বাবা-ফুফুর পর মায়ের মৃত্যু, ভাইসহ বার্ন ইউনিটের শয্যায় কাতরাচ্ছে ৩ মাসের সুরাইয়া
Published: 20th, February 2025 GMT
তিন মাসের ছোট্ট সুরাইয়া ও তার চার বছর বয়সী বড় ভাই সোয়াইদ অগ্নিদগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটের শয্যায় কাতরাচ্ছে। তারা জানেও না এরই মধ্যে তাদের জীবনে ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেছে। একই হাসপাতালের আরও তিনটি শয্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে তাদের বাবা ও ফুফুর পর মা–ও না ফেরার দেশে চলে গেছেন। এমন অবস্থায় ছোট্ট দুই ভাই–বোনের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন স্বজনেরা।
গত শুক্রবার রাতে সাভারের আশুলিয়ায় একটি আবাসিক ভবনে গ্যাস বিস্ফোরণে সোয়াইদ, সুরাইয়াসহ ১১ জন অগ্নিদগ্ধ হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে তাদের ফুফু শিউলি আক্তার (২৫), রোববার দুপুরে বাবা সুমন খান (৩০) ও বুধবার সন্ধ্যায় মা শারমিন আক্তারের (২৫) মৃত্যু হয়।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকার বাসিন্দা সুমন খান নদীভাঙনের শিকার হয়ে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় চলে যান। সেখানে একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী–সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। সেখানে তিনি গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করতেন। গত শুক্রবার তাঁদের আশুলিয়ার ওই বাড়িতে সুমনের বোন শিউলি আক্তারসহ কয়েকজন বেড়াতে যান। রাতে তাঁদের জন্য রান্না করা হচ্ছিল। মশার উপদ্রবের কারণে সন্ধ্যার খানিক আগেই বাসার সব জানালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে রান্নাঘরে আবার গ্যাসের চুলা জ্বালাতে গেলে বিকট শব্দ হয়। মুহূর্তে ঘরময় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে সবাই দগ্ধ হন। পরে তাঁদের আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকায় জাতীয় বার্ন ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
মেয়ের জামাই নড়িয়ার নশাসন এলাকায় জমি কিনেছিল, বাড়ি করে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে বসবাস করবে। সেই জমিতেই স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি সারা জীবনের জন্য চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে রইলআবদুল আলী সিকদার, শারমিনের বাবাবর্তমানে সেখানে শিশু সুরাইয়া, সোয়াইদসহ সাতজন চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আগুনে সোয়াইদের শরীরের ২৭ শতাংশ ও তিন মাসের সুরাইয়ার ৯ শতাংশ পুড়ে গেছে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সন্ধ্যায় শারমিনের মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে জানাজা শেষে তাঁকে বিকেলে নড়িয়ার নশাসন এলাকায় নিয়ে দাফন করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে শারমিনের বাবার বাড়ি জাজিরার পালের চর ইউনিয়নের খোরশেদ আকন কান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শারমিনের মৃত্যুর খবর শুনে আত্মীয়স্বজন বাড়িতে এসেছেন। তাঁর মা ও বোনেরা ঘরের বারান্দায় ও উঠানে বসে কান্না করছেন। অন্য স্বজনেরা তাঁর মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে গেছেন নড়িয়া উপজেলার নশাসন এলাকায়।
আরও পড়ুনআশুলিয়ায় গ্যাসের বিস্ফোরণে স্বামীর মৃত্যুর তিন দিন পর স্ত্রীও মারা গেলেন২১ ঘণ্টা আগেশারমিনের বোন সুমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শারমিন আর আমি পিঠাপিঠি বোন। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ওর সাথে ফোনে কথা হতো। ওই দিন কয়েক দফায় ফোন দিয়েছি কিন্তু ফোন ধরেনি। রাত দুইটার দিকে এক স্বজনের মাধ্যমে তাদের দগ্ধ হওয়ার খবর পাই। পরের দিন ঢাকায় হাসপাতালে ছুটে যাই। কিন্তু বোনের সাথে আর কথা বলতে পারিনি। সে কথা বলার অবস্থায়ই ছিল না। পাঁচ দিন বোনের সাথে হাসপাতালে থেকে তার নিথর দেহটি নিয়ে গ্রামে ফিরেছি।’
সুমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের অন্য দুই স্বজনের কাছে হাসপাতালে ওর দুই সন্তানকে রেখে এসেছি। জানি না এখন বোনের ওই দুই অবুঝ শিশুসন্তানের কী হবে।’
গত ঈদে শারমিন তাঁর স্বামী ও সন্তানকে গিয়ে বাবার বাড়িতে এসেছিলেন। সেই স্মৃতিচারণা করে শারমিনের মা রাশিদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন মাস আগে ও (শারমিন) কন্যাসন্তান জন্ম দেয়। মেয়েকে নিয়ে আগামী ঈদে আমাদের বাড়িতে আসার কথা ছিল। মেয়েটি আমার আসল কিন্তু নিথর দেহে। মেয়ে নেই, জামাই নেই। আমি এই কষ্ট কোথায় রাখব? ওদের ফুটফুটে দুটি ছোট্ট সন্তান হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, যা শয্য করার মতো না। আমরা দুশ্চিন্তায় পড়েছি ওদের কে দেখে রাখবে? কে ওদের বাবা-মায়ের অভাব পূরণ করবে।’
শারমিনের বাবা আবদুল আলী সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমে জামাতাকে, তার দুই দিনের মাথায় মেয়েকে কবরে শুইয়ে দিলাম। এই শোক আমি কীভাবে সইব। মেয়ের জামাই নড়িয়ার নশাসন এলাকায় জমি কিনেছিল, বাড়ি করে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে বসবাস করবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। সেই জমিতেই স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি সারা জীবনের জন্য চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে রইল।’
আরও পড়ুনআশুলিয়ায় গ্যাসের বিস্ফোরণে নারী–শিশুসহ দগ্ধ ১১ জন১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন অবস থ য় স বজন র র জন য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় অপু গ্রেপ্তার
রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির মামলায় এজাহারনামীয় আসামি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে ওয়ারী থেকে ডিবির ওয়ারী বিভাগের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছেন। তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
গত ১৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একটি চক্র রাজধানীর গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন জানে আলম অপু ওরফে কাজী গৌরব অপু এবং আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। এ সময় শাম্মী আহমেদ দেশের বাইরে থাকায় তার স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে জিম্মি করে ভয় দেখানো হয়।
চক্রটি বাসায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে প্রথম ধাপে ১০ লাখ টাকা আদায় করে নেয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা ভাগ পান অপু এবং বাকি ৫ লাখ পান রিয়াদ। চাঁদার দ্বিতীয় কিস্তি আনতে ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় আবারও গুলশানের ওই বাসায় গেলে চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, সাকদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং আমিনুল ইসলাম। তাদের সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বিভিন্ন পদে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পরপরই তাদেরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে, চাঁদাবাজির এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এজাহারনামীয় ছয় আসামি ও অজ্ঞাত ১০-১২ জন সমন্বয়ক পরিচয়ে ১৭ জুলাই সকালে আমার গুলশান-২ নম্বরের বাসায় আসে। যার মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেখায়। একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে ১০ লাখ টাকা দিই। পরে ১৯ জুলাই রাতে রিয়াদ ও অপু আমার বাসায় এসে ধাক্কাধাক্কি করে, যা আমি পুলিশকে ফোন করে জানাই। এ সময় অভিযুক্তরা সেখান থেকে সটকে পড়ে।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ২৬ জুলাই শনিবার বিকেলে রিয়াদের নেতৃত্বে আসামিরা আমার বাসার সামনে এসে আমাকে খুঁজতে থাকে। আমি বাসায় না থাকায় বাসার দারোয়ান আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। এ সময় আসামিরা তাদের দাবিকৃত আরো ৪০ লাখ টাকা না দিলে আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হবে বলে হুমকি দিতে থাকে।
ঢাকা/এমআর/রফিক