প্যারেন্টিং যে একটা শেখার বিষয়, এটা এখন আর মিলেনিয়ালদের মা–বাবাদের বুঝিয়ে লাভ নেই। এই লেখা শুরু করার আগে মায়ের কাছে গেলাম। বললাম, ‘আম্মু, টক্সিক প্যারেন্টিং বিষয়টা কি বোঝো?’ উত্তর যা এল, তা সবচেয়ে ভদ্রভাবে লিখলে দাঁড়ায়, ‘তোমাদের মানুষ করতে গিয়ে জীবনটা শেষ করে দিলাম, এখন তোমাদের বাচ্চা পালতেছি। আর তুমি আমাকে প্যারেন্টিং শেখাও? শেষ বয়সে তোমার কাছ থেকে আমার প্যারেন্টিংয়ের শিক্ষা নিতে হবে?’

মাকে তো তা–ও সাহস করে প্রশ্নটা করা গেছে। আমার ধারণা, আমাদের প্রজন্মের আশি ভাগেরই নিজেদের বাবাকে প্যারেন্টিং নিয়ে প্রশ্ন করার ক্ষমতা নেই। যাহোক, টক্সিক প্যারেন্টিং মূলত চার প্রকার। ডিসমিসিভ, হেলিকপ্টার, নার্সিসিস্টিক ও প্যাসিভ বা পারমিসিভ প্যারেন্টিং।

১.

অনেক মা–বাবার সবচেয়ে প্রিয় অস্ত্র হলো ‘গিল্ট’। এ ধরনের মা–বাবা সন্তানকে প্রতিনিয়ত ‘গিল্ট ট্রিপ’–এ ফেলতে চান। সব সময় মনে করিয়ে দেন যে তাঁরা আপনার জন্য কী করেছেন। বিশেষ করে কী কী ‘স্যাক্রিফাইস’ করেছেন। যেন আপনি ‘নিজের ইচ্ছায়’ পৃথিবীতে এসে তাঁদেরকে বড্ড সমস্যার ভেতর ফেলে দিয়েছেন। আপনাকে এসব কথা বলে একটা অনুশোচনাবোধ, হীনম্মন্যতাবোধের মধ্যে ফেলতে চান তাঁরা। অথচ তাঁরা যেটা করেছেন, অভিভাবক হিসেবে সেটা তাঁদের একান্ত দায়িত্ব।

আরও পড়ুনশিশুর সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার জন্য দিনের যে চারটি সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ১৬ জানুয়ারি ২০২৫২.

অনেক মা–বাবা বলতেই থাকেন, ‘তুমি তো পারবে না… তুমি জীবনে কী করবে? তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না…।’ এভাবে সন্তানের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেন মা–বাবারা। সন্তান যা-ই করুক না কেন, তাঁরা কেবল নেতিবাচক দিকটা নিয়েই কথা বলেন।

৩.

অনেক মা–বাবা সন্তানকে ‘প্রজেক্ট’ হিসেবে দেখেন। সন্তানের প্রতি সময়, শ্রম, অর্থ ব্যয় তাঁদের কাছে ‘বিনিয়োগ’। যেটা একসময় বহু গুণে ফিরে আসার প্রত্যাশা করেন। সন্তানের কাছে তাঁদের অনেক চাহিদা। সন্তানের সুখী হওয়ার চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে বা সামাজিক স্ট্যাটাসের মাপকাঠিতে সফল হওয়াই তাঁদের কাছে মুখ্য। যাতে তাঁরা নিজেরাও সন্তানের স্ট্যাটাসের ভাগীদার হতে পারেন! এটাকে বলে ‘নার্সিসিস্টিক প্যারেন্টিং’।

৪.

অনেক মা–বাবা আপনাকে একটা আলাদা সত্তা হিসেবে চিন্তাই করতে পারেন না। আপনাকে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে দেন না। আপনার ব্যক্তিগত সীমানার প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা নেই। আপনার যে ব্যক্তিগত বিষয় থাকতে পারে, সেটিকে অগ্রাহ্য করেন অনেকে তাঁরা। আপনার সব সিদ্ধান্ত তাঁরা ঠিক করে দেন। আপনার সব বিষয়ে তাঁরা ‘নাক গলান’। এমনকি সন্তানের বিবাহিত জীবনেও প্রভাব খাটান। এটাকে বলে ‘হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং’।

আরও পড়ুনহেলিকপ্টার প্যারেন্টিং কী, না জেনে সন্তানের ক্ষতি করছেন না তো?২৯ মার্চ ২০২৩৫.

সন্তানকে গালিগালাজ (ভারবাল অ্যাবিউজ) ও মারধর করেন অনেক মা–বাবা। অথচ শিশুর গায়ে হাত তোলা বা শারীরিক নির্যাতন করা আইনের চোখে অপরাধ।

৬.

অনেক ক্ষেত্রেই মা–বাবা সব সময় সন্তানকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করেন। ‘ওর মা–বাবা ওকে কী খেতে দেয়? আমি কি তোমাকে সেগুলো খেতে দিই না? তাহলে ও পারলে তুমি কেন পারো না?’

৭.

অন্যের সামনে সন্তানকে অপদস্ত করাও অনেক মা–বাবার স্বভাব। সন্তানের ব্যক্তিগত বিষয় অন্যদের বলে বেড়ান তাঁরা। সন্তানের প্রাইভেসি বা সম্মানের তোয়াক্কা করেন না।

আরও পড়ুনজেলিফিশ প্যারেন্টিং আপনার সন্তানের জন্য ভালো না খারাপ৩০ আগস্ট ২০২৩৮.

সন্তানের আবেগীয় অনুভূতিকে প্রাধান্য দেন না অনেক মা–বাবা। বরং নিজের প্রয়োজনকে ওপরে রাখেন। তাঁরা সন্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল নন। সন্তানকে কেবল নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করেন। এটাকে বলে ‘ডিজমিসিভ প্যারেন্টিং’।

৯.

নিয়মের ব্যাপারে অত্যন্ত কড়া। অল্পতেই রেগে যান। অল্পতেই তাঁদের ‘ইগো হার্ট’ হয়।

১০.

কোনো সেনসিটিভ বা স্পর্শকাতর বিষয়ে বা যেকোনো বিষয়ে সন্তানের সঙ্গে মুখোমুখি বা খোলামেলা আলাপ করতে চান না। প্যারেন্টিংয়ে মা–বাবার মধ্যে সব সময় তথ্য গোপন করা, লুকোছাপা করার একটা মনোভাব থাকে। মনে করুন, আপনার বিষয়েই একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু আপনার সঙ্গে খোলামেলা আলাপ না করে তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে আপনাকে তাঁর বা তাঁদের সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন। এটাকে বলে ‘প্যাসিভ’ বা ‘পারমিসিভ প্যারেন্টিং’। এসবই টক্সিক প্যারেন্টিংয়ের উদাহরণ।

সূত্র: টকসস্পেস ডটকম

আরও পড়ুনপান্ডা প্যারেন্টিং কি ভালো২২ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আপন র স অন ক ম আপন ক

এছাড়াও পড়ুন:

চেন্নাইয়ের বিদায়, অবসরের ইঙ্গিত দিলেন ধোনি!

আইপিএল ২০২৫-এর প্লে-অফে জায়গা হলো না চেন্নাই সুপার কিংসের। ঘরের মাঠ এম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে পাঞ্জাব কিংসের কাছে ৪ উইকেটে হেরে এবারের আসর থেকে ছিটকে গেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর শুধু চেন্নাইয়ের বিদায়ই নয়, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’ ধোনি। শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন—এটাই কি তার শেষ আইপিএল?

ম্যাচ শুরুর আগেই টসের সময় ধোনিকে ঘিরে তৈরি হয় রহস্য। ধারাভাষ্যকার ড্যানি মরিসনের সরাসরি প্রশ্ন ছিল, ধোনি কি আগামী মৌসুমেও আইপিএলে দেখা যাবে? জবাবে হেসে ধোনি বলেন, ‘আমি তো জানি না পরের ম্যাচেই খেলব কি না।’ এই মন্তব্যেই ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। যদিও ম্যাচ শেষে নিজের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি ধোনি। তাকেও সে ব্যাপারে আর প্রশ্ন করেননি সঞ্চালক।

ধোনির মন্তব্যে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান উইকেটকিপার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট বলেন, ‘ধোনি একজন চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি। তার আর কিছু প্রমাণের নেই। সম্ভবত এবার সরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। যদিও ভক্তদের জন্য তা কষ্টদায়ক হবে।’

 চেন্নাই প্রথমে ব্যাট করে ১৯১ রান তোলে। স্যাম কারানের ৮৮ রানের ইনিংস ছাড়া ব্যাট হাতে কেউই তেমন জ্বলে উঠতে পারেননি। শেষ দিকে যুজবেন্দ্র চাহালের হ্যাটট্রিকে মাত্র ৪ বল বাকি থাকতে গুটিয়ে যায় ইনিংস। চাহাল ৪ উইকেট নেন, জানসেন ও আর্শদীপ নেন ২টি করে।

জবাবে পাঞ্জাবের হয়ে ঝড়ো সূচনা এনে দেন প্রিয়াংশ আর্য ও প্রভসিমরান সিং। প্রভসিমরান খেলেন ৩৬ বলে ৫৪ রানের দারুণ ইনিংস। এরপর শ্রেয়াস আইয়ারের ৭২ রানের অনবদ্য ইনিংস এবং শশাঙ্ক সিংয়ের শেষের ২৩ রানের ক্যামিওতে দুই বল বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয় পাঞ্জাব। এই জয়ে তারা উঠে এসেছে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ