কোনো গাড়িতেই নেই ডিম নামেমাত্র গরুর মাংস
Published: 2nd, March 2025 GMT
পবিত্র রমজান উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সুলভ মূল্যে মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রির দ্বিতীয় দিন ছিল গতকাল শনিবার। রাজধানীর খামারবাড়ির সামনে সুলভ মূল্যের পণ্যের ভ্রাম্যমাণ ফ্রিজিং ভ্যানে বেলা ১১টায় গিয়ে দেখা যায় ৯ জন লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের সবার আগ্রহ গরু ও খাসির মাংস নিয়ে। কিন্তু এবার খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে না। গরুর মাংস ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। তাই অনেকেই খালি হাতে ফিরে গেছেন। গরুর মাংস শেষ হওয়ার পরপরই ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে আর ভিড় দেখা যায়নি। গতকাল ঢাকার সাতটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোনো বিক্রয়কেন্দ্রেই ডিম নেই। সব স্থানেই গরুর মাংস শেষ হয়ে গেছে কিছুক্ষণের মধ্যে। ব্রয়লার মুরগি আর দুধ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে বিক্রয়কর্মীদের।
রমজান উপলক্ষে ঢাকার ২৫টি এলাকায় গরু ও মুরগির মাংস, ডিম ও দুধ বিক্রি করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এবার গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা, ড্রেসড (চামড়া ছাড়া) ব্রয়লার প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও ডিম প্রতি ডজন ১১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য বছর দৈনিক প্রায় ৫ হাজার কেজি গরুর মাংস বিক্রি হলেও এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১ হাজার কেজি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রথম দিনে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫০০ কেজির মতো। গতকাল গরুর মাংস দেওয়া হয় ১ হাজার কেজির কম। অথচ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছিল, দৈনিক ২ হাজার ৫০০ কেজি মাংস দেওয়া হবে। পাশাপাশি এ বছর বিক্রয়কেন্দ্রের আওতা কমেছে। গত বছর রাজধানীর ৩০ এলাকা, পাঁচটি বাজারে সুলভ মূল্যে মাছ, দুধ, ডিম, মুরগি, গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে। এ বছর মাছও বিক্রি হচ্ছে না। বাজারে গরু ও খাসির উচ্চ মূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত মানুষের ভরসা ছিল ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র। গত বছর গরু ৬০০ ও খাসির মাংস ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। গত বছর ৬ লাখ মানুষ ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের সুবিধা পেয়েছেন।
গতকাল কড়াইল বস্তি এলাকায় যাওয়া গাড়িতে সামান্য গরুর মাংস বরাদ্দ দেওয়া হয়। বস্তির আনসার ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা মারুফা বেগম বলেন, পণ্য কেনার জন্য এলাম; কিন্তু ডিম ও গরুর মাংস পেলাম না। মুরগি ও দুই লিটার দুধ কিনেছি।
আনসার ক্যাম্পের বাসিন্দা আব্দুর রহমান ডিম কিনতে চেয়েছিলেন বলে জানালেন। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল ডিম কিনমু। কিন্তু তারা তো আজকে ডিম আনেই নাই। গরিবের তো ডিমও দরকার।’
মোহাম্মদপুরের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র থেকে এক কেজি করে গরু ও ড্রেসড ব্রয়লার এবং দুই লিটার দুধ, এক ডজন ডিম কেনেন আদাবরের বাসিন্দা কুতুব উদ্দিন। কুতুব উদ্দিন বলেন, গত বছরও সুলভমূল্যে একাধিকবার মাংস ও অন্যান্য পণ্য কিনেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এ বছরও কিনতে এসেছি। মাংস মোটামুটি ঠিক আছে। তবে চর্বি ও হাড়ের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। দামও গত বছরের চেয়ে ৫০ টাকা বেশি। বাজারে গরুর মাংসের দাম ৭৫০ টাকা। পুরান ঢাকার একজন কসাই গরুর মাংস বিক্রি করছেন মাত্র ৫৮০ টাকায়। সে ক্ষেত্রে সরকারি মাংসের দাম বেশি হয়ে গেছে। দাম কমানো উচিত।
বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি চাহিদা গরুর মাংসের। চাহিদার তুলনায় বিক্রয়কেন্দ্রে পণ্য কম থাকায় লাইনে দাঁড়িয়েও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অনেককে। বিক্রয়কেন্দ্রে গরুর মাংসের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন ক্রেতা।
মোহাম্মদপুর বিক্রয়কেন্দ্রে ক্রেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, সুলভে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ ভালো। কিন্তু গাড়িতে গরুর মাংসের পরিমাণ খুব কম। এক ঘণ্টাও হয়নি গাড়ি এসেছে। এখন শুনছি গরুর মাংস শেষ। মাংস শেষ শুনে অনেকে লাইন ছেড়ে চলে গেছেন। গাড়িগুলোতে মাংসের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিলে কাউকে আর খালি হাতে ফিরতে হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) পরিচালক ডা.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গর র ম স স র পর ম ণ গত বছর সমস য গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়
শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ কবে হবে, সে বিষয়ে আর সময়সীমার কথা বলছে না শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এ অধ্যাদেশ হবে। মার্চ শেষে এপ্রিলও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।
সচিবালয়ে আজ ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে সময়সীমা থাকার পক্ষে নন তিনি। শ্রমিক–মালিকদের স্বার্থ রক্ষাসহ শিগগিরই তা করা হবে। বিষয়টি এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে, তা বলতে রাজি হননি শ্রম উপদেষ্টা।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় স্লোগান ছিল দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’ এখন তা বদলে গেছে। এখন হবে ‘দুনিয়ার মালিক-শ্রমিক, এক হও’। এখন ভালো মালিকেরা শ্রমিকদের সন্তানের মতো মনে করেন।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ১০১টি ধারা ও উপধারা সংশোধন হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০ থেকে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
আইএলওর বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি জেনেভা সফর করে, সেখানে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন সরকার ও শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে। উপদেষ্টা তখন এ–ও বলেছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা করা হয়েছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।
জানা গেছে, শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো চলমান।
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদিকে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) শ্রমিকপক্ষ জানিয়েছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মে দিবস আর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ–স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।
এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।