মাস্টারকার্ড বনাম ভিসা কার্ড: আপনার জন্য কোনটি
Published: 27th, February 2025 GMT
অর্থনৈতিক লেনদেনে ব্যাংক কার্ড যেন আধুনিক জীবনের প্রতিদিনের সঙ্গী। কার্ডনির্ভর লেনদেনে জীবন এখন হয়েছে অনেকটাই সহজ ও নিরাপদ। তাই ক্রমশ এগুলোর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে কেনাকাটা, দেশে বা বিদেশে অনলাইন পেমেন্ট ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ড এবং ভিসা কার্ডের চাহিদা বর্তমানে অনেক বেশি। তবে অনেকেই একটি ব্যাপার নিয়ে বেশ দ্বিধায় থাকেন, তা হলো কোনটি সবচেয়ে ভালো হবে—মাস্টারকার্ড নাকি ভিসা কার্ড? এর জন্য প্রথমেই আপনাকে এই দুধরনের কার্ডের পার্থক্য সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলেই বুঝতে পারবেন, কোনটি আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী।
কোন কার্ড কীভাবে কাজ করে
মাস্টারকার্ড ও ভিসা কার্ড সরাসরি অর্থ প্রদান করলেও এগুলো আসলে কোনো ব্যাংক নয়। এগুলো মূলত আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক, যারা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্বে কাজ করে। যখন কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে মাস্টার বা ভিসা কার্ড করা হয়, তখন সেই কার্ড ওই নির্দিষ্ট পেমেন্ট নেটওয়ার্কের আওতায় কাজ করে। অর্থাৎ একটি পণ্য কিনে মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে পেমেন্ট করা হলে ইস্যুকারী ব্যাংক মাস্টারকার্ড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিক্রেতার ব্যাংকে টাকা পাঠায়। ভিসা কার্ডের ক্ষেত্রেও প্রক্রিয়াটি প্রায় একই।
মাস্টারকার্ড ও ভিসা কার্ডের মূল পার্থক্যগ্রহণযোগ্যতা: ভিসা কার্ড বিশ্বের ২০০টির মতো দেশে গ্রহণযোগ্য, অন্যদিকে মাস্টারকার্ড ২১০টি দেশে কার্যকর। তবে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে একটির গ্রহণযোগ্যতা অন্যটির তুলনায় বেশি হতে পারে।
নিরাপত্তাব্যবস্থা: ভিসা কার্ড ‘ভিসা সিকিউর’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা অনলাইন লেনদেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে ‘মাস্টারকার্ড সিকিউর কোড’, যা দ্বারা সুরক্ষা প্রদান করে। উভয় প্রযুক্তি ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড এবং এনক্রিপশন ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষিত রাখে।
ফি ও চার্জ: মাস্টারকার্ড ও ভিসা কার্ডের চার্জ মূলত নির্ভর করে ইস্যুকারী ব্যাংকের ওপর। তবে সাধারণত মাস্টারকার্ড কিছু ক্যাটাগরিতে বেশি ক্যাশব্যাক ও অফার দিয়ে থাকে, যেখানে ভিসা কার্ড কম খরচে লেনদেনের জন্য বেশি জনপ্রিয়।
বিশেষ সুবিধা: মাস্টারকার্ড সাধারণত অনলাইন কেনাকাটায় বেশি ক্যাশব্যাক ও ছাড় দেয়। এ ছাড়া প্লাটিনাম বা ওয়ার্ল্ড মাস্টারকার্ড ব্যবহারকারীরা ফ্রি লাউঞ্জ অ্যাকসেস, বিশেষ ভ্রমণসুবিধা এবং বিভিন্ন প্রিমিয়াম অফার পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে ভিসা কার্ড আন্তর্জাতিকভাবে বেশি গ্রহণযোগ্য এবং বিদেশে লেনদেনের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম চার্জ নেয়। কিছু নির্দিষ্ট ব্যাংকের ভিসা সিগনেচার বা ইনফিনিট কার্ড ব্যবহারকারীরা হোটেল বুকিং, বিমানের টিকিট এবং অন্যান্য প্রিমিয়াম সেবা পেতে পারেন।
আপনার জন্য কোনটি
নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড নির্বাচন করাই সবচেয়ে ভালো। যদি আপনি বেশি ক্যাশব্যাক ও অনলাইন ডিসকাউন্ট চান, তবে মাস্টারকার্ড আপনার জন্য বেশি কার্যকর। আর আপনি যদি ঘন ঘন দেশের বাইরে ভ্রমণ করেন এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা চান, তবে ভিসা কার্ড ব্যবহার করাই উত্তম। সেই সঙ্গে ব্যাংকের অফার ও চার্জ বিবেচনা করাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একই ধরনের কার্ড হলেও ব্যাংকভেদে সুবিধা ভিন্ন হতে পারে।
নিরাপত্তা ও সতর্কতাকার্ড ব্যবহারের সময় কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন—
• অনলাইনে কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ করা থেকে বিরত থাকুন।
• সন্দেহজনক লেনদেন দেখলে দ্রুত ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
• নিয়মিত ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেক করুন এবং প্রয়োজন হলে কার্ডের লিমিট সেট করুন।
মাস্টারকার্ড ও ভিসা কার্ডের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য খুব বেশি না থাকলেও নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে একটির তুলনায় অন্যটি সুবিধাজনক হতে পারে। আপনি যদি অনলাইন কেনাকাটা ও ক্যাশব্যাকের সুবিধা চান, তবে মাস্টারকার্ড আপনার জন্য ভালো। অন্যদিকে অধিক আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা ও লেনদেন–সুবিধার জন্য ভিসা কার্ড একটি ভালো বিকল্প। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চার্জ ও সুবিধাগুলো যাচাই করা উচিত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক র ড ব যবহ র গ রহণয গ য ব যবহ র কর ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন: জামায়াতে ইসলামী
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাভাবিক বললেও, দুইজনের যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জামায়াতে ইসলামী।
শনিবার জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের পর বিবৃতিতে দলটি বলেছে, ‘যৌথ বিবৃতি প্রদান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে আমরা মনে করি। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে।’
দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ‘১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাকে জামায়াত খুবই স্বাভাবিক মনে করে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে এবং যৌথভাবে বৈঠক করেছেন।’
লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে জামায়াত বলেছে, ‘গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা। তার এই ঘোষণার পর লন্ডন সফরে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে জামায়াত মনে করে। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে।’
লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। জামায়াত এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা মনে করি দেশে ফিরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল।’
জামায়াত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিরোধী নয় বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘গত ১৬ এপ্রিল জামায়াত আমির দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরে জানিয়েছিলেন ২০২৬ সালের রসজানের পূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জামায়াত মনে করে সরকার প্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে কিছুতেই যথার্থ নয়। প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান, সেখানে শুধু একটি দলের সঙ্গে আলাপে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না। জামায়াত আশা করে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে। সরকারের নিরপেক্ষতা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা জাতির সামনে স্পষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের দিন জামায়াত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমকালকে বলেছিলেন, ‘জামায়াতই প্রথম বলেছে, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই নির্বাচনের যে নতুন সময়সীমা বলা হচ্ছে, এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সরকার যেভাবে শুধু বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য।’
জামায়াত নেতারা শুক্রবার রাতেই সমকালকে বলেছিলেন, যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে– সরকার এবং বিএনপি সমশক্তি। এর পর আর সরকারের নিরপেক্ষতা থাকে না। এ বক্তব্য ড. ইউনূসকে জানাবে জামায়াত।