ক্রেডিট কার্ড নিতে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতা বাতিলের দাবি অ্যামচেমের
Published: 5th, March 2025 GMT
ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা বাতিল চেয়েছেন আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) নেতারা। তাঁরা বলেন, বর্তমানে দেশে ব্যক্তিগত ব্যাংকঋণের ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হলে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে ক্রেডিট কার্ডের জন্য রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা আছে। অথচ ক্রেডিট কার্ডও একধরনের ঋণ। এ জন্য ঋণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের নীতিটি পরস্পরবিরোধী।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যালয়ে আজ বুধবার এক প্রাক্-বাজেট আলোচনায় কর–সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অ্যামচেমের নেতারা। বিভিন্ন ব্যবসায়ী চেম্বার, পেশাজীবী সংগঠন ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে পরামর্শের মাধ্যমে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কর প্রস্তাব তৈরির অংশ হিসেবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে এনবিআর।
অ্যামচেমের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। তিনি বলেন, ‘ক্রেডিট কার্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা তুলে দিলে কার্ডের ব্যবহার বাড়বে এবং আর্থিক লেনদেনের শনাক্তকরণ উপায় জোরদার হবে, যা প্রকারান্তরে রাজস্ব আয় বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।’
বাজেট প্রস্তাবে আর্থিক ও বিমা খাতের করপোরেট কর ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে অ্যামচেম। পাশাপাশি এ খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডের ওপরে করপোরেট কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া লজিস্টিক ও সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের করপোরেট কর কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।
অ্যামচেম আরও জানায়, বাংলাদেশে অফশোর ব্যাংকিং পরিষেবার ওপর অনশোর ব্যাংকিং পরিষেবার মতোই ৪০ শতাংশ কর আরোপ করা আছে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্য দেশগুলোতে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের (ওবিইউ) ওপর শূন্য থেকে ২০ শতাংশ হারে কর আরোপ রয়েছে।
এ বিষয়ে সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, ওবিইউ মূলত রপ্তানিকারকদের সহায়তা করে এবং প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। ওবিইউর জন্য কম করহার প্রবর্তন করা হলে স্থানীয় ব্যাংকগুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক শর্তে ঋণ প্রদান করতে পারবে এবং রপ্তানিকারকেরা উপকৃত হবেন।
অ্যামচেম আরও জানায়, বাংলাদেশে এখনো নগদ লেনদেনই প্রধান এবং ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভ্যাট বা কর আরোপ করা হয়। অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশ এখনো ডিজিটাল পেমেন্ট উৎসাহিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এমন বাস্তবতায় ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করেছে অ্যামচেম। এর (প্রণোদনা) মধ্যে ৩ শতাংশ ব্যবহারকারীদের জন্য এবং ২ শতাংশ ব্যবসায়ীদের জন্য থাকবে।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, ডিজিটাল পেমেন্ট উৎসাহিত করলে লেনদেনে স্বচ্ছতা বাড়বে, কর ফাঁকি কমবে এবং আর্থিক খাত আরও নিয়ন্ত্রিত হবে।
ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন ফিলিপ মরিস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রেজা–উর–রহমান মাহমুদ, অ্যামচেমের নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী কায়সার মোহাম্মদ রিয়াদ প্রমুখ। বৈঠকে আরও বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারাও তাঁদের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা চার লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব রেখেছে।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আমদানি পণ্যের মূল্যায়ন তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা এবং উৎস দেশ অনুযায়ী কাস্টমস মূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) ভ্যাট বা মূসকের একক হার ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে। সংগঠনটি বলছে, এটা করা গেলে রাজস্ব আয় বাড়বে।
বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, সব উৎসে করের জন্য একটি রিফান্ড ব্যবস্থা আয়কর আইনের পৃথক ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। তিনি রিসাইক্লিং শিল্পকে কর অবকাশ প্রদান এবং বর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ উৎসে কর অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন।
সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে ধীরে ধীরে বের হব। যারা কর অব্যাহতি পায়, তাদের অব্যাহতি ধীরে ধীরে কমিয়ে দিব। আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক দাবিদাওয়ার প্রতিফলন থাকবে।’
করজাল বাড়াতে এনবিআর কাজ করছে জানিয়ে আবদুর রহমান খান বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করতে পারেন, সে জন্য দীর্ঘমেয়াদি করনীতি নেওয়া হচ্ছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা তাঁদের মতামত প্রদান করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স প র শ কর দ র জন য ম হ ম মদ ব যবস য়
এছাড়াও পড়ুন:
আয়কর রিটার্নে ভুল হলে কীভাবে ঠিক করবেন
বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমায় ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, ভুল হতেই পারে। করের হিসাবেই বেশি ভুল হয়। কর রেয়াতের হিসাবেও ভুল করেন অনেক করদাতা। এ ছাড়া করদাতারা এমনিতেই আয়কর নিয়ে ভয় ও শঙ্কায় থাকেন।
যদি কোনো কারণে রিটার্ন ভুল হয়ে যায়, তাহলে আপনার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে না। আপনি রিটার্ন জমার পরও তা সংশোধন করতে পারবেন। দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
এবার দেখা যাক, কীভাবে রিটার্নের ভুল সংশোধন করবেন।
তিন ভুল সংশোধন করা যাবে
রিটার্নে তিন ধরনের ভুল সংশোধন করা যাবে। রিটার্ন দাখিলের পর যদি করদাতার কাছে প্রতীয়মান হয় যে তাঁর প্রদেয় কর সঠিকভাবে পরিগণিত হয়নি বা সঠিক অঙ্কে পরিশোধিত হয়নি, তাহলে তিনি সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। যেসব ভুল সংশোধন করা যাবে, তা হলো—১. প্রদর্শিত আয়, ২. দাবি করা কর অব্যাহতি বা ক্রেডিট ও ৩. অন্য যেকোনো যৌক্তিক কারণে ভুল।
যাঁরা ভুল সংশোধন করতে পারবেন না
রিটার্নে তিন ধরনের কারণে ভুল সংশোধন করা যাবে না। এগুলো হলো—১. রিটার্ন দাখিল করার তারিখ থেকে ১৮০ দিন শেষ হওয়ার পর, ২. সংশোধিত রিটার্ন প্রথমবার দাখিলের পর ও ৩. মূল রিটার্নটি নিরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর।
অনলাইনে সংশোধিত রিটার্ন
করদাতাদের জন্য অনলাইনে সংশোধিত রিটার্ন জমার সুবিধা চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ জন্য ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সংশোধন অপশন ব্যবহার করতে হবে। সংশোধনী রিটার্নে যদি করের পরিমাণ বাড়ে, তাহলে নিয়ম অনুসারে বাড়তি করসহ জরিমানা দিতে হবে।
যেসব করদাতা অনলাইনে মূল আয়কর রিটার্ন দাখিলের পর ভুলত্রুটির কারণে অনলাইনে সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করতে চান, তাঁদের জন্য অনলাইনে সংশোধিত আয়কর রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা চালু আছে। যাঁরা সংশোধন অপশন ব্যবহারের জন্য অনলাইনে প্রবেশ করবেন, তাঁদের অবশ্যই সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
আয়কর দিবস–পরবর্তী সময়েও বছরব্যাপী অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সুবিধাও চালু আছে।
সরাসরি রিটার্ন দাখিল
আয়কর আইনে কর কার্যালয়ে গিয়েও ভুল সংশোধনী রিটার্ন দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে কোনো করদাতা রিটার্ন দেওয়ার পর যদি দেখেন যে অনিচ্ছাকৃত ভুলে রিটার্নে কম আয় দেখিয়েছেন, কম কর পরিশোধ করেছেন কিংবা বেশি কর রেয়াত, কর অব্যাহতি বা অন্য কোনো কারণে কম কর পরিশোধ করেছেন। হিসাবের ভুলেও এমন হতে পারে। তাহলে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে এই রিটার্ন জমা দিতে হয়।
আপনি ভুল সংশোধনী রিটার্ন জমার পর উপকর কমিশনার যদি সন্তুষ্ট হন যে সব শর্ত পূরণ করা হয়েছে, তাহলে তিনি রিটার্নটি গ্রহণ করবেন। প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ দেবেন।