‘সারা হাতে দুই শর ওপর ছররা গুলি লেগেছে। হাড়ের ভেতরে গুলি ঢুকে গেছে। চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছেন, এ গুলি আর বের করা যাবে না। এগুলো নিয়েই সারা জীবন কাটাতে হবে। কিন্তু এভাবে তো বেঁচে থাকা যায় না।’

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে পুলিশের ছররা গুলিতে আহত নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ওয়ালিউল হাসান এভাবে নিজের কষ্টের কথা বর্ণনা করেন। বুধবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত ‘ছররা গুলির বীভৎসতা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথাগুলো বলেন। সকল প্রাণের নিরাপত্তা (সপ্রাণ) নামের একটি সংগঠন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

আন্দোলনে মিরপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হন নুর হোসেন (২৬) নামের আরেক শিক্ষার্থী। তিনি জানান, জুলাই আন্দোলনে নির্বিচার ছোড়া পুলিশের ছররা গুলিতে এক চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন। এ কথা এখনো গ্রামে থাকা মাকে বলেননি। ‘বললে মা এ কষ্টের ভার সইতে পারবেন না’ বলেন তিনি।

ওয়ালিউল হোসেন বলেন, ‘২১ জুলাই ৫০ থেকে ১০০ পুলিশ উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনে হঠাৎ গুলি করা শুরু করে। আমাকে মাত্র দুই মিটার দূর থেকে গুলি করলে সাথে সাথে হাত দিয়ে ঠেকাতে চাই। হঠাৎ দেখি, হাত থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।’

গুলি নিয়ে বেঁচে থাকার দুর্বিষহ স্মৃতি সম্পর্কে এই তরুণ বলেন, ‘এই স্পটে (উত্তরায়) আমিসহ ছররা গুলিতে ৪০ জনের মতো আহত হয়। আমি এখনো পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে) চিকিৎসাধীন আছি। ডাক্তাররা বলে দিয়েছেন আমার হাতের হাড়ে গুলি ঢুকে গেছে। এগুলো বের করা সম্ভব না। আমাকে বাকি জীবন এগুলো নিয়েই কাটাতে হবে। অসহ্য যন্ত্রণা হয়। এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়!’
অনুষ্ঠানে একুশে পদকজয়ী আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘তরুণেরা জীবন দিয়েছে বলেই আমরা আজ এ মুক্তি পেয়েছি। একাত্তর দেখেছি। এরশাদ আমলেও নিপীড়ন দেখেছি। প্রতিটি সরকারের আমলে নিপীড়ন দেখেছি; কিন্তু এ পর্যায়ের নিপীড়ন দেখিনি।’

শহিদুল আলম হংকংয়ের একটা গবেষণার বরাত দিয়ে বলেন, ‘হংকংয়ের বিক্ষোভে ছররা গুলিতে ১৫ শতাংশ বিক্ষোভকারী আহত হয়েছিলেন, যার মধ্যে ২০ শতাংশ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এসব তো তারা (বিগত সরকার) জানে। এর পরও তারা ছররা গুলি ব্যবহার করেছে।’

অনুষ্ঠানে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান বলেন, শুধু ছররা গুলি নয়, বিক্ষোভ দমনের সব পদ্ধতির মধ্যে সংস্কার আনার দাবি তুলতে হবে।

মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ‘যেকোনো সময়, যেকোনো সভা–সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে সেখানে আসলে কী ধরনের ন্যূনতম রেস্ট্রিকশন (বিধিনিষেধ) বা শর্ত তাদের মেনে চলতে হবে, সেটা নিয়ে আমাদের সোচ্চার হওয়া দরকার। সংবিধান আমাদের কতকগুলো সুরক্ষা দিয়েছে, যেমন নির্বিচার গুলি চালানো যাবে না। বলপ্রয়োগ সমানুপাতিক হারে করতে হবে; কিন্তু এগুলো কতটা চর্চা করা হয় সে প্রশ্ন রয়ে যায়।’

অনুষ্ঠানে ছররা গুলির বীভৎসতার চিত্র এবং মানবিক, ঐতিহাসিক ও আইনি প্রেক্ষাপট থেকে এটি ব্যবহারের নানা দিক বিশ্লেষণ করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে এবার জামায়াতের বিক্ষোভ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিজয়নগর উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে ‍উপজেলার চান্দুরা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২টি আসনসহ দেশের মোট ৩৯টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রাথমিক গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সীমানা পুনর্বিন্যাসের আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন সদর ও বিজয়নগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ছিল। নতুন গেজেটে বিজয়নগরের তিনটি ইউনিয়ন—হরষপুর, চান্দুরা ও বুধন্তি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের মধ্যে দেওয়া হয়েছে। ওই ইউনিয়ন তিনটিকে আগের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের মধ্যে রাখতে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন বিজয়নগর উপজেলার চার বাসিন্দা।

আজকের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা জামায়াতের সভাপতি লুৎফর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রাষ্ট্রু সরকার, চান্দুরা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সোহাগ খন্দকার, চান্দুরা হেফাজতে ইসলামের সহসাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব সিদ্দিকী, চান্দুরা ইউনিয়ন যুব খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমদসহ আরও অনেকে। তারা আধা ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিজয়নগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টিতে প্রায় ৯৬ হাজার ভোটার আছেন, যা উপজেলার মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক। দুই লক্ষাধিক ভোটারবিশিষ্ট উপজেলা একক সংসদীয় আসনের উপযুক্ত হলেও বছরের পর বছর ধরে এটিকে একবার সদর, একবার সরাইল, আবার কখনো নাসিরনগরের সঙ্গে যুক্ত করে অবহেলার শিকারে পরিণত করা হচ্ছে।

তিনটি ইউনিয়নকে আগের আসনে রাখার দাবিতে উপজেলার গোলাম মোস্তফা, এ কে এম গোলাম মুফতি ওসমানী, মো. জাহিদুজ্জামান চৌধুরী ও মো. বায়েজিদ মিয়া স্বাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদন গতকাল দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

আরও পড়ুনব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ১৭ ঘণ্টা আগে

এর আগে গতকাল বিকেলে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে কর্মসূচিতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন অংশগ্রহণে বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। এ সময় তাঁরা আধা ঘণ্টার মতো সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। একই স্থানে আজ বিকেলে একই দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করার কথা আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ