তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্যতম পথিকৃৎ শাহেদা মুস্তাফিজ বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রোগ্রামার। তাকে নিয়ে বই লিখেছেন এই প্রজন্মের লেখক ও সাংবাদিক রাহিতুল ইসলাম। ‘তথ্যপ্রযুক্তির নায়ক শাহেদা মুস্তাফিজ’ শিরোনামের বইটিতে উঠে এসেছে শাহেদা মুস্তাফিজের সংক্ষিপ্ত জীবনী। 

বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা প্রতিভাষা। ‘তথ্যপ্রযুক্তির নায়ক’ সিরিজের তৃতীয় বই হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে এটি।

বইটি সম্পর্কে লেখক রাহিতুল ইসলাম বলেন, ‘এখনো আমাদের দেশে প্রোগ্রামিংয়ে নারীরা কম আসেন। সেখানে প্রায় ৫০ বছর আগের চিত্র তো কল্পনাই করা যায় না। কোনো নারী তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কাজ করতেন না। দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ানো হতো না তখন। সেই পরিবেশেও দমে থাকেননি শাহেদা মুস্তাফিজদের মতো মানুষরা। অথচ তাদের অবদানের কথা ধীরে ধীরে বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অবদান রাখা এমন মোট ১০ ব্যক্তিকে নিয়ে ‘তথ্যপ্রযুক্তির নায়ক’ সিরিজ প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমার। বইগুলো পড়ে তরুণ প্রজন্ম জানতে পারবে, কীভাবে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত এত দূর এগিয়েছে। এই সিরিজ হবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একটি ঐতিহাসিক দলিল।’

আরো পড়ুন:

প্রকাশিত হয়েছে সাজেদুর আবেদীন শান্ত’র ‘ঈশ্বর ও হেমলক’ 

বইমেলায় শব্দনীলের কাব্যগ্রন্থ ‘চালাকচরের ফুলপরী’

প্রতিভাষা প্রকাশনের সমন্বয়ক পান্থ দেব রায় জানিয়েছেন, লেখক রাহিতুল ইসলাম অনেক দিন আগে ‘তথ্যপ্রযুক্তির নায়ক’ সিরিজের বই প্রকাশ শুরু করেছেন। এই সিরিজের তৃতীয় বই তথ্যপ্রযুক্তির নায়ক শাহেদা মুস্তাফিজ। ৫০ বছরের মতো তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সক্রিয় ছিলেন শাহেদা মুস্তাফিজ। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রোগ্রামার। সেদিক থেকে তার এই সুখপাঠ্য জীবনী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

উল্লেখ্য, এর আগে তথ্যপ্রযুক্তির নায়ক আবদুল্লাহ এইচ কাফি এবং এস এম কামালকে নিয়ে রাহিতুল ইসলামের লেখা দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তির নায়ক শাহেদা মুস্তাফিজ বইটির মুদ্রিত মূল্য ২৫০ টাকা। বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে গ্রন্থিক প্রকাশনের ১০৩–১০৫ নং স্টলে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি। বইটি পাওয়া যাচ্ছে প্রথমা ডটকমসহ বিভিন্ন অনলাইন বুকশপ এবং সকল বইয়ের দোকানে।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র হ ত ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ