পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে পৈতৃক ঘরবাড়ি বিক্রি করে ইতালি যেতে ১৫ লাখ টাকা দালালের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার রাসেল মিয়া। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে দেশও ছাড়েন। দালালরা তাঁকে নিয়ে যায় লিবিয়া। কিন্তু সেখানে গিয়েই স্থানীয় মানব পাচার চক্রের হাতে বন্দি হন রাসেল। জিম্মি করে মুক্তিপণের জন্য রাসেলের ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। ফলে দেশ থেকে দুই দফায় চক্রটির কাছে আরও অন্তত ৩০ লাখ টাকা পাঠায় রাসেলের পরিবার। কিন্তু আরও ১০ লাখ টাকার দাবিতে রাসেলের ওপর নির্যাতন অব্যাহত রেখেছিল চক্রটি। কিন্তু সেই টাকা দিতে না পারায় ২১ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ায় দালালরা বিষাক্ত ইনজেকশন প্রয়োগ করে রাসেলকে হত্যা করে। গতকাল শনিবার এক প্রবাসীর মাধ্যমে রাসেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারে পরিবার।  
রাসেল নাসিরনগর উপজেলার ধরমণ্ডল ইউনিয়নের ধরমণ্ডল গ্রামের লাউস মিয়ার ছেলে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে রাসেল সবার বড়। 

ধরমণ্ডল গ্রামের স্থানীয়রা জানান, ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ইতালি পাড়ি জমাতে রাসেল পৈতৃক ভিটা বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা তুলে দেন একই গ্রামের দালাল লিলু মিয়ার হাতে। কথা ছিল, লিবিয়া থেকে রাসেলকে ইতালি পাঠানো হবে। কিন্তু বিদেশের মাটিতে পৌঁছে তাঁর কপালে জোটে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। লিবিয়া নিয়ে লিলু মিয়ার লোকজন ১০ লাখ টাকায় দেশটির মানব পাচার চক্রের কাছে রাসেলকে বিক্রি করে দেয়। এর পরই শুরু হয় দুঃস্বপ্নের অধ্যায়। মানব পাচার চক্র রাসেলকে নির্যাতন করে একাধিকবার ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় ৩০ লাখ টাকা। সর্বশেষ গত সপ্তাহে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করে চক্রটি। পরিবারের দাবি, টাকা না দেওয়ায় গত শুক্রবার বিষাক্ত ইনজেকশন প্রয়োগ করে রাসেলকে হত্যা করা হয়। 

গতকাল ধরমণ্ডল গ্রামে রাসেলের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম। কাঁদতে কাঁদতে রাসেলের মা আউলিয়া বেগম বলেন, ‘আমার পুতরে তোমরা আইন্যা দেও। কই যাইলে আমার পুতের খোঁজ পামু। আমার পুত আমারে ফোন দিয়া কইছে, আম্মা আমারে মাফ করছোনি? আম্মা আমি আর আধা ঘণ্টা বাঁচুম। আমারে শরীরে কিতা য্যান দিছে গো। আমি মইরা যাইতেছি।’ এভাবে ফোনের অপর পাশ থেকে হঠাৎ কথা আসা বন্ধ হয়ে যায়। ছেলের মৃত্যুর বর্ণনা দিতে দিতে একসময় জ্ঞান হারান আউলিয়া বেগম।
নিহতের বোন ফাহিমা বেগম বলেন, আমার ভাই আমাকে সব সময় ফোন করত। কিছুদিন পরপর দালালরা ভিডিও কলে ভাইকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে দেখাত আর টাকা চাইত। ভাইকে বাঁচানোর জন্য আমরা সব চেষ্টা করেছি। কিন্তু দালাল আমার ভাইকে বাঁচতে দেয়নি। টাকা নেওয়ার পরও কেন আমার ভাইকে ওরা হত্যা করল? আমি আমার ভাইয়ের হত্যায় জড়িত মানব পাচারকারী লিলু মিয়ার ফাঁসি চাই। 
রাসেলের বাবা আউয়াল মিয়া বলেন, ‘আমার শেষ সম্বল বসতভিটা ও ফসলি জমি বিক্রি কইরা ৫০ লাখ টাকা দিছি। দালালরা আরও টাকা চায়। কিন্তু দিতে না পারায় রাসেলরে হত্যা করছে দালাল লিলু মিয়া ও মাফিয়া চক্র।’ 

এদিকে রাসেলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই গতকাল ধরমণ্ডল গ্রামে দালাল লিলু মিয়ার বাড়িতে হামলা করেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এ সময় বিক্ষুব্ধরা লিলু মিয়ার বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। তবে বাড়িতে সে সময় লিলু মিয়ার স্বজন কেউ ছিলেন না। বাড়িটি থেকে লিবিয়ায় পাঠানোর জন্য আরও দেড় শতাধিক মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও ছবি পাওয়া যায়। 
রাসেলের মৃত্যুর বিষয়ে কথা বলতে দালাল লিলু মিয়ার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। লিলু মিয়ার ব্যবহৃত ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। 
লিবিয়াফেরত ধরমণ্ডল গ্রামের ভুক্তভোগী মাসুক মিয়া ও মমিন মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামে বেশ কয়েকজন মানব পাচারকারী আছে। এর মধ্যে লিলু মিয়া, শামীম ও শাফি আলম অন্যতম। ওরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ২০০ লোককে একসঙ্গে ইতালি পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে একটি মরুভূমিতে আটকে রাখে। আমাদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা নিয়ে লিবিয়ার মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। আমরা চোখের সামনে মানুষকে টাকার জন্য পিটিয়ে হত্যার করতে দেখেছি। আমরা কীভাবে বেঁচে ফিরেছি, আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।
ধরমণ্ডল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম মানব পাচারে জড়িত লিলু মিয়াসহ অন্যদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। 
নাসিরনগর থানা ওসি খায়রুল আলম বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইউএনও শাহীনা নাসরিন বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যারা মানব পাচারে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র র আম র ভ ই র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রদলের দেওয়া বিবৃতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি: ডুজা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রদলের কর্মসূচি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সংগঠনটির দেওয়া বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক যৌথ বিবৃতিতে ডুজার সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি ও সাধারণ সম্পাদক মাহাদী হাসান ছাত্রদলের এমন বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিভিন্ন মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সরিয়ে নেওয়া, বিবৃতিতে সংবাদকর্মীদের নিয়ে আপত্তিকর শব্দচয়নের মতো আচরণকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে দাবি করেছে ডুজা।

আরো পড়ুন:

ঢাবিতে পাণ্ডুলিপিবিষয়ক কর্মশালা শুরু

ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে আইডিইএ পরিচালকের সাক্ষাৎ

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রদলের কর্মসূচি নিয়ে ‌‘আওয়ামী এমপিকে পুনর্বাসন/ভাগ বাটোয়ারা দ্বন্দ্বে জাবিতে ভ্যাকসিন কর্মসূচি স্থগিত’ শিরোনামে জাগোনিউজ২৪.কম-এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদকে ঘিরে একটি বিবৃতি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। যেখানে স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ কিছু শব্দচয়ন করে সংগঠনটি।

বিবৃতিতে ডুজা নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্প্রতি সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা মেনে নিউজ করার পরেও দু’একটি গণমাধ্যমের উপর ছাত্রদলের প্রভাব খাটিয়ে সংবাদ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। গত ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বিবৃতিতে আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টরা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। কেউ নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত মনে করলে নিয়ম অনুযায়ী প্রতিকার চাইবেন। কিন্তু ছাত্রদলের এ ধরনের আচরণ আমাদের সে আকাঙ্ক্ষাকে আশাহত করেছে।

ডুজা নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতিবেদন প্রকাশের পর জাগোনিউজ২৪.কম-এর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সৈকত ইসলামকে ‘সময়ের আলো’র স্টাফ রিপোর্টার সাব্বির আহমেদ নামে একজন ফোন দিয়ে চাপ প্রয়োগেরও নিন্দা জানাই।

নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম কর্তৃক সাব্বির আহমেদের অপেশাদার ও অনৈতিক আচরণের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাহাঙ্গীরনগরে পিটুনিতে নিহত সেই ছাত্রলীগ নেতাকেও ‘সাময়িক বহিষ্কার’ করেছে প্রশাসন
  • সিলেটে টিলা কাটার অভিযোগে বিএনপি নেতা, ইউপি সদস্যসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা
  • জুলাই হামলাকারীদের শাস্তি চেয়ে জাবি ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’
  • ছাত্রদলের দেওয়া বিবৃতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি: ডুজা
  • কয়েকটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর আবার চালুর উদ্যোগ
  • আবার চালু হচ্ছে পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর