ভাষা পরীক্ষা ও মূল্যায়নের ওপর ব্রিটিশ কাউন্সিলের দুই দিনব্যাপী ফ্ল্যাগশিপ সম্মেলন শেষ হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি ‘নিউ ডিরেকশনস সাউথ এশিয়া ২০২৫’ শীর্ষক এই সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান অংশ নিয়েছে।

ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংরেজি ভাষা গবেষণার পরিচালক অধ্যাপক ব্যারি ও’সুলিভান ওবিই সম্মেলনের থিম ‘প্রযুক্তি ও ঐতিহ্য: ইংরেজি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থায় মূল্যায়নের পরিবর্তনশীল চেহারা’ শীর্ষক মূল বক্তব্য দেন।

ইংরেজি একটি অত্যাবশ্যক বৈশ্বিক ভাষা, যা বিশ্বব্যাপী শিক্ষা ও কর্মজীবনের অগ্রগতিতে কার্যকর চাহিদা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য—উভয়ই চালিত করে। উন্নত মানের ইংরেজি ভাষা পরিষেবা, পরীক্ষা প্রদানের দক্ষতাসহ দক্ষিণ এশিয়ার ইংরেজিজ্ঞানের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সমর্থনের জন্য ভালো অবস্থানে আছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। প্রথমবারের মতো নিউ ডিরেকশনসের দক্ষিণ এশীয় সংস্করণ এ অঞ্চলে ইংরেজি ভাষার মূল্যায়নের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রাখবে।

ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্মেলনটি বহুভাষিক ও আন্তসংযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবিলার জন্য একটি অনন্য সুযোগ দিয়ে এই অঞ্চলের অংশগ্রহণকারীদের একত্র করেছে। এই দুই দিনে শিক্ষার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নেতারা নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক ও মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞদের জন্য একটি সহযোগী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে একত্র হন।

আলোচনাগুলোর মূল বিষয় ছিল চারটি। এগুলো হলো— ১.

চাকরির জন্য ইংরেজি ২. ইংরেজি শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ৩. তরুণ শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ৪. বহুভাষিক শিক্ষা প্রসঙ্গে ইংরেজির ভূমিকা

সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে দুজন প্রতিনিধি অংশ নেন। এই দুজন হলেন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক জেসমিন আরা ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক শিলু আরা। জেসমিন আরা দেশে, বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে নারীদের ইংরেজিতে যোগাযোগ, প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়নের সুযোগ বাড়ানোর ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। আর শিলু আরার দৃষ্টি ছিল কাজের জন্য বিদেশে পাড়ি জমানো বাংলাদেশিদের ইংরেজিতে যোগাযোগের দক্ষতা উন্নত করা এবং তা প্রমাণ করা। শিলু আরা দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা প্রশিক্ষণের ভূমিকা নিয়ে একটি চিন্তা-উদ্দীপক প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।

ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি এক্সাম ডিরেক্টর ম্যাক্সিম রাইম্যান বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন দিকনির্দেশনার আয়োজন করে আমরা এই অঞ্চলের চিন্তাশীল নেতাদের ডেকেছি, যেন আমরা দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ ভাষাকে শক্তিশালী করে তুলতে পারি। আমরা ক্রমবর্ধমান বহুভাষিক ও প্রযুক্তিচালিত বিশ্বে উন্নতির জন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যকে শক্তিশালী করতে থাকি।’
ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংরেজি ভাষা গবেষণার পরিচালক প্রফেসর ব্যারি ও’সুলিভান ওবিই বলেছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন দিকনির্দেশনার সূচনা বিশ্বব্যাপী ইংরেজি ভাষার মূল্যায়নে উদ্ভাবনের যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক চিহ্নিত করে। এখানে উন্মোচিত সমৃদ্ধ আলোচনাগুলো দেখায় যে কীভাবে চিন্তা-নেতা, শিক্ষাবিদদের একত্র করা এবং একটি আন্তসংযোগ নীতির ওপর আন্তসংযোগ নীতি তৈরি করা হয়। প্রযুক্তি ও ঐতিহ্য এই সহযোগিতামূলক প্ল্যাটফর্ম নিশ্চিত করে যে আমাদের মূল্যায়ন অনুশীলনগুলো আজকের দ্রুত পরিবর্তিত বিশ্বে শিক্ষার্থীদের চাহিদার সঙ্গে ধাপে ধাপে বিকশিত হচ্ছে।’

অধ্যাপক ব্যারি ও’সুলিভান ওবিই বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন দিকনির্দেশের সূচনা বিশ্বব্যাপী ইংরেজি ভাষার মূল্যায়নে উদ্ভাবনের যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যের এই সহযোগিতামূলক প্ল্যাটফর্ম নিশ্চিত করে, আমাদের মূল্যায়ন অনুশীলনগুলো দ্রুত পরিবর্তিত বিশ্বে শিক্ষার্থীদের চাহিদার সঙ্গে ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে।’

এদিকে ‘তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাষা শেখার মূল্যায়নের চ্যালেঞ্জ ও পদ্ধতির’ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ফলিত ভাষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের পরিচালক ভিক্টোরিয়া মারফি বলেছেন, ‘নিউ ডিরেকশনস সাউথ এশিয়ার আলোচনাগুলো তরুণ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য কাজে লাগবে।’

২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২টি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন, ৪টি প্যানেল আলোচনা ও ৩০টির বেশি সমান্তরাল অধিবেশন ছিল। ২৫০ জন ব্যক্তি এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। এই দুই দিনের সম্মেলনে ইংরেজি ভাষার দক্ষতার মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ানো, ইংরেজি শিক্ষায় বিপ্লব ঘটাতে এআই ব্যবহার, তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর মূল্যায়নের কৌশল বাস্তবায়ন ও বৈচিত্র্যময় বহুভাষিক শিক্ষা প্রেক্ষাপটে ইংরেজিকে একীভূত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

আলোচনাগুলোর মূল বিষয় ছিল চারটি। এগুলো হলো—

১. চাকরির জন্য ইংরেজি

কর্মসংস্থানে ইংরেজির ভূমিকা এবং কীভাবে মূল্যায়নের ব্যবস্থা নিয়োগকর্তার চাহিদা পূরণ করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা।

২. ইংরেজি শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)

ইংরেজি ভাষা শিক্ষায় এআই অ্যাপ্লিকেশনের উদাহরণ খুঁজে বের করা, কীভাবে পরিকল্পনা ও মূল্যায়নে কার্যকর ব্যবহারের জন্য এসব বিষয়কে বিবেচনা করে, তা তুলে ধরা।

৩. তরুণ শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন

মূল্যায়নের সবদিক বিবেচনা করা এবং তরুণ শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিকাশ ও শেখার গতিপথে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরা।

৪. বহুভাষিক শিক্ষা প্রসঙ্গে ইংরেজির ভূমিকা

বহুভাষিক শিক্ষা প্রসঙ্গে ইংরেজি ভাষার মূল্যায়নের নীতি ও অনুশীলন হাইলাইট করা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ