দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে বহু বছর ধরে অনেক বাধা পেরিয়ে নারী সামনে এগোচ্ছে। এই পথে অর্জনও রয়েছে অনেক। অথচ পথে, যানবাহনে, খেলার মাঠে নারীর ওপর আঘাত আসছে। নারীর অর্জন টিকিয়ে রাখতে ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে সবার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। আজ মঙ্গলবার প্রথম আলো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এসব বিষয় উঠে এসেছে।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে ‘নারীর লড়াই, নিরাপত্তা, নেতৃত্ব ও সমাজের বাধা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে। বৈঠকে অংশ নেওয়া নারীরা ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন বন্ধে ও নারী নেতৃত্ব বিকাশে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো ও সাংস্কৃতিক জাগরণ সৃষ্টির ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, রাজনৈতিক দলে নারী নেতৃত্বকে উপেক্ষিত করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। কোন দল নারীর পক্ষে কথা বলে, তা দেখে এবার ভোট দেবেন নারী।

লড়াইটা পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে

গোলটেবিল বৈঠকে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন হক বলেন, নারীর প্রতি যত ধরনের বৈষম্য রয়েছে, তা নিরসনে সুপারিশ করবে কমিশন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী করতে পারে, পরবর্তী সরকার এসে কী করবে—সেসব সুপারিশ করা হবে। তবে এর মধ্যে কতগুলো সুপারিশ বাস্তবায়িত হবে, তা কমিশন জানে না। নারী কী চায়, নারীর প্রাপ্য, নারীর হিস্যা সামনে তুলে আনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বর্তমান সময়ের নিরাপত্তাহীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও কিছুটা আতঙ্ক বোধ করছি। খবরে যা পড়ছি, তাতে মনে হচ্ছে দুশ্চিন্তার অনেক কারণ ঘটেছে। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। নারীকে মানুষ হিসেবে চিনুন, জানুন, শ্রদ্ধা করুন।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, নারীদের লড়াইটা পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে, পুরুষের বিরুদ্ধে নয়। নারীদের লড়াইয়ে পাশে এসে দাঁড়াতে হবে পুরুষদের। প্রত্যেক ক্ষেত্রের প্রান্তিক নারীদের লড়াইয়ের কথা তুলে এনে কাজ করতে না পারলে সমতা, সম–অধিকার ও সমদর্শিতা প্রতিষ্ঠিত হবে না। এখন নারীর বিরুদ্ধে নতুন নতুন বাধা সামনে আসছে। দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত কিছু বিষয় প্রশ্নের মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আছি, তারা পথ দেখাবে। নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে সফল অনুকরণীয় নারীদের কথা তুলে আনতে হবে।’

নিরাপত্তা জরুরি

নারীর অর্জন টিকিয়ে রাখতে নিরাপত্তা জরুরি বলে মনে করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, নারীর নিরাপত্তার জন্য সহিংসতামুক্ত পরিবেশ, সুষম পারিবারিক আইন, প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। নারীর ব্যক্তিজীবনের অধিকারগুলো উপেক্ষিত হওয়ায় রাষ্ট্রীয় আইনের সুফল নারী পাচ্ছেন না। মূল ধারার রাজনীতিতে নারী ও জেন্ডার বিষয়কে যুক্ত করতে হবে।

ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নারীপক্ষের সভাপতি গীতা দাস বলেন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধন আনা হয়েছিল। কিন্তু আইনের প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ধর্ষণ ঠেকাতে পারেনি। নারীর নিরাপত্তার জন্য সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। নারীর নিরাপত্তার জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এক হয়ে লড়াই করতে হবে।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান ও শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। দেড় দশক আগে হাইকোর্ট কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন। এখনো অনেক কারখানায় এ ধরনের কমিটি গঠিত হয়নি। অনেক শ্রমিক এসব কমিটির কথা জানেও না। আবার যেসব কারখানায় কমিটি আছে, সেখানে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে কারখানার বাইরের ব্যক্তিদের রাখা হয়নি।

নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নাজিফা জান্নাতও। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভালো কিছুর প্রত্যাশা নিয়ে তাঁরা গণ-অভ্যুত্থানে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু কিছু ঘটনা আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। তাঁর মতে, রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় নারীর প্রতি অবহেলিত দৃষ্টি রয়েছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থেকে যদি নারী নির্যাতন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা বোধ না করা হয়, তাহলে বুঝতে হবে এ রাষ্ট্র আমাদের নয়।

রাজনীতি, খেলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ক্ষমতায়নে জোর দিতে হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, পরিবার, পথে, কর্মক্ষেত্রে, খেলাধুলায় ও রাজনীতিতে নারীরা আগে যেভাবে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন, এখনো সেভাবে হচ্ছেন। জুলাই গণ-আন্দোলনের সময়ে এই প্রজন্ম যে বাংলাদেশের চেহারা দেখাচ্ছিল, সেই বাংলাদেশ প্রগতিশীল। সেই ছেলেমেয়েরা এখন পড়াশোনায় ব্যস্ত। নারীর প্রতি অসহনশীল বাংলাদেশ তারা মেনে নেবে না। দীর্ঘ সময় ধরে নারী আন্দোলনে যুক্ত থাকা নারীরা এর চেয়ে ভয়াবহ সময় পার করে এসেছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা অনুপ্রেরণা দেবে এই প্রজন্মকে। রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে নারী বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। তাদের নির্বাচনী ইশতেহার দেখে নারীরা ঠিক করবেন কোন দলে ভোট দেবেন।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, একটি নতুন রাজনৈতিক দলের যে ছবি এসেছে সংবাদমাধ্যমে, তাতে নারীর চেহারা দেখা যাচ্ছে না। অফলাইন ও অনলাইনে নারীর ওপর চারিত্রিক আক্রমণ হয়। যেসব সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ছাড়া বাকিগুলোতে নারীর উপস্থিতি কম। নারীর যেসব স্বীকৃত অর্জন আছে, সেগুলো নিয়ে বেশি বেশি কথা বলে লোকজনকে জানানো প্রয়োজন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমীন বলেন, ফ্যাসিবাদী কেউ নারীর ক্ষমতায়নের মডেল হতে পারে না। এই কাঠামো সব জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে না। নারীর নেতৃত্ব তৈরির জন্য যা করা দরকার ছিল, তার উল্টোটা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, নারীদের কথা শোনার জন্য এখন নানা আয়োজন হচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আকাঙ্ক্ষার যে স্ফুরণ দেখা গেছে, তার বাস্তবায়ন জরুরি। গণ-অভ্যুত্থানে ১৪ জুলাই নারীরা প্রথম বেরিয়ে এসে বড় ভূমিকা রেখেছেন।

নতুন রাজনৈতিক দলে বিভিন্ন জাতিসত্তার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান জানান মানবাধিকারকর্মী ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য ইলিরা দেওয়ান। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পরও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা এখন বড় বিষয়। নারীর নেতৃত্ব বিকাশে তৃণমূলে নির্বাচিত নারী সদস্যদের মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

খেলাধুলায় সম্পৃক্ত হতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন ১০০ মিটার দৌড়ে ১৬ বারের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার। আর্থিক সংকটে বড় হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, খেলাধুলা নিয়ে, পোশাক নিয়ে বাধার মুখে পড়েছিলেন তিনি। খেলাধুলা পেশা হতে পারে, এই পেশা থেকে অর্থ উপার্জন সম্ভব, সেই ধারণা ছিল না। শুধু ইচ্ছেশক্তির জোরেই তিনি বাড়ির ছোট গণ্ডি ডিঙিয়ে খেলার জগতে প্রবেশ করেছেন। তাঁকে দেখে অন্য মেয়েরাও যেন খেলাধুলায় আসতে উৎসাহিত হয়, সে লক্ষ্য নিয়ে তিনি কাজ করতে চান।

কণ্ঠশিল্পী এলিটা করিম বলেন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পুরুষের চেয়ে নারীর পারিশ্রমিক বৈষম্য প্রকট। এ ছাড়া একজন নারী শিল্পীর অর্জনের চেয়ে তাঁকে নিয়ে ব্যক্তিগত চর্চা বেশি হয় সমাজে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।

গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রজন ম র জন য সরক র প রথম ব ষয়ক র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

নারী‌দের ঘর থে‌কে বের হ‌তে দেওয়া হ‌বে না ব‌লে অপবাদ ছড়া‌নো হ‌চ্ছে 

নারী‌দের কাজ করতে দেওয়া হ‌বে না, ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হ‌বে না- এ নিয়ে জামায়া‌তের বিরু‌দ্ধে অপবাদ ছড়া‌নো হ‌চ্ছে ব‌লে মন্তব‌্য ক‌রে‌ছেন দল‌টির আমির ডা. শফিকুর রহমান।

মহান মে দিবস উপল‌ক্ষে বৃহস্পতিবার (১ মে) রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে তিনি এ কথা করেন।

শ‌ফিকুর রহমান বলেন, “আমাদের প্রতিপক্ষরা অপবাদ ছড়ায়, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে নারীদের কাজ করতে দেবে না, ঘর থেকে বের হতে দেবে না। আমরা বোনদের নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে চাই, নারীরা তাদের যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে কাজ করবে।”

আরো পড়ুন:

‘অসাবধানতাবশত ভুল শব্দ চয়ন’, জামায়াত আমিরের দুঃখ প্রকাশ

প্রতিহিংসার রাজনীতিতে শান্তি আসতে পারে না: জামায়াত আমির

“আজকে দেশে তাদের সম্মান, মর্যাদা, নিরাপত্তা নেই। আমরা ক্ষমতায় গেলে এই রাষ্ট্রে তাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ইনশাল্লাহ”।

দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ শ্রমজীবী। তাদের অধিকার উপেক্ষা করে কোনো সমাজ-দেশ এগিয়ে যেতে পারে না জা‌নি‌য়ে জামায়াত আমির বলেন, “এই কাঙ্ক্ষিত সমাজ ব্যবস্থা গড়তে হলে পারস্পরিক সম্মান-শ্রদ্ধা-ভালোবাসা দিয়েই গড়তে হবে। নারী পুরুষ সবাই মিলে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে দেশের উন্নয়নে ও স্থিতিশীল গতিশীলতার জন্য, সাম্যের সমাজ গড়ার জন্য আমরা কাজ করব। এই চেষ্টা সেদিনই আমাদের থামবে, যখন ঘরে ঘরে সুখ শান্তি আসবে বলে।”

শফিকুর রহমান বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় যারা উদ্যোক্তা তারা বিভিন্ন ভাবে তাদের শ্রমিক সহকর্মী ও কর্মচারীদের উপযুক্ত মূল্যায়ন করেন না, শ্রমের মর্যাদা দেন না, কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করেন না। আবার তারা যেমন শ্রমিকদের নির্যাতন করেন, তেমনি আবার তারা চাঁদাবাজদের হাতে নির্যাতিত হন। চাঁদাবাজরা নানারূপ নিয়ে হাজির হয়। চাঁদাবাজরা দিবস পালনের নামে এমনকি আজকের দিবসটি নিয়েও তারা হাজির হয়েছে। এই দ্বন্দ্ব কতদিন চলবে।”

“আমরা চাই মালিকপক্ষ এটা বুঝবে। শ্রমিক বাঁচলে আমার শিল্প বাঁচবে, শ্রমিকও বাঁচবে। শ্রমিক না বাঁচলে শিল্প বাঁচে না। আবার শ্রমিকদেরও বুঝতে হবে উদ্যোক্তা-মালিক-শিল্পপতিরা যদি বাঁচে তাহলে সে নিজেও বাঁচবে। কারণ কর্মস্থলই যদি ধ্বংস হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে দাবিটা উত্থাপন করব কার কাছে? সেজন্য শ্রমিকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে,” যোগ ক‌রেন তি‌নি।

টেকসই শান্তির বাংলাদেশ গড়তে পরস্পরকে হাতে হাত রেখে সম্মান ও ভালোবাসা দিয়ে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে জা‌নি‌য়ে শ‌ফিকুর রহমান ব‌লেন, “যেদিন মালিকরা শ্রমিকদের দরদ দিয়ে মন দিয়ে ভালোবাসা সম্মান দেবেন, তারা নিশ্চিত থাকতে পারেন, শ্রমিকরা ষোলআনা শক্তি উজাড় করে মালিকের পক্ষেই থাকবে। আবার শ্রমিক যদি মনে করে না, আমার মালিক আমাকে মানুষই মনে করে না, তাহলে সে আর দায়িত্ব নিয়ে কিছু করবে না। এক্ষেত্রে উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এজন্য শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কাজই হলো মালিক ও শ্রমিকের সমন্বয়ে দরদি ও পারস্পরিক সম্মানের সমাজ গড়তে চায়।”

“আমরা টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই। মালিক-শ্রমিকদের সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাই। কিন্তু এটা আল্লাহর আইন ছাড়া কোনো কিছু দিয়ে সম্ভব নয়। এটা দুনিয়াতে প্রমাণিত সত্য,” ব‌লেন তি‌নি।

শ্রমিক‌দের দুঃখ দুর্দশা তু‌লে ধ‌রে জামায়াত আমির ব‌লেন, “শ্রমিকদের কোথাও কোথাও অথবা অধিকাংশ জায়গায় হয়তো আট ঘণ্টা কর্ম আছে। কিন্তু এজন্য তাদের হাতে যে ভাতা, বেতন তুলে দেওয়া হয় তা দিয়ে তার নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। বাধ্য হয়ে এক জায়গায় আট ঘণ্টা কাজ করে আরেক জায়গায় আরো কাজ করে। সে তো মানুষ। মেশিন না। তারও পরিবার আছে, পরিবারকে সময় দিতে হয়, মন, শরীর আছে। চাপ, ক্লান্তি আছে। কিন্তু তাদের জীবনটা হয়ে গেছে অমানবিক জীবন। আমরা এটার অবসান চাই। এটা তখনই ঘটবে যখন আমরা সত্যিকার অর্থে মানুষ হিসেবে আরেকজনকে সম্মান শ্রদ্ধা করব।”

নারী‌দের কারখানায় নামা‌জের ব‌্যবস্থা রাখার আহ্বান জা‌নি‌য়ে শ‌ফিকুর রহমান ব‌লেন, “ইন্ডাস্ট্রিতে পুরুষের জন্য নামাজের ব্যবস্থা ছোট্ট করে হলেও রাখা হয়। কিন্তু মা-বোনদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা রাখা হয় না। মালিকের প্রতি অনুরোধ করে বলব, যারা নামাজ পড়তে চায় তাদের সে ব্যবস্থা করে দেবেন। তাদের ইবাদতে আপনারা অংশীদার হোন।”

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল। 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ