শিক্ষার উন্নয়নে বেসরকারি অনেক কার্যক্রম বা উদ্যোগের অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীনতার পর থেকে বেসরকারি অনেক উন্নয়ন সংস্থা শিক্ষা খাতে বিশেষ নজর দিয়েছে, এখনো তাদের অনেকের কর্মসূচি চলমান। বড় বড় সংস্থার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা ফাউন্ডেশনের ছোট ছোট কিছু কার্যক্রম এতটাই প্রভাব বিস্তারকারী যে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসে। এমনটিই দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি স্কুলের ক্ষেত্রে।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সুয়াবিল ইউনিয়নের বারোমাসিয়া গ্রামে অবস্থিত তৌহিদুল আনোয়ার হাইস্কুল। আহমেদ শামসুল আনোয়ার ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে কিছু শিক্ষানুরাগী মানুষ ২০২০ সালে এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। অল্প সময়ে বারোমাসিয়া গ্রামসহ আশপাশের পাঁচটি গ্রামের দৃশ্যপট বদলে গেছে।

কারণ, প্রত্যন্ত এ জনপদে এবং এর আশপাশে কোনো উচ্চবিদ্যালয় না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষার পরই সেখানকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষাজীবন থমকে যেত। এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেই সংকট কেটে গেছে এখন। পড়তে কোনো টাকা লাগে না এখানে, বই-খাতা, জুতা ও পোশাকের পাশাপাশি দূরের শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে বাইসাইকেলের। এর ফলে স্কুলের শিক্ষার্থীসংখ্যা বিপুল এবং পাসের হারও শতভাগ।

জনপদটি দারিদ্র্যপীড়িত এবং সেখানকার চা–বাগানের শ্রমিকদের সন্তানেরা শিক্ষাদীক্ষায় বেশি দূর যেতেও পারে না। তাদের জন্য সত্যিকার অর্থে শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছে বিদ্যালয়টি। এখানকার পাঠদানব্যবস্থা আধুনিক ও ভিন্ন ধরনের। খেলাধুলা, সাহিত্য–সংস্কৃতিচর্চা, শারীরিক শিক্ষা ও কারাতে প্রশিক্ষণ এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শিতাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। দেড় হাজার একরের বেশি জায়গায় সবুজ, নিরিবিলি ও বিশাল বিদ্যালয়টিতে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি রয়েছে কম্পিউটার, সংগীত, সাহিত্য, ক্রীড়াসহ বিষয়ভিত্তিক ২২ জন শিক্ষক।

৩০টি কম্পিউটার-সংবলিত সুবিশাল ল্যাব, সাড়ে ৩ হাজার বইয়ের সমৃদ্ধ পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার, মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ, সততা স্টোর, মুক্তিযুদ্ধ কর্নারসহ নানা ব্যতিক্রমী আয়োজন এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেশ এগিয়ে রেখেছে। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় জাতীয় পরিসরেও সাফল্য দেখিয়ে যাচ্ছে সেখানকার শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়টির ইতিবাচক প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে জনপদজুড়ে। শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে পাড়ায় পাড়ায় আছে মাদক, মুঠোফোনে আসক্তি ও বাল্যবিবাহবিরোধী কার্যক্রম। এসব বিষয়ে নিয়মিত সভাও হয় সেখানে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আহমেদ শামসুল আনোয়ার ফাউন্ডেশনকে অভিবাদন জানাই। সেই সঙ্গে স্কুল পরিচালনা কমিটি এবং শিক্ষক–কর্মকর্তাদেরও ধন্যবাদ জানাতে হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, ট্রাস্টের অধীন পরিচালিত স্কুলটি পাঠদানের অনুমতি পেলেও এখনো স্বীকৃতি পায়নি। আশা করি, সে বিষয়টি দ্রুত নিশ্চিত করা হবে। প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, এটিই প্রত্যাশা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।

ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।

আরো পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।

যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।

লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।

বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ