নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসকদের নির্বাচনী আইন সর্বোচ্চ প্রয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। একইসঙ্গে এখন থেকেই নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে ডিসিদের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিন মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিনি এসব আহ্বান জানান। এর আগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কার্য-অধিবেশনে অংশ নেয় ইসি।

এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, “চারজন নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনের সিনিয়র সচিব অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন। বলতে গেলে একটা হেভিওয়েট ডেলিগেশন। এতে করে বোঝা যায়, আমরা এই সম্মেলনটাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা সবাই এসেছি। আমার মনে হয় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পুরো কমিশন ডিসি সম্মেলনে এসেছে কি না, আমার জানা নেই, মনে হয় না।”

সিইসি বলেন, “আপনারা জানেন যখন জাতীয় নির্বাচন হয়, জেলা প্রশাসকরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আইনশৃঙ্খলাসহ পুরো প্রক্রিয়ায় তাদের সম্পৃক্ততা থাকে। আমরা তাদের এই মেসেজটা দিতে চেয়েছি, সামনে যে নির্বাচনটা আসছে, তারা আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করবেন নিজ উদ্যোগে। আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করব। আমাদের যা ক্ষমতা আছে তা আমরা প্রয়োগ করব। তাদের যে ক্ষমতা আইন দিয়েছে, একজন রিটার্নিং কর্মকর্তার কী কী ক্ষমতা, তা আমাদের একজন কমিশনার পড়ে শুনিয়েছেন।”

তিনি বলেন, “আমরা চাই প্রো-অ্যাকটিভলি, অভিযোগের ভিত্তিতে নয়। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে, আপনারা সাংবাদিক বা কেউ একজন অভিযোগ করব, তা নয়। প্রো-অ্যাকটিভলি, নট রিঅ্যাকটিভলি। অ্যাকটিভলি যেকোনো ধরনের নির্বাচনী অপরাধ যাতে অ্যাড্রেস করা হয়, সে মেসেজটা আমরা দিয়েছি।”

সিইসি বলেন, “আমাদের ডিসিরা কিছু সাজেশন দিয়েছেন, তাদের কিছু অসুবিধার কথা বলেছেন। বিশেষ করে ট্রেজারিতে স্টোরেজ প্রবলেম বলেছেন। এনআইডি নিয়ে মানুষের হয়রানির কথা বলেছেন। আমরা এটা ক্লিয়ার করেছি যে এটা অ্যাড্রেস করার স্টেপ নিচ্ছি।”

তিনি বলেন, “যেহেতু আমি সিইসি, আমার তো সহযোগিতা চাইতেই হয়। রিটার্নিং অফিসার যারা থাকেন, এটা দয়া নয়, তারা আইনে বাধ্য এ ধরনের (নির্বাচনী) ডিউটি পালন করতে। আমরা চাই আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ।”

“আমরা বলেছি, আমরা একটা ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন দিতে চাই। জাতিকে উপহার দিতে চাই। আমরা যে ওয়াদা করেছি, সেই ওয়াদা পালন করতে চাই। এতে করে জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনারদের ভূমিকা আপনারা ১৬ আনা পালন করবেন। সেই অনুরোধ আমরা তাদের কাছে রেখেছি।”

সিইসি বলেন, “আমরা বলেছি যে, ইলেকশন ডে-তে বা ইলেকশনের দুই চার দিন আগে পরে নয়, এখন থেকে আপনারা ইলেকশনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়ে যান। আপনার যেখানে যাবেন, সেখানে বক্তৃতার একটা অংশ যেন ইলেকশনকেন্দ্রিক থাকে।”

“মানুষ তো অনেকটা আমাদের ইলেকটোরাল সিস্টেমের ওপর আস্থা হারিয়েছে, আস্থার সংকট রয়েছে। যেখানে যাবেন, মানুষের ভোটের অধিকার সম্পর্কে তাদের সচেতন করার চেষ্টা করবেন। তাহলে এটা একটা ইফেক্টিভ কাজ হবে।”

এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, “আমরা যেমন কমিশন নির্বাচন নিয়ে কাজ করছি, আপনারা আমাদের সহযোদ্ধা। আমরা একটা যুদ্ধে নেমেছি, এই যুদ্ধ হলো- একটা সুন্দর ইলেকশন উপহার দেওয়ার যুদ্ধ। আপনারা (ডিসি) এখন থেকে কাজ শুরু করুন। তারা কথা দিয়েছেন, সেভাবে কাজ করবেন।”

“আমরা বলেছি যে আপনারা (ডিসি) ব্লেম গেম বাদ দিন। অমুকে এটা করেছে, তমুকে এটা করেছে, এজন্য আমরা পারিনি-এসব বাদ দিন। ব্লেম গেম নয়, আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই, সামনের দিকে তাকাই। সামনে আমাদের যেটা করতে হবে, সেটা নিয়ে চিন্তা করি। অতীতে কী হয়েছে, তা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে আমাদের কাজ ফেলে রাখতে পারব না। আমরা একসঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করব, তারা আমাদের ওয়াদা দিয়েছেন।”

সিইসি বলেন, “আগে নানাবিধ চাপ এসেছে তাদের উপরে। আমি তাদের নিশ্চিত করেছি, আমরা ওপর থেকে অবৈধ কোনো চাপ দেব না। আমরা আইনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করব। আপনারা আইনের সর্বোচ্চটা প্রয়োগ করবেন। অন্যায় কোনো চাপ আপনাদের ওপর দেব না। আর ওপর থেকে কোনো চাপ এলে তা অ্যাবজর্ব করব আমরা। আপনাদের কোনো চাপের মধ্যে থাকতে হবে না। আমরা আইনের ঘাটতি দেখি না, প্রয়োগের ঘাটতি দেখেছি।”

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সম্পর্কে কোনো বার্তা দিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “দিয়েছি। আমরা বলেছি এখন থেকে শুরু করুন। শুধু ভোটের দিনের জন্য বসে থাকবেন না। আপনাদের পুরোপুরি নিউট্রাল হতে হবে।”

জাতীয় নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে, কোনো টাইমফ্রেম দিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা তো প্রধান উপদেষ্টা বলে দিয়েছেন, আর্লি হলে ডিসেম্বর, একটু দেরি হলে পরের বছরের প্রথম দিকে। সেটাতো তারা জানেনই।”

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জরুরি। এ বিষয়ে ডিসিরা কিছু বলেছেন কি না-জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “তারা বলেছেন, কিছু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা আছে।”

ঢাকা/হাসান/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এখন থ ক আম দ র বল ছ ন ক ষমত করব ন আপন র গ করব

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন