দিপুর পরিবারের দায়িত্ব নিলেন জামায়াতের আমির
Published: 26th, February 2025 GMT
পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে বাবা-মাকে হারানো ছোট্ট দিপুর পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেয়ার সময় পরিবারটির দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
দিপুদের বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙা ইউনিয়নের ছত্রশিকারপুর হাতিডুবা গ্রামে। সেখানে অন্যের জমিতে বাস করেন তারা। বড়ভাই দীপন ও পরিতোষই এখন তার অভিভাবক।
২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। সেদিন বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বোদেশ্বরী মন্দিরে ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহালয়া উৎসব। তিন বছরের দিপু ওই উৎসবে যেতে বাবা-মায়ের সঙ্গে রওনা হয় করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটের দিকে। ঘাটের অপরপ্রান্তেই বদেশ্বরী মন্দির। কিন্তু মন্দিরে পৌঁছার আগেই সেদিন ঘটে এক বিরাট বিপর্যয়। শতাধিক যাত্রী নিয়ে করতোয়ার বুকে তলিয়ে যায় নৌকা।
এ ঘটনায় মৃত্যুপুরী হয় করতোয়ার পাড়। অলৌকিকভাবে বেঁচে ফেরে ছোট্ট দিপু। একদিন পর তার মা রূপালী রানীর লাশ মেলে। একইভাবে প্রায় দেড়মাস পর পাওয়া যায় তার বাবা ভূপেন্দ্রনাথ রায়ের লাশও।
জামায়াতের আমির বক্তব্যে বলেন, “নৌকাডুবিতে ৭২ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। আমরা আমাদের সাধ্যমত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহযোগিতার চেষ্টা করেছিলাম। তখন এই ছোট্ট দিপুকে কোলে নেয়ার সুযোগ হয়েছিল। আমরা চেয়েছিলাম সে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তার দায়িত্ব আমরা নেব। পরে আমি দেখলাম এই এলাকার তৎকালীন সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী মন্ত্রী ও তার স্ত্রী দিপুর দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আমি খুশি হয়েছিলাম।”
তিনি বলেন, “আজকে দিপুর ভাই পরিতোষকে জিজ্ঞেস করে জানলাম তারা মাঝে মধ্যে জামকাপড় দেওয়া ছাড়া কোন অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেননি। অর্থ ছাড়া দিপু খাবে কী? তার পড়ালেখার কী হবে? আলহামদুলিল্লাহ আজকে দিপুকে আবার কোলে নিয়েছি। এই দিপু যতদিন প্রাপ্তবয়স্ক না হবে তার লেখাপড়া চলবে। আমরা এই পরিবারের কাছে প্রতিমাসের ১ তারিখে এসে হাজির হব।”
এ সময় দিপু, তার বড়ভাই পরিতোষ, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন, জাগপা সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী, ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন প্রধান, ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা আব্দুল হাকিম, নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার, জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার মাহমুদ আল মামুন হিমু, তোফায়েল প্রধান, পঞ্চগড় জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী, পঞ্চগড় জেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মীর মোর্শেদ তুহিন, বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট পার্টির সভাপতি মাসুদুর রহমান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সেই নৌকাডুবিতে ৭২ জনের প্রাণহানি হয়। এর মধ্যে ৭১ জনই ছিলেন হিন্দু ধর্মের। ঘটনার পরদিন জামায়াতের আমির ডা.
ঢাকা/নাঈম/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ম য় ত র আম র র রহম ন পর ব র করত য়
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক