ঢাকায় বিনা মূল্যে চিকিৎসা, ওষুধ দেবে জিপি-ক্লিনিক
Published: 23rd, February 2025 GMT
রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য ১০০টির বেশি ‘জিপি-ক্লিনিক’ খোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব ক্লিনিক থেকে রোগীরা বিনা মূল্যে রোগ পরীক্ষা করাতে পারবেন, ওষুধও পাবেন। সরকারি কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হলে আগে যেতে হবে এসব ক্লিনিকে। সেখান থেকেই চিকিৎসকেরা প্রয়োজন বোধে রোগীকে হাসপাতালে পাঠাবেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধি এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জিপি-ক্লিনিকের চালুর উদ্যোগের বিষয়টি জানা গেছে। জিপি-ক্লিনিক চালুর মাধ্যমে সরকার দেশে রেফারেল পদ্ধতি চালু করতে চায়।
সরকার রাজধানীতে ১০০টির বেশি জিপি-ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। থাকবে বিনা মূল্যে রোগ পরীক্ষা ও ওষুধের ব্যবস্থা।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, রেফারেল পদ্ধতি চালু করলে সেবা দেওয়া বা নেওয়ার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আসবে, সেবার মান উন্নত হবে। রেফারেন্স বা চিকিৎসকের সুপারিশের ভিত্তিতে হাসপাতালে রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা দেওয়াকে রেফারেল পদ্ধতি বলা হচ্ছে। এ ব্যবস্থায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে সরকারি হাসপাতালে রোগীদের ভিড় করতে হবে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শহর এলাকায়, বিশেষ করে ঢাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, জিপি-ক্লিনিক চালু করা ও রেফারেল পদ্ধতি প্রবর্তন করার বিষয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি ধারণাপত্রের খসড়াও তৈরি হয়েছে।
বিশ্বের অনেক দেশে ‘জিপি’ বা জেনারেল প্র্যাকটিশনার ব্যবস্থা চালু আছে। জেনারেল প্র্যাকটিশনাররা হন সরকার স্বীকৃত ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিবন্ধিত চিকিৎসক। তাঁরা নির্দিষ্ট একটি এলাকার মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। যে চিকিৎসা তিনি দিতে পারেন না, তার জন্য রোগীকে তিনি উন্নততর হাসপাতালে পাঠান বা ‘রেফার’ করেন।
বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার সুবিন্যস্ত কাঠামো আছে। সে কাঠামো হলো কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। যদিও সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে।
শহরে এ রকম স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নেই। ঢাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার স্থায়ী কাঠামোর অভাব পূরণ করবে জিপি-ক্লিনিক।
বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো.
কোন সেবা দেবে তারা
ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে কম পক্ষে একটি জিপি-ক্লিনিক স্থাপন করার কথা ধারণাপত্রে বলা হয়েছে। মানুষের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ক্লিনিকের সংখ্যা বাড়তে পারে।
জিপি-ক্লিনিক থেকে পাঁচ ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। এক. প্রতিরোধবিষয়ক সেবা। এর মধ্যে থাকবে টিকাদান, রোগ শনাক্তকরণ (স্ক্রিনিং) কর্মসূচি, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও স্বাস্থ্যশিবির আয়োজন। দুই. মৌলিক নিরাময় সেবা। তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ ব্যবস্থাপনা, মাতৃস্বাস্থ্যসেবা, শিশুস্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবার পরিকল্পনা সেবা। তিন. মৌলিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ক্লিনিকে এলে রোগীর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা, নমুনা সংগ্রহ ও উন্নততর পরীক্ষার জন্য নমুনা রেফার করা। চার. মৌলিক ওষুধ সেবা। রোগীকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া ও কাউন্সেলিং করা। পাঁচ. রেফারেল সেবা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফার করা, হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা, ফলোআপ আপ করা ও সেবা অব্যাহত রাখা।
ওঁরা ১১ জন
ভাবা হচ্ছে, প্রতিটি জিপি-ক্লিনিক হবে একেকটি ছোট, কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতালের মতো। প্রতিটি ক্লিনিকের জনবল হবে ১১ জন। তাঁদের মধ্যে চিকিৎসক থাকবেন চারজন। দুজন নারী ও দুজন পুরুষ। দুজন নার্সের সঙ্গে থাকবেন একজন বা দুজন মিডওয়াইফ (ধাত্রী)। ওষুধবিদ, প্যারামেডিক, ল্যাব টেকনিশিয়ান ও প্রশাসনিক কাজে জনবল থাকবে একজন করে। আর থাকবেন দুজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
ধারণাপত্রে সপ্তাহে পাঁচ দিন (শনিবার থেকে বুধবার) জিপি-ক্লিনিক খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে। সেখানে শুধু সংশ্লিষ্ট এলাকার রোগীদের পরিচিতিপত্রের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হবে। হৃদ্রোগ, কিডনি রোগ, ক্যানসার, স্নায়ুরোগ বা অর্থোপেডিক চিকিৎসা এসব ক্লিনিকে সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে জিপি-ক্লিনিক থেকে রোগীদের পাঠানো হবে সরকারি হাসপাতালে। এ ক্ষেত্রে রোগীকে রোগের ইতিহাস, পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র ও একটি রেফারেল চিঠি দেবেন চিকিৎসক। কোনো রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার হলে সহায়তা করবে জিপি-ক্লিনিক।
কোনো কোনো ওয়ার্ডে বহু মানুষ বাস করেন। সেখানে একাধিক জিপি-ক্লিনিক দরকার হবে। এসব ক্লিনিকে দুই পালায় সেবা দিতে হবে, যেন সন্ধ্যার পরও মানুষ সেবা পান।জনস্বাস্থ্যবিদ ও বৈশ্বিক সংস্থা ওয়াটারএইড সাউথ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলামঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো ঢাকার বড় হাসপাতাল এবং বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোয় সরাসরি কোনো রোগী চিকিৎসা নিতে যেতে পারবেন না। জিপি-ক্লিনিক বা অন্য কোনো হাসপাতালের রেফারেল চিঠি তাঁর কাছে থাকতে হবে।
জিপি-ক্লিনিকে সবাই যেতে পারবেন। তবে দরিদ্র, স্বল্প ও নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষের কথা মাথায় রেখে সরকার এ ক্লিনিক চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।
সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও বৈশ্বিক সংস্থা ওয়াটারএইড সাউথ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কোনো ওয়ার্ডে বহু মানুষ বাস করেন। সেখানে একাধিক জিপি-ক্লিনিক দরকার হবে। এসব ক্লিনিকে দুই পালায় সেবা দিতে হবে, যেন সন্ধ্যার পরও মানুষ সেবা পান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এসব ক ল ন ক র ব যবস থ চ ক ৎসক পর ক ষ র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত