তিন মাসের সুমাইয়ার পৃথিবীজুড়ে শূন্যতা
Published: 20th, February 2025 GMT
তিন মাসের সুমাইয়ার পৃথিবীজুড়ে শূন্যতা, একরাশ হাহাকার। মা-বাবা বেঁচে নেই তার। আদর-স্নেহ বুঝে ওঠার আগেই পৃথিবী ছাড়লেন তারা। বছর চারেকের বড় ভাই সোয়ায়েদও আগুনে দগ্ধ। ক্ষত নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করছে ছোট্ট শিশুটি।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ার বাসায় গ্যাসের চুলার আগুন হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে সারা বাসায়। আতঙ্কে প্রাণে বাঁচতে অন্যদের মতো ছোটাছুটি করছিল পোশাককর্মী সুমন মিয়ার পরিবারও। তিন মাসের সুমাইয়া তখনও ঘুমে। সুমন তাঁর দুই সন্তান নিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে যান। এই ঘটনায় ১১ জন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে তিনজন মারা যান। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন আটজন। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের সবার বাড়ি শরীয়তপুরে।
আগুনে সুমাইয়ার শরীরের ৭ শতাংশ ঝলসে গেছে। রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সে এখনও শঙ্কামুক্ত নয়।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমাইয়ার মা শারমিন মারা যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান বলেন, ৪২ শতাংশ পোড়া নিয়ে শারমিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর অবস্থা আগে থেকেই জটিল হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। বুধবার সকালেও অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
এর আগে গত রোববার ভোরে সুমাইয়ার চাচি শিউলি আক্তার এবং দুপুরে তার বাবা সুমন মারা যান।
এই হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে সুমাইয়ার। বার্ন ইনস্টিটিউটের পাঁচতলার ৫২০ নম্বর শয্যায় ভর্তি রয়েছে সে। ক্ষুধা পেলেই কাঁদছে শিশুটি। নিরুপায় স্বজন শিশুটির কান্না থামাতে সুমনের সহকর্মী রাশেদের স্ত্রী শারমিন সুলতানার বুকের দুধ দিচ্ছেন। শুধু সুমাইয়াকে দুধ খাওয়ানোর জন্য তার পাশের শয্যায় শুরু থেকেই আছেন তিনি।
শারমিন সুলতানা সমকালকে বলেন, আমার নিজেরও একটা আট মাসের সন্তান রয়েছে। সন্তানের কষ্ট আমি বুঝি। বুকের দুধের অভাবে শিশুটি কষ্ট পাবে– এটি মেনে নিতে পারছিলাম না। স্বামীর সহকর্মী দগ্ধ হওয়ার খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে এসেছি।
বার্ন ইনস্টিটিউটে এখনও আটজনের চিকিৎসা চলছে। তারা হলেন– জহুরা বেগম (৭০), মনির হোসেন (৪৫), সূর্য বানু (৫০), সোহেল মিয়া (৩৮), শামিম (১৫), মাহাদী (৭) ও সোয়ায়েদ (৪)।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ