ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছেন হিলির জাহের উদ্দিন
Published: 25th, February 2025 GMT
ঘোড়া দিয়ে হালচাষ-কথাটি এতদিন ব্যাঙ্গার্থে ব্যবহার হলেও এখন আর এটি ব্যাঙ্গাত্মক নয়। দিনাজপুরের হিলিতে দেখা মিললো ঘোড়া দিয়ে হালচাষ-এর।
গরুর পরিবর্তে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছেন জাহের উদ্দিন নামের একজন চাষি। সংসারে অভাব-অনটন দূর করতেই এই কাজ করছেন তিনি।
হিলি সীমান্তের মংলা গ্রামের ৬০ বছর বয়সী বাসিন্দা জাহের উদ্দিন। এক সময় অভাবের কারণে বাড়ির একমাত্র উপার্জনের গরুর হালটি বিক্রি করে ফেলেন তিনি। বসে খেলে রাজার ভান্ডারও শেষ হয়ে যায়। কিন্তু যে হালটি তিনি হারিয়ে ফেলেছেন আজ তার দাম প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এতো টাকা জোগাড় করার মতো ক্ষমতা নেই এই জাহের উদ্দিনের। পরে নিজস্ব বুদ্ধি খাটিয়ে ১২ হাজার করে ২টি ঘোড়া ২৪ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেন তিনি। ঘোড়াকে হালচাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন।
ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছেন জাহের উদ্দিন
ঘোড়া দিয়ে হালচাষ শুরু করার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জাহের উদ্দিনকে। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই বিঘা ধানা জমিসহ বিভিন্ন ফসলের জমি চাষ করেন তিনি। ৬০০ টাকা বিঘা হিসেবে দিনে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা বর্তমানে ঘোড়া দিয়ে তার আয়। তবে প্রতিদিন ঘোড়া দুটির খাবার বাবদ খরচ হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। বাকি ১২০০ টাকা তার দিন কামাই। সংসার আজ সচ্ছল তার।
মকবুল হোসেন নামের একজন কৃষক বলেন, “আমার মোট ৬ বিঘা আবাদি জমি আছে। ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে থাকি। এগুলো আমাদের পলি মাটি তাই সহজে চাষ করা যায়। আমাদের এলাকায় জাহের ভাইয়ের ঘোড়ার হালচাষ আছে। গরুর হালচাষের চেয়ে ২০০ টাকা কম দামে পাওয়া যায় এবং গরুর হালচাষের চেয়ে ঘোড়ার হালচাষ খারাপ না। আমি আমার সব জমি ঘোড়ার হাল দিয়ে চাষ করে থাকি।”
জাহের উদ্দিন বলেন, “আমরা দুইটি গরুর হাল ছিলো, অভাবের কারণে বিক্রি করে ফেলেছিলাম। কম দামে দুটি ঘোড়া কিনে মানুষের জমি চাষ দিয়ে যাচ্ছি। একটা ঘোড়া দিয়ে হাল দিতে শুরু করি, একটা হাঁপিয়ে উঠলে আবার আর একটা দিয়ে শুরু করি। তবে বর্তমান দেশের যে পরিস্থিতি তাতে চোর-ডাকাতের ভয়ে গরু বাড়িতে রাখা মুশকিল। কিন্তু ঘোড়াকে নিয়ে চুরি-ডাকাতির কোন ভয় নেই। সারাদিন সারারাত ছেড়ে দেওয়া থাকলেও কোন চিন্তা থাকে না। দুইটা ঘোড়া কিনে আজ আমার ভাগ্য খুলে গেছে।”
ঢাকা/মোসলেম/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ষ কর করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।গত মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দিুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।
এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দু’জন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি। দোলার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় ব্যবসায়ী।
সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী।
এ বিষয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজে এর একটা ব্যাখ্যা রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করছি। নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট, রামপাল বিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।’
সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভাল হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’