সরকারি কর্মচারীদের কাজের হিসাব চাইলেন মাস্ক, না দিলেই বিদায়
Published: 23rd, February 2025 GMT
মার্কিন ফেডারেল সরকারের কর্মচারীদের কাছ থেকে কাজের হিসাব চেয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় তাদের কাছে একটি ই-মেইল পাঠানো হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, তারা গত সপ্তাহে কী কাজ করেছেন, সেই হিসাব আগামীকাল সোমবারের মধ্যে দিতে হবে।
ইলন মাস্ক ঘোষণা করেছেন, কেউ যদি ই-মেইলের জবাব না দেন তাহলে তিনি তার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে ধরে নেওয়া হবে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশে পাঠানো ২৯ মিলিয়ন ডলার গিয়েছিল দুই কর্মীর প্রতিষ্ঠানে: ট্রাম্প
ফের বৈঠকে বসছে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধান ধনকুবের ইলন মাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দেয়ার কিছুক্ষণ পরই এই ই–মেইল পাঠানো হয়।
পোস্টে মাস্ক বলেন, “সব ফেডারেল কর্মচারী শিগগিরই একটি ই-মেইল পাবেন যেখানে তারা গত সপ্তাহে কী কাজ করেছেন তা জানতে চাওয়া হবে। সেটা জানাতে কেউ ব্যর্থ হলে তা ওই কর্মচারির পদত্যাগ হিসেবে গণ্য করা হবে।”
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে (সিপ্যাক) বক্তব্য দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই মাস্ক তার পোস্টটি করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মীর সংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ। শনিবার বিকেলে ট্রাম্প ওয়াশিংটনে সিপ্যাকের বার্ষিক সম্মেলনে বলেন, “আমরা ফেডারেল কর্মীবাহিনী থেকে সমস্ত অপ্রয়োজনীয়, অযোগ্য এবং দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাদের সরিয়ে দিচ্ছি। আমরা সরকারকে আরো ছোট, আরো দক্ষ করতে চাই। আমরা সেরা ব্যক্তিদের রাখতে চাই এবং আমরা সবচেয়ে খারাপ ব্যক্তিদের রাখতে যাচ্ছি না।”
এরপরই ফেডারেল কর্মীদের কাছে কাজের হিসাব চেয়ে ইমেইল পাঠানোর তথ্য জানান মাস্ক। ই-মেইলে কর্মীদের পাঁচটি বুলেট পয়েন্টে তাদের গত সপ্তাহের কাজের সারসংক্ষেপ দিতে বলা হয়েছে। ই-মেইলটি অফিস অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্টের নতুন এইচআর ই-মেইল ঠিকানা থেকে এসেছে। সোমবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট (ইস্টার্ন টাইম) পর্যন্ত ই-মেইলের জবাব দেওয়ার সময়সীমা দেওয়া হয়েছে।
তবে কোনো ফেডারেল কর্মচারী মাস্কের অনুরোধে সাড়া দিতে ব্যর্থ হলে তিনি কোন আইনি-ভিত্তিতে তাকে বরখাস্ত করবেন, তা স্পষ্ট নয়। আবার যেসব কর্মচারী বিধিমোতাবেক গোপনীয় কাজের বিবরণ দিতে পারেন না, তাদের ক্ষেত্রে কী হবে, তা–ও পরিষ্কার নয়।
ফেডারেল কর্মচারীদের প্রতিনিধিত্বকারী বৃহত্তম ইউনিয়ন আমেরিকান ফেডারেশন অব গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ এই বার্তাটিকে ‘নিষ্ঠুর ও অসম্মানজনক’ বলে সমালোচনা করেছে এবং ফেডারেল কর্মচারীদের যেকোনো ‘বেআইনি ছাঁটাই’ চ্যালেঞ্জ করার অঙ্গীকার করেছে।
ইউনিয়নের সভাপতি এভারেট কেলি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আবারো ইলন মাস্ক এবং ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল কর্মচারীদের এবং আমেরিকান জনগণকে তারা যে গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা প্রদান করে তার প্রতি তাদের চরম ঘৃণা প্রকাশ করেছে।”
রবিবার সকালে মাস্ক তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ লিখেছেন, “ইতিমধ্যেই প্রচুর সংখ্যক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
তিনি আরো যোগ করেছেন, “এরা হলেন সেই ব্যক্তি যাদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা উচিত।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ফেডারেল সরকারের ব্যয় কমানো এবং কর্মী ছাঁটাইয়ের জন্য ইলন মাস্কের নেতৃত্বে নতুন দপ্তর ‘ডিওজিই’ চালু করেন ট্রাম্প।
মাস্কের এই দপ্তর বিগত সপ্তাহগুলোতে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা (আইআরএস), পেন্টাগন এবং ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ ) এবং অন্যান্য সংস্থার হাজার হাজার সরকারি কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছে।
২০২২ সালে মাস্ক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টুইটার (যেটি এখন ‘এক্স’ নামে পরিচিত) অধিগ্রহণের পর সংস্থাটির কর্মীদের সঙ্গে যে ধরনের কঠোর আচরণ করেছিলেন, ঠিক একই আচরণ এবার দেখা গেল ফেডারেল কর্মীদের কাছে পাঠানো ই-মেইলেও।
ট্রাম্প বারবার মাস্কের সরকারী কর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।
ট্রুথ সোশ্যালের একটি পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, “মাস্ক ফেডারেল সরকারের আকার হ্রাস করার ক্ষেত্রে ‘দুর্দান্ত কাজ’ করছেন। কিন্তু এই প্রচেষ্টায় উনি আরো কঠোর হলে আমার ভালো লাগবে।’’
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ ড র ল কর ম কর ম দ র কর ছ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে একজনের ফাঁসি কার্যকর
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এক ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। দেশটির বিচার বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ইরানের বার্তা সংস্থা মিজানে প্রকাশিত বিচার বিভাগের ঘোষণায় বলা হয়, গতকাল বুধবার সকালে মোহসেন লাঙ্গারনেশিন নামের ওই ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী দুই বছর ধরে লাঙ্গারনেশিন মোসাদকে ‘ব্যাপক লজিস্টিক, প্রযুক্তিগত এবং কার্যক্রম পরিচালনাসংক্রান্ত সহায়তা’ দিয়ে আসছিলেন।
লাঙ্গারনেশিনের বিরুদ্ধে ওঠা সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগগুলোর একটি হলো, তিনি ২০২২ সালের মে মাসে ইসলামিক রেভল্যুশন গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কর্নেল সাইয়াদ খোদায়িকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিলেন। ঘটনার দিন তেহরানে নিজ বাড়ির দিকে ফিরছিলেন কর্নেল খোদায়ি। ওই সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে আসা বন্দুকধারীরা তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে।
মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কর্নেল খোদায়ির হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছিল।
মিজানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, খোদায়ির গতিবিধি নজরে রাখার জন্য মোহসেন লাঙ্গারনেশিন নিজে একটি মোটরসাইকেল কিনেছিলেন। তিনি সেই মোটরসাইকেলের মাধ্যমে নজরদারি চালাতেন এবং সব তথ্য মোসাদকে সরবরাহ করতেন। হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিলেন।
শুধু তা–ই নয়, লাঙ্গারনেশিনের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিল্প এলাকা ইস্পাহানে হামলায় সহায়তার অভিযোগও আনা হয়েছে।
ইরান সরকারের দাবি, মোহসেন লাঙ্গারনেশিনের বিরুদ্ধে তাদের হাতে গোয়েন্দা ও প্রযুক্তিগত প্রমাণ রয়েছে। এসব তথ্য প্রমাণ করে যে লাঙ্গারনেশিন এসব অভিযানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। লাঙ্গারনেশিন নিজেই তাঁর সম্পৃক্ততার কথা সম্পূর্ণরূপে স্বীকার করেছেন বলেও দাবি করেছে ইরান সরকার।
তবে নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটসের (আইএইচআর) প্রধান মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেছেন, ‘লাঙ্গারনেশিনকে সম্পূর্ণ একতরফা ও অনৈতিক বিচারের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। নির্যাতন করে তাঁর স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।’
বার্তা সংস্থা এএফপিকে মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেন, ‘ইরানি কর্তৃপক্ষের মৃত্যুদণ্ডযন্ত্র প্রতিনিয়ত বেগবান হয়ে উঠছে—আরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।’
এসব মৃত্যুদণ্ডকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন মাহমুদ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন আবদুর রহমান বোরুমান্দ সেন্টার লাঙ্গারনেশিনের মামলাটি নিয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে। সংগঠনটি বলছে, মোহসেন লাঙ্গারনেশিনকে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে গ্রেপ্তারের পর বিচারক আবুলঘাসেম সালাভাতির নেতৃত্বে তেহরানের একটি রেভল্যুশনারি কোর্টে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বিচারক সালাভাতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা আছে। মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার জন্য তাঁর কুখ্যাতি রয়েছে।
বোরুমান্দ সেন্টার আরও বলেছে, লাঙ্গারনেশিন সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁর কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল দাবি করেছিলেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইরানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অভিনেত্রী ও মানবাধিকারকর্মী নাজানিন বনিয়াদি লিখেছেন, ‘রক্তপিপাসু ইসলামি প্রজাতন্ত্র আবারও একজন নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসি দিল।’
ইসরায়েলের সঙ্গে দশকের পর দশক ধরে ছায়া যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ইরান এর আগেও মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে অনেক মানুষকে ফাঁসি দিয়েছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে চালানো নাশকতা ও গুপ্তহত্যার চেষ্টায় জড়িত ব্যক্তিদের এমন শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তিনজন পুরুষ ও একজন নারীকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
লাঙ্গারনেশিনের মৃত্যুদণ্ড এমন সময়ে কার্যকর করা হলো, যখন কিনা ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি অভিযোগ করেছেন, এই আলোচনার প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে ইসরায়েল সচেতনভাবে ষড়যন্ত্র করছে। তেহরানের তথ্যমতে, আগামী শনিবার রোম শহরে ওমানের মধ্যস্থতায় ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে চতুর্থ দফার পারমাণবিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।