চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিমের বেলায় এটা নতুন কিছু ঘটনা নয়। প্রতি বছরই প্রথম রোজায় এমন চিত্র দেখা যায় তার বাসায়। ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হয়েও রমজানের সময় তার প্রিয়জনদের নিয়ে ইফতার করেন তিনি।  চলতি রমজানেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।

রোববার  প্রথম রমজানের দিন মিম তার প্রিয়জনদের নিয়ে ইফতার করেছেন। ঘরোয়া পরিবেশে খাবারের টেবিলে ইফতার আয়োজনের একটি ছবি নিজের ফেসবুক পেজে আপলোড করেছেন এ অভিনেত্রী। এর ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘এই বরকতময় রমজানের প্রথম ইফতার আমার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করলাম। একতা, আশীর্বাদ এবং সুন্দর মুহূর্তগুলোর জন্য সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’

ব্যক্তিগত জীবনে সনাতন ধর্মের অনুসারী বিদ্যা সিনহা মিম। কিন্তু প্রতিবছরই তিনি ঈদ উদযাপন করে ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় মিম এবারের পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনমা মিম তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘রামাদান মুবারাক’। পাশে নতুন চাঁদের ইমোজি দিয়েছেন। পাশাপাশি তার একটি ছবিও পোস্ট করেছেন।

অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম ঈদুল আজহার সময় তাকে কাজে সহায়তাকীদের জন্য কোরবানিও দেন। এতে রীতিমতো মুগ্ধতা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেন মিমের ভক্ত-অনুরাগীরা।

বিদ্যা সিনহা মিম ২০০৭ সালের লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান লাভ করেছিলেন। এর মাধ্যমেই তার শোবিজে যাত্রা শুরু। একই বছরে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত ‘আমার আছে জল’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘটে। ‘জোনাকির আলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ২০১৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

২০০৯ সালে মিম নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু নির্মিত ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাকিব খান। ছোটপর্দায়ও নিয়মিত অভিনয় করছেন এ অভিনেত্রী।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইফত র রমজ ন র ইফত র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

বাঁশের ‘সিলিং গ্রাম’ চাঁদপুরের ছটাকি

মেঘনার পারে ছোট্ট ছটাকি গ্রাম। প্রায় সারা বছরই সেখানকার লোকজন থাকে নদীভাঙনের আতঙ্কে। নদীর স্রোতের সঙ্গেই তাঁদের ওঠাবসা, বেঁচে থাকার লড়াই, বসবাস। গ্রামটির অধিকাংশ লোকই পেশায় কৃষি ও মৎস্যজীবী। তবে গ্রামের শতাধিক লোক এখন আঁকড়ে আছে বাপ-দাদার পুরোনো একটি পেশা।

টিনের ঘরের জন্য বাঁশের তৈরি রংবেরঙের সিলিং (ছাউনি) বানিয়ে সেগুলো বিক্রি করে জীবিকা চালাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের তৈরি ওই ছাউনি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও। ৮০ বছর ধরে বাঁশের এই বুননশিল্পকর্ম তৈরি ও বিক্রি করে টিকে আছে পরিবারগুলো।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নে মেঘনা নদীর তীরে ওই ছটাকি গ্রামের অবস্থান। মুলি বাঁশ দিয়ে গ্রামবাসীর তৈরি ঘরের ছাউনি স্থানীয়ভাবে বেশ জনপ্রিয় ও সমাদৃত। এ কারণে স্থানীয় লোকজনের কাছে গ্রামটি ‘সিলিং গ্রাম’ নামেও পরিচিত। ঘরের সিলিংকে এলাকার লোকজন ‘কাড়’ হিসেবে চেনে।

সোমবার দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার বাজারের পাশে কিছুটা খোলা জায়গায় বাঁশ দিয়ে টিনের ঘরের সিলিং বানানোর কাজ চলছে। ১৫ থেকে ২০ জন কারিগর (শ্রমিক) বড়, ছোট ও মাঝারি আকারের ওই সিলিং বানাতে ব্যস্ত। কেউ মুলি বাঁশ সাজিয়ে রাখছেন, কেউ বাঁশ বেঁধে রং লাগাচ্ছেন। প্রবীণ দু-একজন বাসিন্দা চেয়ারে বসে ওই শিল্পকর্মের বুনন তদারক করছেন এবং কারিগরদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁদের পাশে থাকা বেশ কিছু লোক জটলা পাকিয়ে ওই শিল্পকর্ম দেখছেন। মুলি ও নলি বাঁশ, সুতা, সুতলি, গুনা, তারকাটা, দা, শাবল, রঙের পট, হাতুড়ি, করাতসহ সিলিং তৈরির নানা উপকরণ ব্যবহৃত হচ্ছে সেখানে। বুননশিল্প তৈরির এ মহাযজ্ঞে গোটা এলাকাই সরগরম।

কথা হয় সেখানকার বেশ কয়েকজন কারিগরের সঙ্গে। ওই গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আবদুল মালেক প্রধান বলেন, প্রায় ৮০ বছর ধরে তাঁর গ্রামে মুলি বাঁশ দিয়ে টিনের ঘরের সিলিং বানানো ও বিক্রির কাজ চলছে। তিনি নিজেও প্রায় ৫০ বছর ধরে এ পেশায় যুক্ত। তাঁর পরিবারের আরও চারজন এখন এ কাজ করছেন। পৈতৃক এ পেশা টিকিয়ে রাখতে লড়াই করে যাচ্ছেন তাঁরা।

ওই গ্রামের খলিলুর রহমান, আবদুর রহমানসহ অন্তত পাঁচজন কারিগর বলেন, পাহাড়ি এলাকা থেকে মুলি ও নলি বাঁশ কিনে এনে বাঁশের সিলিং তৈরি করেন। মাঝারি আকারের একটি সিলিং বানাতে খরচ পড়ে ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকায়। বড় আকারের একটি সিলিং বানাতে খরচ পড়ে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। মুলি বাঁশের সিলিং টিনের ঘরকে ঠান্ডা রাখে। এ জন্য স্থানীয়দের কাছে সারা বছরই এগুলোর ভালো চাহিদা থাকে। চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়েও সেগুলো বিক্রি করেন। একেকটি সিলিং বানাতে ১০ থেকে ১৫ দিন লাগে। তৈরি সিলিং বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসারের খরচ চলে। তাঁদের গ্রামের শতাধিক মানুষ পুরোনো এ পেশায় যুক্ত। এ কাজ করে তাঁদের সংসারে সচ্ছলতাও এসেছে। কারও কাছে হাত না পেতে তাঁরা স্বাবলম্বী।

ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলমের ভাষ্য, তাঁর ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম তৈরি হচ্ছে। এতে তিনি গর্বিত। পুরোনো এ পেশার মানোন্নয়নে তিনি সহযোগিতা ও সহায়তা করবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, লোকজ ঐতিহ্য ও বাঁশের শিল্পকর্ম বাঁচিয়ে রাখতে ওই গ্রামের লোকেরা যেভাবে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের যত দূর সম্ভব সহায়তা দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাঁশের ‘সিলিং গ্রাম’ চাঁদপুরের ছটাকি