তিন মাসের ছোট্ট সুরাইয়া ও তার চার বছর বয়সী বড় ভাই সোয়াইদ অগ্নিদগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটের শয্যায় কাতরাচ্ছে। তারা জানেও না এরই মধ্যে তাদের জীবনে ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেছে। একই হাসপাতালের আরও তিনটি শয্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে তাদের বাবা ও ফুফুর পর মা–ও না ফেরার দেশে চলে গেছেন। এমন অবস্থায় ছোট্ট দুই ভাই–বোনের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন স্বজনেরা।

গত শুক্রবার রাতে সাভারের আশুলিয়ায় একটি আবাসিক ভবনে গ্যাস বিস্ফোরণে সোয়াইদ, সুরাইয়াসহ ১১ জন অগ্নিদগ্ধ হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে তাদের ফুফু শিউলি আক্তার (২৫), রোববার দুপুরে বাবা সুমন খান (৩০) ও বুধবার সন্ধ্যায় মা শারমিন আক্তারের (২৫) মৃত্যু হয়।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকার বাসিন্দা সুমন খান নদীভাঙনের শিকার হয়ে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় চলে যান। সেখানে একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী–সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। সেখানে তিনি গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করতেন। গত শুক্রবার তাঁদের আশুলিয়ার ওই বাড়িতে সুমনের বোন শিউলি আক্তারসহ কয়েকজন বেড়াতে যান। রাতে তাঁদের জন্য রান্না করা হচ্ছিল। মশার উপদ্রবের কারণে সন্ধ্যার খানিক আগেই বাসার সব জানালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে রান্নাঘরে আবার গ্যাসের চুলা জ্বালাতে গেলে বিকট শব্দ হয়। মুহূর্তে ঘরময় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে সবাই দগ্ধ হন। পরে তাঁদের আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকায় জাতীয় বার্ন ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

মেয়ের জামাই নড়িয়ার নশাসন এলাকায় জমি কিনেছিল, বাড়ি করে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে বসবাস করবে। সেই জমিতেই স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি সারা জীবনের জন্য চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে রইলআবদুল আলী সিকদার, শারমিনের বাবা

বর্তমানে সেখানে শিশু সুরাইয়া, সোয়াইদসহ সাতজন চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আগুনে সোয়াইদের শরীরের ২৭ শতাংশ ও তিন মাসের সুরাইয়ার ৯ শতাংশ পুড়ে গেছে।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সন্ধ্যায় শারমিনের মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে জানাজা শেষে তাঁকে বিকেলে নড়িয়ার নশাসন এলাকায় নিয়ে দাফন করা হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে শারমিনের বাবার বাড়ি জাজিরার পালের চর ইউনিয়নের খোরশেদ আকন কান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শারমিনের মৃত্যুর খবর শুনে আত্মীয়স্বজন বাড়িতে এসেছেন। তাঁর মা ও বোনেরা ঘরের বারান্দায় ও উঠানে বসে কান্না করছেন। অন্য স্বজনেরা তাঁর মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে গেছেন নড়িয়া উপজেলার নশাসন এলাকায়।

আরও পড়ুনআশুলিয়ায় গ্যাসের বিস্ফোরণে স্বামীর মৃত্যুর তিন দিন পর স্ত্রীও মারা গেলেন২১ ঘণ্টা আগে

শারমিনের বোন সুমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শারমিন আর আমি পিঠাপিঠি বোন। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ওর সাথে ফোনে কথা হতো। ওই দিন কয়েক দফায় ফোন দিয়েছি কিন্তু ফোন ধরেনি। রাত দুইটার দিকে এক স্বজনের মাধ্যমে তাদের দগ্ধ হওয়ার খবর পাই। পরের দিন ঢাকায় হাসপাতালে ছুটে যাই। কিন্তু বোনের সাথে আর কথা বলতে পারিনি। সে কথা বলার অবস্থায়ই ছিল না। পাঁচ দিন বোনের সাথে হাসপাতালে থেকে তার নিথর দেহটি নিয়ে গ্রামে ফিরেছি।’

সুমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের অন্য দুই স্বজনের কাছে হাসপাতালে ওর দুই সন্তানকে রেখে এসেছি। জানি না এখন বোনের ওই দুই অবুঝ শিশুসন্তানের কী হবে।’

গত ঈদে শারমিন তাঁর স্বামী ও সন্তানকে গিয়ে বাবার বাড়িতে এসেছিলেন। সেই স্মৃতিচারণা করে শারমিনের মা রাশিদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন মাস আগে ও (শারমিন) কন্যাসন্তান জন্ম দেয়। মেয়েকে নিয়ে আগামী ঈদে আমাদের বাড়িতে আসার কথা ছিল। মেয়েটি আমার আসল কিন্তু নিথর দেহে। মেয়ে নেই, জামাই নেই। আমি এই কষ্ট কোথায় রাখব? ওদের ফুটফুটে দুটি ছোট্ট সন্তান হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, যা শয্য করার মতো না। আমরা দুশ্চিন্তায় পড়েছি ওদের কে দেখে রাখবে? কে ওদের বাবা-মায়ের অভাব পূরণ করবে।’

শারমিনের বাবা আবদুল আলী সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমে জামাতাকে, তার দুই দিনের মাথায় মেয়েকে কবরে শুইয়ে দিলাম। এই শোক আমি কীভাবে সইব। মেয়ের জামাই নড়িয়ার নশাসন এলাকায় জমি কিনেছিল, বাড়ি করে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে বসবাস করবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। সেই জমিতেই স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি সারা জীবনের জন্য চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে রইল।’

আরও পড়ুনআশুলিয়ায় গ্যাসের বিস্ফোরণে নারী–শিশুসহ দগ্ধ ১১ জন১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন অবস থ য় স বজন র র জন য প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

নীল সমুদ্রে দক্ষিণ আফ্রিকার নীল বেদনা, ভারত বিশ্ব চ‌্যাম্পিয়ন

অনুমিত চিত্রনাট্যই যেন অনুসরণ করল মুম্বাইয়ের ফাইনাল ম্যাচ। ভারতের জার্সি গায়ে দর্শকে ঠাসা গ্যালারি রূপ নিল নীল সমুদ্রে। ২২ গজে আরও একবার ভারতের আধিপত‌্য, শাসন। যেন শিরোপার পায়চারি অনেক আগের থেকেই। 

ব‌্যাটিংয়ে পর্বত ছুঁই-ছুঁই রান। এরপর স্পিনে ফুল ফোটালেন স্পিনাররা। দক্ষিণ আফ্রিকা লড়াই করল সাধ‌্যের সবটুকু দিয়ে। ব্যাটে-বলে সহজে হাল ছাড়ল না তারাও। হৃদয় জিতলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাত্তাই পেল না। ভারতের শক্তি-সামর্থ‌্যের গভীরতার কাছে হার মানতেই হলো প্রোটিয়া নারীদের।

আরো পড়ুন:

৪১১ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৯ রানে হারল জিম্বাবুয়ে

কেন বিপিএল থেকে বাদ পড়ল চিটাগং কিংস

মুম্বাইয়ের নাভি স্টেডিয়ামের নীল সমুদ্রে সব আতশবাজি আজ রাতে ফুটল ভারতের বিশ্বকাপ  উদ্‌যাপনে। প্রথমবার ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডেতে বিশ্ব চ‌্যাম্পিয়ন। ৫২ রানের বিশাল জয় বুঝিয়ে দেয় হারমানপ্রীত কৌর, জেমিমা রদ্রিগেজ, দীপ্তি শর্মা কিংবা শেফালি বার্মা, স্মৃতি মান্ধানা, রিচা ঘোষরা ২২ গজকে কতটা আপন করে নিয়েছেন। শিরোপা জয়ের মঞ্চে ছাড় দেননি একটুও। ২০০৫ ও ২০১৭ বিশ্বকাপে যে ভুলগুলো হয়েছিল...সেগুলো আজ ফুল হয়ে ঝরল। 

বৃষ্টি বাঁধায় বিঘ্ন ম‌্যাচে আগে ব‌্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ২৯৮ রানের স্কোর পায় ভারত। ৪৫.৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২৪৬ রান করতে পারে প্রোটিয়া নারীরা। নাডিন ডি ক্লার্ক শেষ ব‌্যাটসম‌্যান হিসেবে যখন আউট হলেন, স্টেডিয়ামের প্রায় ষাট হাজার ভারতীয় সমর্থকদের মুখে একটাই স্লোগান, চাক দে ইন্ডিয়া।

ওই জনসমুদ্রের স্লোগান, ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’। 

বিস্তারিত আসছে …

 

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ