‘ফসলি জমিতে পাশাপাশি দুটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। আমগাছে মুকুল এলেও ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে আম থাকে না। বাধ্য হয়ে গাছ কেটে অন্য ফসল আবাদ করছি। সে গাছের গুঁড়িও তারা কিনে ভাটায় পুড়িয়েছেন। অনেক ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।’ কথাগুলো চারঘাটের ঝিকরা এলাকার কৃষক আশরাফুল ইসলামের।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা এবং কৃষিজমিসহ পরিবেশের ক্ষতি হয়– এমন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় এভাবে অবৈধভাবে পোড়ানো হচ্ছে ইট। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে এ কার্যক্রম চালাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। কৃষিজমির মাটি কেটে এনে তৈরি হচ্ছে ইট। পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
অগ্রিম টাকা দাদন দিয়ে শিশুশ্রম করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর দায়সারা পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগী ও স্থানীয় লোকজনের। জরিমানা করার পরদিনই ফের ভাটা চালু করেন পুঠিয়া উপজেলার এএসবি ব্রিকসের মালিক মো.

ডলার। তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলেই আবার চালু করেছেন ভাটা। অন্যগুলো যেভাবে চলছে, তিনিও সেভাবে চালাচ্ছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৯ উপজেলায় ১৫০টি ইটভাটা রয়েছে। নিবন্ধন রয়েছে ৫০টির। চারঘাটে ১০টির মধ্যে একটি এবং পুঠিয়ার ১৭টির মধ্যে চারটির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে। ২২টি চলছে অবৈধভাবে। চারঘাটের সুপার ব্রিকস নামে যে ভাটার ছাড়পত্র রয়েছে, সেটিও গড়ে উঠেছে ফসলি জমি এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকায়।
মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা ক্ষুদ্র কৃষকদের অধিক টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতারাতি ফসলি জমির মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে বলে জানান পুঠিয়ার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার কৃষক মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিবছর ফসলি জমির পরিমাণ কমছে। জলাবদ্ধতায় ফসল উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। অভিযোগ দিলেও ইটভাটা বন্ধ হয় না।
চারঘাট ও পুঠিয়ার কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে জানা যায়, অনুমোদন না থাকলেও ভাটায় উৎসবের মতো ইট তৈরির কাজ করছেন প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিকরা। রাতে অবৈধভাবে কৃষকের জমির মাটি কেটে ভাটাগুলোয় পাহাড়সমান উঁচু করে রাখা হয়েছে। বছরের শুরুতে চারঘাটের এমজেডবি, একতা ও এমঅ্যান্ডএন ব্রিকস এবং পুঠিয়ার এএসবি ও মডার্ন ব্রিকসে অভিযান চালিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর জরিমানা আদায় করে। এর পরও তারা ইট তৈরির কাজ শুরু করেছে।
ইটভাটায় কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও বেশি দামের অজুহাতে কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় ইটভাটায় একবারে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ ইট পোড়াতে ২২-২৫ দিন সময় লাগে। এ সময় অন্তত ১১ হাজার মণ জ্বালানির প্রয়োজন হয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে এক মৌসুমে পাঁচ-ছয়বারে ৪৫-৫০ লাখ ইট পোড়ানো সম্ভব। এ জন্য ৬৫ থেকে ৬৭ হাজার মণ (২ হাজার ৭০০ টন) জ্বালানি কাঠ পোড়াতে হয়।
ফসলি জমিতে ভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও এগুলো পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান। এতে এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকারী ফসল আমসহ সব ধরনের কৃষি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কৃষিজমির টপ সয়েল (উপরিভাগের মাটি) ইটভাটায় যাওয়ায় জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইটভাটা মালিকের ভাষ্য, বছরের শুরুতে ভাটা মালিকদের মাঝে ভীতি তৈরি করতে পরিবেশ অধিদপ্তর দুই-একটিতে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে। এর পর প্রত্যেক মালিক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেন। এখন ইটভাটা চালাতে সমস্যা নেই তাদের।
উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি একরামুল হক টিপু বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দেওয়া বন্ধ রাখায় ভাটাগুলো ছাড়পত্র পাচ্ছে না। কিন্তু সব নিয়ম মেনে চলে। অধিকাংশই কয়লায় চলছে। কিছু ভাটায় কাঠ পোড়ানো হয় স্বীকার করে তিনি বলেন, সমিতির পক্ষ থেকে তাদের নিষেধ করা হয়েছে।
চারঘাট ও পুঠিয়ার অধিকাংশ ইটভাটা স্কুল-কলেজ, জনবসতি কিংবা ফসলি জমিতে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) চারঘাট উপজেলা সভাপতি সাইফুল ইসলামের। তিনি বলেন, যেগুলোর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, সেগুলোও নিয়ম অনুযায়ী তা পায় না। এসব ভাটায় শিশুশ্রম হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালালেও লোকদেখানো জরিমানা ছাড়া ফলাফল শূন্য।
রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, অবৈধ ইটভাটায় একবার অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। ফের অভিযান চালানো হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইট ভ ট র ছ ড়পত র ইটভ ট য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ 

রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।

জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ 

এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ