হাজার বছর পর ইউরোপে গণতন্ত্রের পুনরায় উদ্ভব ঘটে। প্রাচীন গ্রিসের এথেন্স মূলত একটি সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। মাফিয়া রাষ্ট্র, গণতন্ত্রহীনতা ভবিষ্যতের তরঙ্গ হতে পারে, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ লোক বৈশ্বিক আর্থিক সম্পদের প্রায় ৪৩ শতাংশের মালিক। আর যেখানে মানব জাতির ৯৫ শতাংশেরও বেশি এবং বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী গ্রহের মোট জনসংখ্যার ৪৪ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, তারা প্রতিদিন ৬.

৮৫ মার্কিন ডলারের কম আয় করে। এই জগদ্দল পাথরসম শাসন কেবল অভ্যন্তরীণ কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, পাইকারি নজরদারি এবং নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব করার মাধ্যমে টিকে থাকে। 

ক্রিস হ্যাজেস: মার্কিন সাংবাদিক; দ্য ক্রিস হ্যাজেস
রিপোর্ট থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

যুদ্ধবিরতি নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রতিনিধি

যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য জার্মানিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রতিনিধি দল। সোমবার এই বৈঠক হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ এবং জামাতা জ্যারেড কুশনার ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয়দের সাথে আলোচনার জন্য জার্মানি সফর করছেন।

মার্কিন শান্তি প্রস্তাব নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সাথে আলোচনার নেতৃত্বদানকারী উইটকফকে পাঠানোর সিদ্ধান্তটি একটি সংকেত বলে মনে হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ওয়াশিংটন অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখছে। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, ট্রাম্প যদি মনে করেন যে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে তবেই কেবল একজন কর্মকর্তাকে আলোচনায় পাঠাবেন।

 বৈঠক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জার্মান সরকারের একটি সূত্র বলেছেন, “ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা সপ্তাহান্তে বার্লিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।”

সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর মের্জ বার্লিনে জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতাদের একটি শীর্ষ সম্মেলনের আতিথেয়তা করছেন, যা ইউরোপ জুড়ে মিত্রদের কাছ থেকে ইউক্রেনীয় নেতার প্রতি সমর্থনের ধারাবাহিক প্রকাশ্য প্রদর্শনের সর্বশেষ ঘটনা। কারণ প্রাথমিকভাবে মস্কোর প্রধান দাবিগুলিকে সমর্থন করে এমন একটি শান্তি পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করার জন্য কিয়েভ ওয়াশিংটনের চাপের মুখে রয়েছে।

ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মার্কিন প্রস্তাবগুলোকে পরিমার্জন করার জন্য কাজ করছে। আগের প্রস্তাবে কিয়েভকে আরো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার, ন্যাটোতে যোগদানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করার এবং তার সশস্ত্র বাহিনীর সীমাবদ্ধতা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ