আপনিও কি টক্সিক প্যারেন্টিংয়ের শিকার? বৈশিষ্ট্যগুলো মিলিয়ে নিন
Published: 24th, February 2025 GMT
প্যারেন্টিং যে একটা শেখার বিষয়, এটা এখন আর মিলেনিয়ালদের মা–বাবাদের বুঝিয়ে লাভ নেই। এই লেখা শুরু করার আগে মায়ের কাছে গেলাম। বললাম, ‘আম্মু, টক্সিক প্যারেন্টিং বিষয়টা কি বোঝো?’ উত্তর যা এল, তা সবচেয়ে ভদ্রভাবে লিখলে দাঁড়ায়, ‘তোমাদের মানুষ করতে গিয়ে জীবনটা শেষ করে দিলাম, এখন তোমাদের বাচ্চা পালতেছি। আর তুমি আমাকে প্যারেন্টিং শেখাও? শেষ বয়সে তোমার কাছ থেকে আমার প্যারেন্টিংয়ের শিক্ষা নিতে হবে?’
মাকে তো তা–ও সাহস করে প্রশ্নটা করা গেছে। আমার ধারণা, আমাদের প্রজন্মের আশি ভাগেরই নিজেদের বাবাকে প্যারেন্টিং নিয়ে প্রশ্ন করার ক্ষমতা নেই। যাহোক, টক্সিক প্যারেন্টিং মূলত চার প্রকার। ডিসমিসিভ, হেলিকপ্টার, নার্সিসিস্টিক ও প্যাসিভ বা পারমিসিভ প্যারেন্টিং।
১.অনেক মা–বাবার সবচেয়ে প্রিয় অস্ত্র হলো ‘গিল্ট’। এ ধরনের মা–বাবা সন্তানকে প্রতিনিয়ত ‘গিল্ট ট্রিপ’–এ ফেলতে চান। সব সময় মনে করিয়ে দেন যে তাঁরা আপনার জন্য কী করেছেন। বিশেষ করে কী কী ‘স্যাক্রিফাইস’ করেছেন। যেন আপনি ‘নিজের ইচ্ছায়’ পৃথিবীতে এসে তাঁদেরকে বড্ড সমস্যার ভেতর ফেলে দিয়েছেন। আপনাকে এসব কথা বলে একটা অনুশোচনাবোধ, হীনম্মন্যতাবোধের মধ্যে ফেলতে চান তাঁরা। অথচ তাঁরা যেটা করেছেন, অভিভাবক হিসেবে সেটা তাঁদের একান্ত দায়িত্ব।
আরও পড়ুনশিশুর সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার জন্য দিনের যে চারটি সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ১৬ জানুয়ারি ২০২৫২.অনেক মা–বাবা বলতেই থাকেন, ‘তুমি তো পারবে না… তুমি জীবনে কী করবে? তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না…।’ এভাবে সন্তানের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেন মা–বাবারা। সন্তান যা-ই করুক না কেন, তাঁরা কেবল নেতিবাচক দিকটা নিয়েই কথা বলেন।
৩.অনেক মা–বাবা সন্তানকে ‘প্রজেক্ট’ হিসেবে দেখেন। সন্তানের প্রতি সময়, শ্রম, অর্থ ব্যয় তাঁদের কাছে ‘বিনিয়োগ’। যেটা একসময় বহু গুণে ফিরে আসার প্রত্যাশা করেন। সন্তানের কাছে তাঁদের অনেক চাহিদা। সন্তানের সুখী হওয়ার চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে বা সামাজিক স্ট্যাটাসের মাপকাঠিতে সফল হওয়াই তাঁদের কাছে মুখ্য। যাতে তাঁরা নিজেরাও সন্তানের স্ট্যাটাসের ভাগীদার হতে পারেন! এটাকে বলে ‘নার্সিসিস্টিক প্যারেন্টিং’।
৪.অনেক মা–বাবা আপনাকে একটা আলাদা সত্তা হিসেবে চিন্তাই করতে পারেন না। আপনাকে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে দেন না। আপনার ব্যক্তিগত সীমানার প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা নেই। আপনার যে ব্যক্তিগত বিষয় থাকতে পারে, সেটিকে অগ্রাহ্য করেন অনেকে তাঁরা। আপনার সব সিদ্ধান্ত তাঁরা ঠিক করে দেন। আপনার সব বিষয়ে তাঁরা ‘নাক গলান’। এমনকি সন্তানের বিবাহিত জীবনেও প্রভাব খাটান। এটাকে বলে ‘হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং’।
আরও পড়ুনহেলিকপ্টার প্যারেন্টিং কী, না জেনে সন্তানের ক্ষতি করছেন না তো?২৯ মার্চ ২০২৩৫.সন্তানকে গালিগালাজ (ভারবাল অ্যাবিউজ) ও মারধর করেন অনেক মা–বাবা। অথচ শিশুর গায়ে হাত তোলা বা শারীরিক নির্যাতন করা আইনের চোখে অপরাধ।
৬.অনেক ক্ষেত্রেই মা–বাবা সব সময় সন্তানকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করেন। ‘ওর মা–বাবা ওকে কী খেতে দেয়? আমি কি তোমাকে সেগুলো খেতে দিই না? তাহলে ও পারলে তুমি কেন পারো না?’
৭.অন্যের সামনে সন্তানকে অপদস্ত করাও অনেক মা–বাবার স্বভাব। সন্তানের ব্যক্তিগত বিষয় অন্যদের বলে বেড়ান তাঁরা। সন্তানের প্রাইভেসি বা সম্মানের তোয়াক্কা করেন না।
আরও পড়ুনজেলিফিশ প্যারেন্টিং আপনার সন্তানের জন্য ভালো না খারাপ৩০ আগস্ট ২০২৩৮.সন্তানের আবেগীয় অনুভূতিকে প্রাধান্য দেন না অনেক মা–বাবা। বরং নিজের প্রয়োজনকে ওপরে রাখেন। তাঁরা সন্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল নন। সন্তানকে কেবল নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করেন। এটাকে বলে ‘ডিজমিসিভ প্যারেন্টিং’।
৯.নিয়মের ব্যাপারে অত্যন্ত কড়া। অল্পতেই রেগে যান। অল্পতেই তাঁদের ‘ইগো হার্ট’ হয়।
১০.কোনো সেনসিটিভ বা স্পর্শকাতর বিষয়ে বা যেকোনো বিষয়ে সন্তানের সঙ্গে মুখোমুখি বা খোলামেলা আলাপ করতে চান না। প্যারেন্টিংয়ে মা–বাবার মধ্যে সব সময় তথ্য গোপন করা, লুকোছাপা করার একটা মনোভাব থাকে। মনে করুন, আপনার বিষয়েই একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু আপনার সঙ্গে খোলামেলা আলাপ না করে তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে আপনাকে তাঁর বা তাঁদের সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন। এটাকে বলে ‘প্যাসিভ’ বা ‘পারমিসিভ প্যারেন্টিং’। এসবই টক্সিক প্যারেন্টিংয়ের উদাহরণ।
সূত্র: টকসস্পেস ডটকম
আরও পড়ুনপান্ডা প্যারেন্টিং কি ভালো২২ জানুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আপন র স অন ক ম আপন ক
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে এক সপ্তাহে তিন ব্যাংক এমডির পদত্যাগ
গত সপ্তাহে বেসরকারি খাতের তিন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে আগে থেকেই ছুটিতে পাঠিয়েছিল ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। আর মেঘনা ও কমার্স ব্যাংকের এমডি হঠাৎ করেই পদত্যাগ করেছেন।
জানা গেছে, পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় মেঘনা ও কমার্স ব্যাংকের এমডিদের পদত্যাগ করতে হয়। হঠাৎ করে দুই এমডির পদত্যাগ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। গত বছরের ৫ আগস্টের পর এই তিন ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে কমার্স ব্যাংক ছিল এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ও মেঘনা ব্যাংক ছিল সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবার ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গতকাল মুদ্রানীতি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘কয়েকজন এমডি কেন পদত্যাগ করেছেন, আমরা তা খতিয়ে দেখছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকিং নিয়মে কোনো এমডি পদত্যাগ করলে বাংলাদেশ ব্যাংককে তার কারণ জানাতে হয়। তাঁর পদত্যাগ কার্যকর হবে কি না, এরপরই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পদত্যাগ করা এমডিকে কাজে ফিরিয়ে দেওয়ার উদাহরণও আছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফের সিদ্ধান্ত ঘিরে সৃষ্ট বিতর্কের জেরে পদত্যাগ করেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। গত মঙ্গলবার পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে মোশারফ হোসেনের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন পর্ষদের কয়েকজন সদস্য। পরদিনই তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
তবে ব্যাংকটি লিখিতভাবে প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এমডি লক্ষ্য পূরণ করতে না করায় তার ব্যর্থতা স্বীকার করে নেন, এরপর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। মোশারফ হোসেন চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি কমার্স ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দেন।
এদিকে গত সোমবার সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি নুরুদ্দিন মো. ছাদেক হোসেন পদত্যাগ করেন। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বরাবরে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর আগে চলতি বছরের ৪ মে তাঁকে তিন মাসের ছুটিতে পাঠিয়েছিল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
গত রোববার পদত্যাগ করেন মেঘনা ব্যাংকের এমডি কাজী আহ্সান খলিল। গত বছরের এপ্রিলে ৩ বছরের জন্য তিনি ব্যাংকটির এমডি হিসেবে যোগ দেন। তবে ১৫ মাসের মাথায় এসে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
জানতে চাইলে কাজী আহ্সান খলিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন পর্ষদ কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে আমাকে ছুটিতে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। আমি সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে নিজেই পদত্যাগ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করলেই আরও অনেক কিছু জানতে পারবে।’
চলতি বছরের মার্চে মেঘনা ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির শেয়ারধারী পরিচালকের পাশাপাশি স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। যাঁদের দুজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা।