গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায় বাদী হয়ে আজ রোববার মামলাটি দায়ের করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা সেকশন অফিসার পদে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে বলে দুদকের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। 

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও নিয়োগ কমিটির সদস্য  প্রফেসর ড.

মোশার্রফ আলী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রো টেকনোলজি ডিসিপ্লিন বিভাগের সাবেক প্রফেসর এবং নিয়োগ কমিটির সদস্য ড. মো. আব্দুল মান্নান ও গোবিপ্রবি’র সেকশন অফিসার শারমিন চৌধুরী।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গত ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ৭৬৩ নম্বর স্মারকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা সেকশন অফিসারের ১৬টি পদসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই পদের স্থানে শারমিন চৌধুরীসহ ২০ জনকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই পদে ৮৭০ জন আবেদকারীর ডাটা শিটে তৎকালীন ভিসি ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের স্বাক্ষর রয়েছে। তালিকাটিতে আসামি শারমিন চৌধুরী’র নাম নেই। তাছাড়া নিয়োগ কমিটির সুপারিশ তালিকার ৮৭৩ নম্বর ক্রমিকে শারমিন চৌধুরীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে ৮৭৩ নম্বর ক্রমিক ডাটা শিটে উল্লেখ নেই। অর্থাৎ, আবেদন তালিকায় নাম না থাকার পরও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শারমিন চৌধুরীকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। 

এছাড়া নিয়োগের শর্ত ছিল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখে প্রার্থীর বয়স ৩২ বছর হতে হবে। তখন আসামি শারমিন চৌধুরীর বয়স ছিল ৩৩ বছর ৩ মাস। বেআইনিভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ১৬টি শুন্য পদের স্থলে ২০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ডাটা শিটে নাম না থাকার পরও শারমিন চৌধুরীকে  নিয়োগ দিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে।

মালার বাদী দুদক গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায় বলেন, অভিযোগের বিষয়ে গত ১২ জানুয়ারি সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য, সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যানুসন্ধানে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে দুদক প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এরপর দুদক প্রধান কার্যালয়ে নির্দেশে ৪ জনের বিরুদ্ধে রোববার মামলা দায়ের করা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ প লগঞ জ গ প লগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক

রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।

তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।

গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ