৩৬ কোম্পানি থেকে বিশ্বের অর্ধেক কার্বন ডাইঅক্সাইড
Published: 6th, March 2025 GMT
জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য দায়ী কার্বন ডাইঅক্সাইডের অর্ধেক উৎপাদন করে মাত্র ৩৬টি কোম্পানি। এসব জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানি বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখছে। এ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের আরামকো, ভারতের কোল, এক্সন মোবিল, শেল ও চীনের বেশ কয়েকটি কোম্পানি। এগুলোর উৎপাদিত কয়লা, তেল ও গ্যাসের কারণে ২০২৩ সালে ২০ বিলিয়ন টনের বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন হয়েছে।
গতকাল বুধবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে হলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ অবশ্যই ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে। কিন্তু এখনও কার্বন নিঃসরণের এ ধারা ঊর্ধ্বগামী, যা বিশ্বব্যাপী চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়াকে উস্কানি দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা বলছে, ২০২১ সালের পর যেসব জীবাশ্ম জ্বালানি সংস্থা যাত্রা শুরু করেছে, তারা ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ঠেকাতে যথাযত পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিশ্বের প্রভাবশালী ১৬৯ কোম্পানির মধ্যে অধিকাংশই ২০২৩ সালে তাদের কার্বন নিঃসরণ না কমিয়ে উল্টো বাড়িয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনফ্লুয়েন্স ম্যাপের এমেট্টি কোনেয়ার বলেন, জলবায়ু নিয়ে বৈশ্বিক অঙ্গীকার সত্ত্বেও বিশ্বের বড় জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হারে কার্বন নিঃসরণ বাড়াচ্ছে।
কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনে দায়ী বিশ্বের ৩৬ কোম্পানির মধ্যে আরও আছে চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোম্পানি চায়না এনার্জি, ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানি, রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের এডনক। বলা বাহুল্য, জীবাশ্ম জ্বালানির সবচেয়ে বেশি ব্যবহার দেখা যায় পশ্চিমের দেশগুলোতে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক র বন ন
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।