শহীদ জোহার আদর্শ ধারণ করে আবু সাঈদের মৃত্যু আপ্লুত করেছে মেয়েকে
Published: 20th, February 2025 GMT
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর শুনে বিদেশের মাটিতে বসে শহীদ শামসুজ্জোহার মেয়ে সাবিনা জোহা খান (ডালিয়া) আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। মৃত্যুর প্রায় ছয় দশক পরও একজন ছাত্র তাঁর বাবার আদর্শকে এমনভাবে ধারণ করে আন্দোলনে মারা গেছেন, এটা তাঁকে আপ্লুত করেছিল। সে সময় দেশে ফিরতে না পারলেও আবু সাঈদের মা–বাবার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছিলেন তিনি।
১৮ ফেব্রুয়ারি বাবা ড.
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ বকুলের ‘দাবানল’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীতে ১৮ ফেব্রুয়ারি উপস্থিত ছিলেন সাবিনা জোহা খান। সেখানে প্রথম আলো কথা বলে তাঁর সঙ্গে।
শহীদ জোহাকে স্মরণ করে গত বছরের ১৫ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘স্যার! এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার, স্যার! আপনার সমসাময়িক সময়ে যাঁরা ছিলেন, সবাই তো মরে গেছেন, কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত। এ প্রজন্মে যাঁরা আছেন, আপনারাও প্রকৃতির নিয়মে একসময় মারা যাবেন। কিন্তু যত দিন বেঁচে আছেন, মেরুদণ্ড নিয়ে বাঁচুন। ন্যায্য দাবিকে সমর্থন জানান, রাস্তায় নামুন, শিক্ষার্থীদের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়ান। প্রকৃত সম্মান ও শ্রদ্ধা পাবেন। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না। আজন্ম বেঁচে থাকবেন শামসুজ্জোহা হয়ে। অন্তত একজন শামসুজ্জোহা হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের।’ এই স্ট্যাটাসের পরদিনই তিনি গুলিতে নিহত হন। আবু সাঈদের মৃত্যু শোকগ্রস্ত করে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সাবিনা জোহা খানকেও।
জোহার কন্যা সাবিনা জোহা বলেন, এই প্রজন্ম তাঁর বাবাকে দেখেনি, শুধু তাঁর আত্মত্যাগের ঘটনা শুনে, ইতিহাস পড়ে তাঁর বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছে। আবু সাঈদের মতো হয়তো আরও অনেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, তাঁদের কথা তিনি জানেন না। তবে বিষয়টি তাঁকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। তাঁর কথায়, ‘আবু সাঈদের বীরত্বপূর্ণ মৃত্যু আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনাকে আমি কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারছিলাম না। কোথাও যেন একটা যোগসূত্র আছে, যা আমার মনকে অস্থির করে রাখছে।’
সাবিনা জোহা খান বলতে থাকেন, ‘আমি আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসে আবু সাঈদকে সম্মানিত করে অনুভূতি প্রকাশ করেছিলাম। যা একান্ত, আমি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে চাইনি। আবু সাঈদের মতো এ রকম শত শত অনুপ্রেরণার ঘটনা থাকতে পারে। এটা ভেবে মনের মধ্যে আলোড়ন তুলেছিল। আমি জানতাম, বাবাকে মানুষ ভালোবাসেন। আদর্শ হিসেবে ধারণ করেন। কিন্তু এখনো মানুষ এমনভাবে বাবার আদর্শকে ধারণ করে, এটা বুঝতে পারিনি।’
কথায় কথায় সাবিনা জোহা বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁর মা তাঁদের নিয়ে আসতেন। ১০–১২ বছর পর্যন্ত প্রতি ১৮ ফেব্রুয়ারিতে এখানে এসেছেন। এরপর ঢাকায় চলে যাওয়ায় সেভাবে আর তাঁদের এখানে আসা হয়নি। তাঁর মা চাইতেন না তিনি জনসমক্ষে বেড়ে উঠুন। তাঁর মা শুধু বলতেন, যখন সময় হবে, নিজেই রাজশাহীতে যাবেন। এই শিকড় কেটে দেওয়ার মতো নয়।
বহুদিন ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসার কথা ভাবছিলেন জানিয়ে সাবিনা জোহা বলেন, ‘রাজশাহী আসার জন্য বহুদিন ধরেই ভাবছিলাম। কিন্তু বাচ্চাদের পড়াশোনা, নিজের চাকরি, জীবনের ব্যস্ততায় আর আসা হয়ে ওঠেনি। যখন আমার স্বামী মারা গেলেন, তখন উপলব্ধি করলাম যে আমার যদি কিছু একটা হয়ে যায়, তাহলে অনেক কিছু অপূর্ণ থেকে যাবে। আমার বাবার যে অবদান, তাঁর আদর্শকে এখনো যে মানুষ তাদের মনে ধারণ করে আছে, আমার সন্তানদের কাছে অজানাই থেকে যাবে। এটা তাদের জানা, বোঝা অনেক প্রয়োজন। অনুভব করা দরকার, ধারণ করা দরকার।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি ঘিরে উত্তেজনা এখন চূড়ান্তে। ২-১ ব্যবধানে সিরিজে ইংল্যান্ড এগিয়ে থাকলেও পঞ্চম ও শেষ টেস্টটি একটি পরিণতির লড়াই হিসেবে সমাসন্ন। তবে ঠিক এই সময়েই বড় দুঃসংবাদ এসে আঘাত হেনেছে ইংলিশ ড্রেসিংরুমে। ইনজুরিতে পড়ে সিরিজ নির্ধারণী ওভাল টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন অধিনায়ক বেন স্টোকস।
বুধবার (৩০ জুলাই) ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, ওভালে মাঠে নামা হচ্ছে না স্টোকসের। ম্যানচেস্টারে চতুর্থ টেস্টে দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তিনি। ব্যাটে-বলে সমান পারদর্শী স্টোকস ছিলেন দলের ভারসাম্য ধরে রাখার অন্যতম স্তম্ভ। তার অনুপস্থিতি তাই শুধু একজন খেলোয়াড়কে হারানো নয়, বরং একটি জয়ের প্রত্যয়ের বড় চ্যাপ্টারও হারানো।
এই ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব সামলাবেন ওলি পোপ। যিনি প্রথমবারের মতো সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে নেতৃত্ব দেবেন জাতীয় দলের।
আরো পড়ুন:
শেষ ম্যাচের আগে ভারতের শিবিরে ধাক্কা, বিশ্রামে বুমরাহ
ওভাল টেস্টের ইংল্যান্ড দল ঘোষণা, ওভারটনের প্রত্যাবর্তন
স্টোকস ছাড়াও ওভাল টেস্টে দেখা যাবে না জোফরা আর্চার, ব্রাইডন কার্স ও লিয়াম ডসনকে। চোট ও ফিটনেস ইস্যুর কারণে তারা বাদ পড়েছেন স্কোয়াড থেকে।
অবশ্য একাদশে ফিরেছেন দুই পরিচিত মুখ জশ টাঙ ও জেমি ওভারটন। বিশেষ নজর কেড়েছেন গাস অ্যাটকিনসন। যিনি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মে মাসে খেলার পর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ছিলেন মাঠের বাইরে। সারে কাউন্টির হয়ে ফের মাঠে ফিরে জায়গা পেয়েছেন জাতীয় দলে। ইংল্যান্ডের পেস বিভাগে তার উপস্থিতি বাড়াবে গতি ও ধার।
চলতি সিরিজে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছেন বেন স্টোকস। চার ম্যাচে তার ঝুলিতে ১৭ উইকেট। ম্যানচেস্টার টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার ও ব্যাটে সেঞ্চুরি করে একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়েছিলেন। লর্ডসেও দুই ইনিংস মিলিয়ে রান করেছেন ৭৭, নিয়েছেন আরও পাঁচ উইকেট।
তাই ইংলিশ শিবির শুধু একজন ব্যাটার বা একজন বোলার হারায়নি, তারা হারিয়েছে একজন পূর্ণাঙ্গ ম্যাচ উইনারকে। স্টোকসের মতো একজন অলরাউন্ডার যিনি প্রয়োজনের সময় ছায়ার মতো আক্রমণে নেতৃত্ব দেন এবং ব্যাট হাতে গড়েন ম্যাচের ভিত, তার অভাব যে দলকে নাড়া দেবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের সম্ভাব্য একাদশ:
জ্যাক ক্রাউলি, বেন ডাকেট, ওলি পোপ (অধিনায়ক), জো রুট, হ্যারি ব্রুক, জ্যাকব বেথেল, জেমি স্মিথ (উইকেটকিপার), ক্রিস ওকস, গাস অ্যাটকিনসন, জেমি ওভারটন ও জশ টাঙ।
ঢাকা/আমিনুল