‘২০০ ছররা গুলি নিয়ে সারা জীবন বেঁচে থাকতে হবে’
Published: 5th, March 2025 GMT
‘সারা হাতে দুই শর ওপর ছররা গুলি লেগেছে। হাড়ের ভেতরে গুলি ঢুকে গেছে। চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছেন, এ গুলি আর বের করা যাবে না। এগুলো নিয়েই সারা জীবন কাটাতে হবে। কিন্তু এভাবে তো বেঁচে থাকা যায় না।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে পুলিশের ছররা গুলিতে আহত নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ওয়ালিউল হাসান এভাবে নিজের কষ্টের কথা বর্ণনা করেন। বুধবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত ‘ছররা গুলির বীভৎসতা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথাগুলো বলেন। সকল প্রাণের নিরাপত্তা (সপ্রাণ) নামের একটি সংগঠন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আন্দোলনে মিরপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হন নুর হোসেন (২৬) নামের আরেক শিক্ষার্থী। তিনি জানান, জুলাই আন্দোলনে নির্বিচার ছোড়া পুলিশের ছররা গুলিতে এক চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন। এ কথা এখনো গ্রামে থাকা মাকে বলেননি। ‘বললে মা এ কষ্টের ভার সইতে পারবেন না’ বলেন তিনি।
ওয়ালিউল হোসেন বলেন, ‘২১ জুলাই ৫০ থেকে ১০০ পুলিশ উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনে হঠাৎ গুলি করা শুরু করে। আমাকে মাত্র দুই মিটার দূর থেকে গুলি করলে সাথে সাথে হাত দিয়ে ঠেকাতে চাই। হঠাৎ দেখি, হাত থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।’
গুলি নিয়ে বেঁচে থাকার দুর্বিষহ স্মৃতি সম্পর্কে এই তরুণ বলেন, ‘এই স্পটে (উত্তরায়) আমিসহ ছররা গুলিতে ৪০ জনের মতো আহত হয়। আমি এখনো পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে) চিকিৎসাধীন আছি। ডাক্তাররা বলে দিয়েছেন আমার হাতের হাড়ে গুলি ঢুকে গেছে। এগুলো বের করা সম্ভব না। আমাকে বাকি জীবন এগুলো নিয়েই কাটাতে হবে। অসহ্য যন্ত্রণা হয়। এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়!’
অনুষ্ঠানে একুশে পদকজয়ী আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘তরুণেরা জীবন দিয়েছে বলেই আমরা আজ এ মুক্তি পেয়েছি। একাত্তর দেখেছি। এরশাদ আমলেও নিপীড়ন দেখেছি। প্রতিটি সরকারের আমলে নিপীড়ন দেখেছি; কিন্তু এ পর্যায়ের নিপীড়ন দেখিনি।’
শহিদুল আলম হংকংয়ের একটা গবেষণার বরাত দিয়ে বলেন, ‘হংকংয়ের বিক্ষোভে ছররা গুলিতে ১৫ শতাংশ বিক্ষোভকারী আহত হয়েছিলেন, যার মধ্যে ২০ শতাংশ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এসব তো তারা (বিগত সরকার) জানে। এর পরও তারা ছররা গুলি ব্যবহার করেছে।’
অনুষ্ঠানে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান বলেন, শুধু ছররা গুলি নয়, বিক্ষোভ দমনের সব পদ্ধতির মধ্যে সংস্কার আনার দাবি তুলতে হবে।
মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ‘যেকোনো সময়, যেকোনো সভা–সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে সেখানে আসলে কী ধরনের ন্যূনতম রেস্ট্রিকশন (বিধিনিষেধ) বা শর্ত তাদের মেনে চলতে হবে, সেটা নিয়ে আমাদের সোচ্চার হওয়া দরকার। সংবিধান আমাদের কতকগুলো সুরক্ষা দিয়েছে, যেমন নির্বিচার গুলি চালানো যাবে না। বলপ্রয়োগ সমানুপাতিক হারে করতে হবে; কিন্তু এগুলো কতটা চর্চা করা হয় সে প্রশ্ন রয়ে যায়।’
অনুষ্ঠানে ছররা গুলির বীভৎসতার চিত্র এবং মানবিক, ঐতিহাসিক ও আইনি প্রেক্ষাপট থেকে এটি ব্যবহারের নানা দিক বিশ্লেষণ করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মে মাসে বিজিবির অভিযানে ১৩৩ কোটি টাকার চোরাচালান জব্দ
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গত মে মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ১৩৩ কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।
সোমবার (১৬ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিজিবি।
বিজিবি জানায়, জব্দ করা চোরাচালান দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ১ কেজি ৫১২ গ্রাম স্বর্ণ, ১০ হাজার ৫৪৪টি শাড়ি, ৫ হাজার ১৪০টি কাপড়, ৩ হাজার ৪৭২টি তৈরি পোশাক, ১৯ হাজার ৩১৪ মিটার থান কাপড়, ২ লাখ ৫২ হাজার ২৯টি কসমেটিকস সামগ্রী, ৫ হাজার ৪৪৩টি ইমিটেশন সামগ্রী, ২৪ লাখ ৭১ হাজার ৫৫১টি আতশবাজি, ১৭ হাজার ৫২৩ ঘনফুট কাঠ, ৩ হাজার ১৫১ কেজি চা পাতা, ৯২ হাজার ৪৮৭ কেজি সুপারি, ৫৩ হাজার ৪০ কেজি চিনি, ২০ হাজার ৪৪২ কেজি সার, ২৯ হাজার ৯৮৫ কেজি কয়লা, ১০০ কেজি সুতা/কারেন্ট জাল, ৩৪১টি মোবাইল, ১৭ হাজার ৬৫টি মোবাইল ডিসপ্লে, ৬ হাজার ৫৪০টি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ১৫,১১২টি চশমা, ৬ হাজার ৫৪৩ কেজি বিভিন্ন প্রকার ফল, ৫ হাজার ৯৬০ কেজি ভোজ্য তেল, ১০১০ লিটার ডিজেল/অকটেন, ১ হাজার ৫২৬ কেজি পিঁয়াজ, ৮ হাজার ৮২৬ কেজি রসুন, ২০ হাজার ৬৪২ কেজি জিরা, ১১ হাজার ২৩৬ প্যাকেট বিভিন্ন প্রকার বীজ, ৫০ হাজার ১৯১ কেজি ফুচকা, ৯ হাজার ১৭৯ কেজি মাছ, ৫০ হাজার ৬০৩ পিস চিংড়ি মাছের পোনা, ৯৩৪ কেজি কফি, ২ লাখ ২৫ হাজার ৩৪৩ পিস চকোলেট, ১ হাজার ১৩১টি গরু/মহিষ, ৪টি কষ্টি পাথরের মূর্তি, ১৩টি ট্রাক/কাভার্ডভ্যান, ১৫টি পিকআপ, ৪টি প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস, ৯২টি নৌকা, ২৬টি সিএনজি/ইজিবাইক, ৭২টি মোটরসাইকেল এবং ২২টি বাইসাইকেল।
আরো পড়ুন:
ঘাস খেতে খেতে সীমান্তের ওপারে ১০ গরু, ফেরত দিল বিএসএফ
ঠাকুরগাঁও সীমান্ত দিয়ে আরো ২৩ জনেকে ঠেলে দিল বিএসএফ
উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ২টি দেশীয় পিস্তল, ৫টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ৯মি.মি. পিস্তল, ২টি শট/পাইপ গান, ৫টি ম্যাগাজিন, ৪টি ককটেল, ২৪টি গুলি এবং ১টি হ্যান্ড গ্রেনেড।
এছাড়া গত মাসে বিজিবি বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে। জব্দ করা মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ৯৬৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১০ কেজি ৯৩৫ গ্রাম হেরোইন, ২৩ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১ কেজি ৪১০ গ্রাম কোকেন, ১০ হাজার ৫২১ বোতল ফেনসিডিল, ৮ হাজার ৯৮৩ বোতল বিদেশি মদ, ৭১.২৫ লিটার বাংলা মদ, ৮১৩ বোতল ক্যান বিয়ার, ১ হাজার ৯১৩ কেজি ৬৩০ গ্রাম গাঁজা, ২ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ প্যাকেট বিড়ি ও সিগারেট, ৩০ হাজার ১১৫টি নেশাজাতীয় ট্যাবলেট/ইনজেকশন, ৫৪ ঞাজার ৩৪৭ বোতল ইস্কাফ সিরাপ, ৫ বোতল এলএসডি, ২০ হাজার ৪৯৩টি এ্যানেগ্রা/সেনেগ্রা ট্যাবলেট, ৭৩৭টি এমকেডিল/কফিডিল এবং ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬০৪ পিস বিভিন্ন প্রকার ওষুধ ও ট্যাবলেট।
সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪৫ জন চোরাকারবারি এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ৭১৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ১০ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৩৯০ জন মিয়ানমার নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/এমআর/এসবি