ছিনতাইকারী ও ডাকাত ধরতে বিশেষ নির্দেশনা
Published: 27th, February 2025 GMT
রাজধানীর বনশ্রীতে সোনা ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণালংকার লুটের ঘটনার পর সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চলছে। তবে বনশ্রীর যে ঘটনা ঘিরে এই অভিযান জোরদার হলো, সে ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। উদ্ধার হয়নি লুট হওয়া স্বর্ণালংকার।
এদিকে ছিনতাইকারী, ডাকাত ও চোর ধরতে সারা দেশে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। তবে এরপরও ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির ঘটনা ঘটছে। মঙ্গলবার ভোরে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে শিক্ষাসফরের চারটি বাস ডাকাতির কবলে পড়েছে। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি স্থানে ছিনতাই ও ডাকাতির খবর পাওয়া গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে থানা ও গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের বিশেষায়িত বিভিন্ন ইউনিট সাঁড়াশি অভিযানে অংশ নিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় অপারেশন ডেভিল হান্টে সারা দেশে ৬৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সময়ে শুধু রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ২৯ জন ডাকাত, ২৮ জন পেশাদার সক্রিয় ছিনতাইকারী, ৬ জন চাঁদাবাজ এবং ১০ জন চোরকে গ্রেপ্তারের খবর জানিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুনবনশ্রীতে গুলি করে স্বর্ণালংকার লুটের ভিডিও ভাইরাল, ‘ও আম্মা গো’ বলে বারবার চিৎকার২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫গত দুই দিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কিশোর গ্যাং সদস্যসহ ৫১ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় মানুষ ছিনতাইকারী ও ডাকাত চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। এই কাজ করতে গিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় গণপিটুনির ঘটনাও ঘটছে।
মঙ্গলবার রাতে গাজীপুরের টঙ্গীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটুনিতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। একই রাতে উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার বিএনএস ভবনের সামনে ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুজনকে গণপিটুনি দিয়ে উল্টো করে পদচারী–সেতুতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাঁরা এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আরও পড়ুন‘তিনটি মোটরসাইকেলে ৭ জন এসে গুলি করে, তখন দৌড়াতে থাকি’২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫অভিযান চলছে, রয়েছে আতঙ্ক-ক্ষোভ
চলতি মাসের শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হতে থাকে। ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী একটি বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘিরে তা নতুনভাবে আলোচনায় আসে। এই ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই ও ডাকাতির অনেকগুলো ভিডিও এবং খবর ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ রোববার দিবাগত রাতে রাজধানীর বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণালংকার লুটের ঘটনা ঘটে।
বনশ্রীর ছিনতাইয়ের ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি ওঠে। পরদিন থেকে শুরু হয় সাঁড়াশি অভিযান। কেবল রাজধানীতেই গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০টি থানা এলাকায় ৫০০টি টহল দল দায়িত্ব পালন করে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তল্লাশিচৌকি ও টহল বাড়ানোর পাশাপাশি গোয়েন্দা কার্যক্রমও জোরদার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ছিনতাই-ডাকাতির মতো অপরাধ দমনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুনউত্তরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে দুজনকে পিটুনির পর ফুটওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখা হয় উল্টো করে২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫তবে অভিযান জোরদারে মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও আতঙ্ক ও ক্ষোভও রয়েছে। বনশ্রীতে অলংকার জুয়েলার্সের মালিক আনোয়ার হোসেনের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
খিলগাঁও, সবুজবাগ, রামপুরা ও শাহজাহানপুর এলাকার জুয়েলারি মালিক সমিতির সভাপতি মো.
অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে
ডিএমপি জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ৬৫টি তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করা হয়েছে। অপরাধপ্রবণ স্থানে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) ১৪টি, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) ১২টি এবং ডিএমপির সঙ্গে র্যাবের ১০টি টহল দল দায়িত্ব পালন করে। এ ছাড়া ডিএমপির চেকপোস্টের পাশাপাশি পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এপিবিএন রাজধানীতে ২০টি চেকপোস্ট পরিচালনা করে।
তবে অপরাধবিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমালোচনার মুখে অভিযান জোরদার করলেই সংকট কেটে যাবে, তা নয়। অভিযানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। যেসব অপরাধীকে ধরা হচ্ছে, তাদের ওপরও নজরদারি রাখতে হবে। গণপিটুনিও বন্ধ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অপরাধ মোকাবিলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অপরাধীর জন্য অনুকূল পরিবেশ না রাখা। এ জন্য অপরাধীদের ধরার পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে, যেন তারা আবার অপরাধে জড়াতে না পারে। মানুষের মনে স্বস্তি ফেরাতে ছিনতাই-ডাকাতির মতো অপরাধ দমনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে স্থায়ী অপরাধ প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
আরও পড়ুন‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে’২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বর ণ ল ক র ব যবস য় বনশ র ত ড এমপ ইউন ট র ঘটন অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।