অর্থনৈতিক লেনদেনে ব্যাংক কার্ড যেন আধুনিক জীবনের প্রতিদিনের সঙ্গী। কার্ডনির্ভর লেনদেনে জীবন এখন হয়েছে অনেকটাই সহজ ও নিরাপদ। তাই ক্রমশ এগুলোর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে কেনাকাটা, দেশে বা বিদেশে অনলাইন পেমেন্ট ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ড এবং ভিসা কার্ডের চাহিদা বর্তমানে অনেক বেশি। তবে অনেকেই একটি ব্যাপার নিয়ে বেশ দ্বিধায় থাকেন, তা হলো কোনটি সবচেয়ে ভালো হবে—মাস্টারকার্ড নাকি ভিসা কার্ড? এর জন্য প্রথমেই আপনাকে এই দুধরনের কার্ডের পার্থক্য সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলেই বুঝতে পারবেন, কোনটি আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী।

কোন কার্ড কীভাবে কাজ করে

মাস্টারকার্ড ও ভিসা কার্ড সরাসরি অর্থ প্রদান করলেও এগুলো আসলে কোনো ব্যাংক নয়। এগুলো মূলত আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক, যারা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্বে কাজ করে। যখন কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে মাস্টার বা ভিসা কার্ড করা হয়, তখন সেই কার্ড ওই নির্দিষ্ট পেমেন্ট নেটওয়ার্কের আওতায় কাজ করে। অর্থাৎ একটি পণ্য কিনে মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে পেমেন্ট করা হলে ইস্যুকারী ব্যাংক মাস্টারকার্ড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিক্রেতার ব্যাংকে টাকা পাঠায়। ভিসা কার্ডের ক্ষেত্রেও প্রক্রিয়াটি প্রায় একই।

মাস্টারকার্ড ও ভিসা কার্ডের মূল পার্থক্য

গ্রহণযোগ্যতা: ভিসা কার্ড বিশ্বের ২০০টির মতো দেশে গ্রহণযোগ্য, অন্যদিকে মাস্টারকার্ড ২১০টি দেশে কার্যকর। তবে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে একটির গ্রহণযোগ্যতা অন্যটির তুলনায় বেশি হতে পারে।

নিরাপত্তাব্যবস্থা: ভিসা কার্ড ‘ভিসা সিকিউর’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা অনলাইন লেনদেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে ‘মাস্টারকার্ড সিকিউর কোড’, যা দ্বারা সুরক্ষা প্রদান করে। উভয় প্রযুক্তি ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড এবং এনক্রিপশন ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষিত রাখে।

ফি ও চার্জ: মাস্টারকার্ড ও ভিসা কার্ডের চার্জ মূলত নির্ভর করে ইস্যুকারী ব্যাংকের ওপর। তবে সাধারণত মাস্টারকার্ড কিছু ক্যাটাগরিতে বেশি ক্যাশব্যাক ও অফার দিয়ে থাকে, যেখানে ভিসা কার্ড কম খরচে লেনদেনের জন্য বেশি জনপ্রিয়।

বিশেষ সুবিধা: মাস্টারকার্ড সাধারণত অনলাইন কেনাকাটায় বেশি ক্যাশব্যাক ও ছাড় দেয়। এ ছাড়া প্লাটিনাম বা ওয়ার্ল্ড মাস্টারকার্ড ব্যবহারকারীরা ফ্রি লাউঞ্জ অ্যাকসেস, বিশেষ ভ্রমণসুবিধা এবং বিভিন্ন প্রিমিয়াম অফার পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে ভিসা কার্ড আন্তর্জাতিকভাবে বেশি গ্রহণযোগ্য এবং বিদেশে লেনদেনের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম চার্জ নেয়। কিছু নির্দিষ্ট ব্যাংকের ভিসা সিগনেচার বা ইনফিনিট কার্ড ব্যবহারকারীরা হোটেল বুকিং, বিমানের টিকিট এবং অন্যান্য প্রিমিয়াম সেবা পেতে পারেন।

আপনার জন্য কোনটি

নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড নির্বাচন করাই সবচেয়ে ভালো। যদি আপনি বেশি ক্যাশব্যাক ও অনলাইন ডিসকাউন্ট চান, তবে মাস্টারকার্ড আপনার জন্য বেশি কার্যকর। আর আপনি যদি ঘন ঘন দেশের বাইরে ভ্রমণ করেন এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা চান, তবে ভিসা কার্ড ব্যবহার করাই উত্তম। সেই সঙ্গে ব্যাংকের অফার ও চার্জ বিবেচনা করাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একই ধরনের কার্ড হলেও ব্যাংকভেদে সুবিধা ভিন্ন হতে পারে।

নিরাপত্তা ও সতর্কতা

কার্ড ব্যবহারের সময় কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন—

• অনলাইনে কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ করা থেকে বিরত থাকুন।

• সন্দেহজনক লেনদেন দেখলে দ্রুত ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

• নিয়মিত ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেক করুন এবং প্রয়োজন হলে কার্ডের লিমিট সেট করুন।

মাস্টারকার্ড ও ভিসা কার্ডের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য খুব বেশি না থাকলেও নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে একটির তুলনায় অন্যটি সুবিধাজনক হতে পারে। আপনি যদি অনলাইন কেনাকাটা ও ক্যাশব্যাকের সুবিধা চান, তবে মাস্টারকার্ড আপনার জন্য ভালো। অন্যদিকে অধিক আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা ও লেনদেন–সুবিধার জন্য ভিসা কার্ড একটি ভালো বিকল্প। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চার্জ ও সুবিধাগুলো যাচাই করা উচিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক র ড ব যবহ র গ রহণয গ য ব যবহ র কর ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অন্তর্বর্তী সরকার না চাইলে ‘মব সন্ত্রাসের’ ঘটনাগুলো ঘটতে পারত না: বাম গণতান্ত্রিক জোট

গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে যে ‘মব’ সন্ত্রাসের শুরু হয়েছিল, সেটা এখনো চলছে এবং নগ্ন রূপ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। অন্তর্বর্তী সরকার না চাইলে এমন ঘটনাগুলো ঘটতে পারত না বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁরা। জোটের নেতারা বলেছেন, মব নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাব এমন যে খারাপ কিছু তো করছে না।

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা এ কথা বলেন। মব সন্ত্রাস ও মাজার-খানকায় হামলা বন্ধসহ সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যথাসময়ে নির্বাচনের দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাম জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর যে মব শুরু হয়েছিল, সেই মব এখনো দূর হয়নি। বরং নগ্ন রূপ নিয়েছে।...তাহলে ইউনূস সাহেব (প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) তখন কী করলেন?’

সরকার না চাইলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না মন্তব্য করে রুহিন হোসেন বলেন, মব নিয়ে সরকারের উপদেষ্টারা আকারে-ইঙ্গিতে যা বলেন, তাতে ভাবটা এ রকম যে খারাপ কিছু করছে না। অন্তর্বর্তী সরকার এসব ঘটনার দায় এড়াতে পারবে না।

দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংস্কারের নামে শ্রমিক–কৃষক–মেহনতি মানুষের স্বার্থ রক্ষা করছেন না, কিন্তু সংবিধানের চার মূলনীতি পরিবর্তন করতে চান। অবিলম্বে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

‘মব’ সন্ত্রাস ও মাজার-খানকায় হামলা বন্ধসহ সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যথাসময়ে নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা–কর্মীরা। আজ সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংগীতশিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবি গ্রহণযোগ্য নয়: আসক
  • রাকসু নির্বাচন: ৬ দফা দাবিতে ছাত্রদলের স্মারকলিপি
  • অন্তর্বর্তী সরকার না চাইলে ‘মব সন্ত্রাসের’ ঘটনাগুলো ঘটতে পারত না: বাম গণতান্ত্রিক জোট