ক্ষমতার দ্বন্দ্বের শিকার শিক্ষার্থীরা কেন হবেন
Published: 19th, February 2025 GMT
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৪ বছর পার হলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, বাড়ছে সেশনজট, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থমকে যাচ্ছে। উপাচার্যদের পদত্যাগ দাবিসহ নানা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় প্রত্যেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। এর মূলে রয়েছে শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্তৃত্বের লড়াই, ব্যক্তিস্বার্থ ও দলাদলি।
সর্বশেষ উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নাম করে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাসভবনে তালা দেওয়া, ফটক ভাঙচুরের ঘটনা কেবল একটি ব্যক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ নয়; বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যর্থতার প্রতিচিত্র। শিক্ষক-কর্মচারীদের দ্বন্দ্বের কারণেই শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন এবং তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে আন্দোলনের দায়িত্ব।
শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখা, সেশনজট নিরসন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা। কিন্তু এসব বাস্তবায়নের পরিবর্তে বারবার নতুন ইস্যু তৈরি করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রায় প্রতিটি বিভাগে শিক্ষার্থীরা দেড় থেকে দুই বছরের সেশনজটে পড়েছেন। শ্রেণিকক্ষ–সংকটের কারণে ব্যাচগুলোর নিয়মিত ক্লাস হয় না। পরীক্ষাগুলো নির্ধারিত সময়ে নেওয়া সম্ভব হয় না। এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ ও হতাশা বাড়ছে। তাঁরা পিছিয়ে পড়েছেন পেশাগত জীবনের প্রতিযোগিতায়।
এ অরাজকতার মূল দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনের ক্ষমতার দ্বন্দ্বের ওপর বর্তায়। উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের পেছনে যে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব কাজ করছে, তা স্পষ্ট। তাই অবিলম্বে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও প্রশাসনিক ব্যক্তিত্বদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসনে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত। শিক্ষা ও প্রশাসনের নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য দলাদলি বন্ধ করা না গেলে বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবেশ কখনোই স্থিতিশীল হবে না। নিশ্চিত করতে হবে যে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্বার্থে যেন ব্যবহার করা না হয়।
শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেশনজট কমিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ে শিক্ষা শেষ করার ব্যবস্থা করতে হবে। আর সর্বোপরি, বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে গবেষণা ও শিক্ষার উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণাঞ্চলের উচ্চশিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র। কিন্তু প্রশাসনিক ও শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক ইস্যুতে ব্যবহারের প্রবণতা, বারবার আন্দোলনের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা—এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম একেবারে ভেঙে পড়েছে। এখনই সময় এ সমস্যার সমাধান করার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর দ বন দ ব উপ চ র য
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি