যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদ। এই নদের পাশেই রয়েছে যশোর-খুলনা মহাসড়ক ও রেলপথ। ত্রি-মাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এখানে রয়েছে নওয়াপাড়া নৌবন্দর।

নানা কারণে এই নদটিতে জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটছে। গত ১৮ মাসে এই নদে অসংখ্য জাহাজ ডুবে গেছে বলে জানিয়েছেন জাহাজ মালিক ও শ্রমিকরা।

পণ্যবাহী জাহাজের মালিক ও শ্রমিকরা জানায়, মূলত চারটি কারণে বারবার জাহাজডুবির ঘটনা ঘটছে। প্রথমত, নিয়মিত খনন না করায় ভৈরব নদের নাব্য সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। খননকাজ সুষম বা ধারাবাহিকভাবে করা হয় না। কোথাও গভীর আবার কোথাও মোটেও খনন করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, দখলের কারণে ভৈরব নদ দিনদিন সরু হয়ে যাচ্ছে। তৃতীয়ত, অদক্ষ মাস্টাররা মূল চ্যানেলের বাইরে এসে নদের কিনারায় জাহাজগুলো নোঙর করেন। চতুর্থত, সময়মতো মেরামত না করায় পণ্যের অতিরিক্ত ওজনের চাপ সহ্য করতে না পেরে পুরোনো জাহাজের তলা ফেটে তা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।

আরো পড়ুন:

বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর
নাব্য সংকটে ভিড়ছে না বড় জাহাজ, লোকসানে ব্যবসায়ীরা

কক্সবাজার সৈকতে নেমে অসুস্থ পর্যটক, হাসপাতালের পথে মৃত্যু

নওয়াপাড়া নৌবন্দরের দৈর্ঘ্য খুলনার ফুলতলা উপজেলার মুজতখালী থেকে যশোরের অভয়নগরের আফরাঘাট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার।

ভৈরব নদের শুভরাড়া এলাকায় চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ৮৫০ টন ইউরিয়া সারবোঝাই ‘এমভি সেভেন সিজ-৪’ নামে একটি কার্গো জাহাজ তলা ফেটে ডুবে যায়।

জাহাজের মাস্টার জুয়েল হোসেন বলেন, “জাহাজ থেকে ইউরিয়া নামানোর সময় ভাটায় জাহাজের তলদেশের সঙ্গে মাটিতে থাকা পাথর কিংবা শক্ত কোনো বস্তুর আঘাত লাগে। এতে জাহাজটির তলদেশ ফেটে যায়। জোয়ারের সময় জাহাজটি ধীরে ধীরে ভৈরবের পানিতে তলিয়ে যায়।”

এর আগে, গত ২৫ জানুয়ারি সিদ্দিপাশায় গমবোঝাই ‘এমভি ওয়েস্টার্ন-২’ কার্গো জাহাজ কাত হয়ে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার সময় জাহাজটিতে প্রায় ৭০০ টন গম ছিল। এ ছাড়া, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ৮২০ টন কয়লাসহ ‘এমভি আর রাজ্জাক’, ১৩ এপ্রিল ৬৮৫ টন কয়লাবোঝাই ‘এমভি সাকিব বিভা-২’, ১৫ জানুয়ারি প্রায় ৮০০ টন কয়লাবাহী ‘এমভি পূর্বাঞ্চল-৭’ ও ১৩ জানুয়ারি ৭০০ টন কয়লা নিয়ে ‘এমভি মৌমনি-১’ কার্গো জাহাজ তলা ফেটে ডুবে যায়।

জাহাজ কর্তৃপক্ষ বলছে, ভৈরব নদে আগের তুলনায় জাহাজের সংখ্যা বেড়েছে। জাহাজ নোঙর করার জায়গার পরিমাণ খুবই কম। তাছাড়া নাব্য সংকট থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নওয়াপাড়া নদীবন্দর সচল ও নিরাপদ রাখতে নিয়মিত নদী খনন ও নিরাপদ জেটি নির্মাণের দাবি জানান তারা।

খুলনা নৌপরিবহন মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ চৌধুরী মিনহাজ উজ জামান সজল বলেন, “দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সব থেকে বড় নদীকেন্দ্রিক অর্থনীতির কেন্দ্র নওয়াপড়া বন্দরের বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিনের। নদীর নাব্য কম। পানি কমতে কমতে নদী ছোট হয়ে আসছে। সঠিক পদ্ধতিতে ড্রেজিং করার প্রয়োজনীয়তার কথা আমরা বারবার বলেছি। সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।”

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নওয়াপাড়া শাখার সদস্য সচিব নিয়ামুল ইসলাম রিকো বলেন, “নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদের নাব্য সংকট প্রকট। দখলে নদ সরু হয়ে আসছে। খননকাজ সুষম বা ধারাবাহিকভাবে করা হয় না। কোথাও গভীর আবার কোথাও মোটেও খনন করা হয় না। যে কারণে ঘন ঘন জাহাজ ডুবছে।”

নওয়াপাড়া নদীবন্দরের উপ-পরিচালক মো.

মাসুদ পারভেজ বলেন, “সব নদ-নদীতে নাব্য সংকট রয়েছে। ভৈরব নদে ড্রেজিং চলছে। মূলত অদক্ষ মাস্টার-ড্রাইভার নিয়ম না মেনে জাহাজগুলো মূল চ্যানেলের বাইরে এসে নদের কিনারায় নোঙর করেন। পুরাতন জাহাজের তলদেশ নিয়মিত মেরামত না করায় অতিরিক্ত পণ্যের চাপে ভাটায় জাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ছে।”

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) খুলনার যুগ্ম পরিচালক নৌ সংরক্ষক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‍“নওয়াপাড়া নৌবন্দরে জাহাজ ডুবির হিসাব আমরা সংরক্ষণ করি না। তবে সেখানে প্রায়ই জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। কোনটি জানাজানি হয়, কোনটি জানা সম্ভাব হয় না।”

ঢাকা/প্রিয়ব্রত/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ নওয় প ড় র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

পটুয়াখালীতে সালিস বৈঠকে অংশ নিলে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিএনপি

পটুয়াখালীতে স্থানীয় পর্যায়ে সালিস বৈঠকে অংশ নিলে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে ওই বিজ্ঞপ্তির কপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

সম্প্রতি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী সালিস বৈঠকে অংশ নিয়ে আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা এ বিষয়ে ফেসবুকে নানা মন্তব্য তুলে ধরে ক্ষোভ জানিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জেলা বিএনপি এই বিজ্ঞপ্তি দেয়।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান টোটন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচন। সংকটময় মুহূর্ত আসছে, তাই দলীয় নেতা-কর্মীরা যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় না জড়ান, তাই তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে।’

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিএনপি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামী সংগঠন। এই দলের প্রত্যেক কর্মী জনগণের আস্থার প্রতীক এবং আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রণী সৈনিক। তাই দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জেলা বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কোনো নেতা-কর্মী স্থানীয় পর্যায়ে কোনো প্রকার সালিস, দাঙ্গা-ফ্যাসাদ বা পক্ষপাতদুষ্ট এবং মধ্যস্থতাকারী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না।

একই সঙ্গে ওই বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মসূচি এবং জনগণের পাশে থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নেতা-কর্মীদের সদা হাস্যোজ্জ্বল, ভদ্র ও অমায়িক আচরণমুখী হতে বলা হয়েছে। এ নির্দেশনা অমান্য করলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ