যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশেষজ্ঞ আসছেন সড়কের দায়িত্বে, কী অভিজ্ঞতা আছে তাঁর
Published: 6th, March 2025 GMT
দেশের সড়ক খাত দেখভালের দায়িত্ব পেলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শেখ মইনউদ্দীন। তাঁকে বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী হিসেবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় এ দায়িত্ব পেলেন।
বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশে সড়ক, সেতু ও এ খাতের অবকাঠামো নির্মাণে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। তবে অভিযোগ হলো, এ খাতের প্রকল্পগুলোর ব্যয় অত্যধিক। বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ হয়েছে। বিপুল বিনিয়োগের পরও সড়ক অবকাঠামোর পূর্ণ সুফল পাচ্ছে না দেশবাসী।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে প্রায় ২৫ বছর ধরে একই ধরনের কাজই করে আসছেন শেখ মইনউদ্দীন। তাঁর জন্ম বাংলাদেশের খুলনায়। উচ্চমাধ্যমিক পড়ার পরই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। শিগগিরই বাংলাদেশে এসে দায়িত্ব নেবেন।সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূলত শেখ মইনউদ্দীনকে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে অত্যধিক ব্যয়ের বিষয়টিতে রাশ টানা, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা এবং রাজধানী ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজট কমিয়ে আনার জন্য।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে প্রায় ২৫ বছর ধরে একই ধরনের কাজই করে আসছেন শেখ মইনউদ্দীন। তাঁর জন্ম বাংলাদেশের খুলনায়। উচ্চমাধ্যমিক পড়ার পরই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। শিগগিরই বাংলাদেশে এসে দায়িত্ব নেবেন।
আরও পড়ুনমেট্রোরেলের শীর্ষ পদে আমলাদের বাইরে নিয়োগ, অস্ট্রেলিয়া ও হংকংয়ে কাজ করা কে এই ব্যক্তি১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বিদ্যুৎ, জ্বালানি, রেল, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয় সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সরকারের কাজে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তা থেকে মইনউদ্দীনকে বিশেষ সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্র জানিয়েছে। আর এটি ফাওজুল কবির খানের ইচ্ছায়ই হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরকারি সূত্র বলছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া বড় প্রকল্পগুলোর অত্যধিক ব্যয় নিয়ে নানা সমালোচনা আছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার অত্যধিক ব্যয়ের কারণ অনুসন্ধান, এ থেকে বের হওয়া এবং টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে চায়। এ জন্য বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং গণপরিবহন খাতে দায়িত্ব বিশেষজ্ঞদের দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সরকারের কাছে জমা দেওয়া জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী, শেখ মইনউদ্দীন ২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের পরিবহন বিভাগের নিরাপত্তা ও পরিচালন বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি প্রায় সাত বছর ওই অঙ্গরাজ্যের পরিবহন বিভাগের কর্মসূচি ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিভাগের ব্যবস্থাপক ছিলেন। ২০০৫ সাল থেকে এক দশকের বেশি তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিভাগের প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কোন প্রকল্প একান্ত প্রয়োজনীয়, কোনটি দরকারি এবং কোনটি দরকারি নয়, এটা চিহ্নিত করা হবে।শেখ মইনউদ্দিনশেখ মইনউদ্দীন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পুরকৌশলে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। অবকাঠামো ও পরিবেশ বিষয়ে তিনি বিশেষজ্ঞ। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পুরকৌশল বিষয়ে মাস্টার্স এবং ইউনিভার্সিটি অব লুইজিয়ানা থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন শেখ মইনউদ্দীন। তাঁর শিক্ষাজীবনের মূল বিষয় ছিল পুরকৌশল, পরিবহন ও পরিবেশ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৌশলীদের নানা পেশাগত সংঘের সঙ্গে তাঁর যুক্ততা রয়েছে।
সরকারি সূত্র বলছে, কর্মজীবনে শেখ মইনউদ্দীন সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নে শত শত কোটি ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়নে যুক্ত ছিলেন। তিনি গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায়ও উদ্ভাবনী ভূমিকা রেখেছেন। এর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে ‘ডায়নামিক লেন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালু করতে নেতৃত্ব দেন তিনি, যা মহাসড়কের নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মহাসড়কের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সদ্ব্যবহার বিষয়েও তাঁর গবেষণা রয়েছে।
২০২৬ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ এবং ২০২৮ সালে অনুষ্ঠেয় অলিম্পিক গেমস চলার সময়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় যানবাহন ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রণয়নের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন শেখ মইনউদ্দীন।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পুরকৌশল বিষয়ে মাস্টার্স এবং ইউনিভার্সিটি অব লুইজিয়ানা থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন শেখ মইনউদ্দীন। তাঁর শিক্ষাজীবনের মূল বিষয় ছিল পুরকৌশল, পরিবহন ও পরিবেশ।সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কাজসড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ রয়েছে। একটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, অন্যটি সেতু বিভাগ। দেশে চার লেন সড়ক, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুসহ বড় বড় স্থাপনা এই দুটি বিভাগের অধীন।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন রয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এটি দেশের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-সেতু নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। সওজের অধীন জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-রংপুর চার লেন মহাসড়ক ও ঢাকা-সিলেট-তামাবিল চার লেন মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্প চলছে। বেশ কিছু মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প আসছে।
এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা। ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ১১৫ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেন করতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তো বটেই, এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায়ও বাংলাদেশে মহাসড়ক নির্মাণের ব্যয় অনেক বেশি। নির্মাণ ব্যয় কমানোই শেখ মইনউদ্দীনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল নির্মিত হচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক যানজট নিরসন, শৃঙ্খলা ফেরানো এবং সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর দায়িত্বও এই মন্ত্রণালয়ের। শেখ মইনউদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রে অর্জন করা অভিজ্ঞতা কতটা দেশে কাজে লাগাতে পারবেন, তা-ই এখন দেখার বিষয়।
সেতু বিভাগের অধীন পদ্মা, যমুনাসহ দেশের বড় বড় সেতু রয়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল দেশের ওপর বোঝা হয়ে দেখা দিল কি না, সে আলোচনা আছে। কারণ, টানেল নির্মাণে যে পরিমাণ ব্যয় হয়েছে, আয় সে তুলনায় খুবই সামান্য। সেতু বিভাগের অধীন ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালসড়ক এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান। আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেতু ও উড়ালসড়ক প্রকল্প পরিকল্পনায় আছে। এসব প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়ন, ব্যয় কমানো এবং অবকাঠামোগুলো দেশের মানুষ যাতে সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে পারে, সেটাই সরকারের মূল লক্ষ্য। এ কাজে শেখ মইনউদ্দীনের অভিজ্ঞতা কতটা কাজে লাগানো যায়, সেটাই দেখার বিষয়।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তো বটেই, এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায়ও বাংলাদেশে মহাসড়ক নির্মাণের ব্যয় অনেক বেশি। নির্মাণ ব্যয় কমানোই শেখ মইনউদ্দীনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।শেখ মইনউদ্দীন অবশ্য আশার কথাই শুনিয়েছেন। তিনি বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বিশ্বাস, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা আছে। এর সর্বোচ্চটা বের করে আনাই তাঁর লক্ষ্য। তিনি আরও বলেন, বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন ও গণপরিবহন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর অভিজ্ঞতা আছে। দেশে থাকাদের মধ্যে বিদেশের প্রযুক্তি ও জ্ঞান যুক্ত করে বাড়তি কিছু করার চেষ্টা থাকবে তাঁর।
বাংলাদেশে প্রকল্পের অত্যধিক ব্যয় সম্পর্কে শেখ মইনউদ্দিন বলেন, কোন প্রকল্প একান্ত প্রয়োজনীয়, কোনটি দরকারি এবং কোনটি দরকারি নয়, এটা চিহ্নিত করা হবে। এরপর যৌক্তিক ব্যয়ে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট ক পর বহন ও প রকল প ব পর বহন ব ব যবস থ অবক ঠ ম সরক র র র পর ব ন ত কর মন ত র সড়ক ও দরক র সড়ক প সড়ক ন ন সড়ক
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।