ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধের দাবি ব্যবসায়ীদের
Published: 22nd, February 2025 GMT
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছে ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপ। আজ শনিবার দুপুরে সিলেটের জিন্দাবাজারে একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এই দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানান আমদানিকারক গ্রুপের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি মো.
সংবাদ সম্মেলনে আমদানিকারক গ্রুপের নেতারা বলেন, প্রকল্পের অধিভুক্ত এলাকায় আগে কয়েক শ ব্যবসায়ীর কার্যালয় ও পাথর ডাম্পিং এলাকা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে হঠাৎ অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের কার্যালয় ও ডাম্পিং স্টেশন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ডাম্পিংয়ে রাখা প্রায় ৫-৬ কোটি টাকার পাথর নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
আমদানি গ্রুপের সভাপতি সাহাব উদ্দিন বলেন, এই প্রকল্পে বড় অঙ্কের দুর্নীতি হয়েছে। এই দুর্নীতির স্বার্থেই স্থলবন্দরের নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সহজভাবে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন নেই। তাই স্থলবন্দর নির্মাণকাজ বন্ধ করা দরকার। তা না হলে সাধারণ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ আব্দুস সালাম, সদস্য নোমান আহমদ, ফখরুল হক প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র প রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনার কয়রা: জোয়ার ঠেকাতে বাঁধের ওপর ‘দেয়াল’ দিচ্ছে এলাকার মানুষ
খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের রত্নাঘেরি গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শাকবাড়িয়া নদী। ওপারে দাঁড়িয়ে আছে সবুজে মোড়া সুন্দরবন। নদীর ঢেউ আর জোয়ারের গর্জনে আতঙ্কে থাকেন নদীপারের মানুষ। এলাকার বাসিন্দাদের এখন একমাত্র ভরসা একফালি মাটির বাঁধ। আর সেই বাঁধের ওপর হাতে গড়া নতুন দেয়াল।
সম্প্রতি এক সকালে কাদামাখা বাঁধের ওপরের সরু পথ ধরে বাজারের ব্যাগ হাতে হেঁটে যাচ্ছিলেন অরবিন্দ কুমার। এক হাতে শার্ট গুটিয়ে কাদায় সাবধানে পা ফেলছিলেন। কাছে গিয়ে কথা বলতেই তিনি হেসে বললেন, ‘ভাই, নদী এখন আর আগের মতো শান্ত নেই। জোয়ারের পানি বাঁধ ছাপায়ে গ্রামে ঢুকতি চায়। একবার যদি ঢুকে পড়ে, ঘরবাড়ি সব ভাইসে যাবে। তাই আর কারও মুখের দিকি না চায়ি এই বাঁধের ওপর আমরা নিজেরাই দেয়াল তুলিছি।’
জোয়ারের পানি থেকে বাঁচতে এই দেয়াল রত্নাঘেরির মানুষেরা গড়েছেন। প্রায় এক কিলোমিটার বাঁধের ওপর নদীর চরের মাটি কেটে, ঝুড়ি আর কোদাল হাতে নিয়ে দেয়াল তুলেছেন গ্রামের মানুষ। শাকবাড়িয়া নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে পাথরখালী মিলনী যুব সংঘের সভাপতি অভিজিৎ মহলদার জানান, সেই দেয়াল তৈরির কথা।
অভিজিৎ বলেন, ‘এই জায়গাটা খুব নিচু। জোয়ার একটু বাড়লেই পানি বাঁধ ছাপিয়ে ঢুকে পড়ে। তাই সম্প্রতি দুই শতাধিক যুবক আর গ্রামের নারী-পুরুষ মিলে আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি কেটেছি, বস্তা টেনেছি, বাঁধের ওপর দেয়াল তুলেছি। আমাদের গ্রামে বেশির ভাগ মানুষ দিনমজুর। একদিন কাজ না করলে চুলায় আগুন জ্বলে না। তবুও সেদিন সবাই রোজগার ফেলে কোদাল হাতে নিয়েছে। কেউ মাটি কেটেছে, কেউ বস্তায় ভরেছে, কেউ দেয়ালে বসিয়েছে। কারণ আমরা জানি, একবার বাঁধ ভাঙলে কেমন কষ্ট হয়।’
রত্নাঘেরির এই দৃশ্য আসলে কয়রা উপজেলার প্রতিচ্ছবি। সরেজমিনে কয়রার মহেশ্বরীপুর, নয়ানি, বাবুরাবাদ, চৌকুনি, তেঁতুলতলার চর, মঠবাড়ি, হায়াতখালী যেখানেই যাওয়া যায়, দেখা যায় বাঁধের ওপর বানানো নতুন মাটির দেয়াল। ষাটের দশকে বানানো বাঁধগুলো এখন আর জোয়ারের পানি সামলাতে পারে না। নদীর বুক ভরাট হয়ে গেছে পলিতে, জেগেছে চর। বাঁধ উপচে পানি চলে আসে গ্রামে।
মহেশ্বরীপুরের অনুপম কুমার বলেন, ১০ বছর আগে এই নদীতে জোয়ারের সময় ৭০-৮০ হাত পানি থাকত। এখন পলি পড়ে থাকে ২৫-৩০ হাত। নদীর তলা যত ভরে, ততই জোয়ারে পানি উঁচু হয়। বাঁধ উপচে পানি ঢোকে। তাই নিজেরাই মাটি তুলে দেয়াল বানিয়েছেন।
উত্তর বেদকাশীর শাকবাড়িয়া নদীর ধারে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম জানান, ‘প্রতি জোয়ারে গাঙের পানি এমন ওঠে, বুক ধড়ফড় করে। আগে ভরা জোয়ারে বাঁধের অর্ধেক পর্যন্ত পানি উঠত, এখন কানায় কানায় উঠে যায়। তাই আমরা দেয়াল তুলছি, না হলে গ্রাম তলিয়ে যেত।’
কয়রার মহেশ্বরীপুর, নয়ানি, বাবুরাবাদ, চৌকুনি, তেঁতুলতলার চর, মঠবাড়ি, হায়াতখালী এলাকায় বাঁধের ওপর মাটির দেয়াল বানানো হয়েছে