গারো পাহাড়ে ‘হাতিবাবু’র কবল থেকে দিনা মারাকের ফসল রক্ষার সংগ্রাম
Published: 7th, March 2025 GMT
ফাগুনের দুপুর। সূর্য মাথার ওপরে হালকা তেতে আছে। ঝলমলে আলোয় সীমান্তঘেঁষা গারো পাহাড়ের সবুজ বনভূমি আরও মোহনীয় উঠেছে। পাহাড়ের কোলে একটি ধানখেতে বাঁশ ও ডালপালার বেড়া দিচ্ছিলেন দিনা মারাক (৬৫) নামের এক নারী। তিনি জানান, এ বেড়া বন্য হাতির কবল থেকে শুধু ফসল বাঁচানোর জন্য নয়, এটি তাঁর মেয়ে মেরীর ভবিষ্যৎ রক্ষার চেষ্টা।
দিনা মারাক শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর স্বামী আলবিনুস সাংমা পেশায় দিনমজুর। তাঁদের সংসারে তিন ছেলে, এক মেয়ে আর আছেন অসুস্থ বাবা। দিনার একমাত্র মেয়ে মেরী মারাক (১৫) চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য স্বামী-স্ত্রী দুজনই মাঠে-ঘাটে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। গতকাল বুধবার কাজের ফাঁকে এক দৃষ্টিতে কিছুটা দূরে তাঁকিয়ে কী একটা ভেবে দিনা বললেন, ‘মেয়েডার লেখাপড়া শেষ কইরা বিয়া দিতে পারলেই আমগর দুশ্চিন্তা কমব।’
দিনার পরিবার ৮ শতক জমিতে বোরো ও আমন ধান আবাদ করে। পাশাপাশি বাবার দেওয়া ৫ শতক জমিতেও চাষ করেন তাঁরা। কিন্তু এই পাহাড়ি অঞ্চলে ফসল ফলানো যতটা কঠিন, তার চেয়েও বেশি কঠিন বন্য হাতির হাত থেকে ফসল রক্ষা। মধুটিলা ইকোপার্কের জঙ্গলের পাশেই তাঁদের চাষের জমি। তাঁরা এলাকায় কয়েক দিন ১০-১২টি বন্য হাতি অবস্থানের খবর পেয়েছেন। আতঙ্ক নিয়েই দিন-রাত জমির চারপাশে বেড়া দেওয়ার কাজ করছেন দিনা।
হাতির প্রসঙ্গ উঠাতে দিনা বললেন, ‘আমরা কিন্তু হাতিরে ‘হাতি’ কই (বলি) না; ‘মামা’ বা ‘হাতিবাবু’ কই। নইলে হাতিরা রাগ করে, অসম্মান বোধ করে। এখন যেমন কথা কইতেছি, মামারা হয়তো শুনতাছে!’ বন্য প্রাণীটির সঙ্গে তাঁদের কোনো বিরোধ নেই জানিয়ে দিনা বলেন, ‘হাতি মামাদেরই তো বন, মামারা বনে থাকবেই। কিন্তু রাগ কইরা যদি মাঠে নেমে ধান গাছ পা দিয়ে মাটিতে মিশায়, তখন কিছু করার থাকে না।’
‘আমরা কিন্তু হাতিরে ‘হাতি’ কই (বলি) না; ‘মামা’ বা ‘হাতিবাবু’ কই। নইলে হাতিরা রাগ করে, অসম্মান বোধ করে। এখন যেমন কথা কইতেছি, মামারা হয়তো শুনতাছে!’দিনার দুই ছেলে চট্টগ্রামে কাজ করেন। তাঁরা প্রতি মাসে কিছু টাকা পাঠান। আর এক ছেলে গ্রামের স্থানীয় বাজারে চুল কাটার দোকান দিয়েছেন। তাঁদের সংসার চলে স্বামীর দিনমজুরির আয় আর ছেলেদের পাঠানো টাকায়। এ ছাড়া নিজ হাতে ফসল ফলিয়ে সংসারে অবদান রাখেন দিনাও। তবে দিনার বেশির ভাগ ভাবনা যেন মেয়ে মেরীকে ঘিরে। দিনা চান, মেরী যেন ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করে। এরপর ঘটা করে তাঁর বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারলেই মনটা হালকা হবে। দিনার ভাষ্য, ‘আমাগো আর কতোইবা বয়স? মেয়েডার একটা ঠিকঠাক বিয়া হইলেই বুকের পাথর সরে যাবে।’
ফসল ফলানো থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত চলমান এই সংগ্রামের মধ্যেও দিনার মুখে ক্লান্তি নেই। বরং চোখে ভাসে তাঁর মেয়ের ভবিষ্যতের স্বপ্ন। গারো পাহাড়ের সবুজ ছায়ায় দিনা মারাকের এই লড়াই শুধু ফসল রক্ষার জন্য নয়; টিকে থাকা, বাঁচার আর স্বপ্ন বুননের লড়াই। তবে বন্য হাতির আক্রমণে মুহূর্তেই দিনা মারাকদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। তাই হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান দিনাসহ গারো পাহাড়ের বাসিন্দারা।
এ প্রসঙ্গে মুধটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, বন্য হাতির দল সারা বছর এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে চষে বেড়ায়। তবে মধুটিলা এলাকায় এখনো লোকালয়ে হাতি দেখা যায়নি। তবে কয়েকটি হাতি দল ছুট হয়ে জঙ্গলে অবস্থান করছে বলে শুনেছি। জঙ্গল থেকে লোকালয়ে হাতির আক্রমণ ঠেকাতে কিংবা প্রাণীগুলোকে জঙ্গলে ফেরাতে বন বিভাগ ও এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম প্রস্তুত আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন য হ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
নীল সমুদ্রে দক্ষিণ আফ্রিকার নীল বেদনা, ভারত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
অনুমিত চিত্রনাট্যই যেন অনুসরণ করল মুম্বাইয়ের ফাইনাল ম্যাচ। ভারতের জার্সি গায়ে দর্শকে ঠাসা গ্যালারি রূপ নিল নীল সমুদ্রে। ২২ গজে আরও একবার ভারতের আধিপত্য, শাসন। যেন শিরোপার পায়চারি অনেক আগের থেকেই।
ব্যাটিংয়ে পর্বত ছুঁই-ছুঁই রান। এরপর স্পিনে ফুল ফোটালেন স্পিনাররা। দক্ষিণ আফ্রিকা লড়াই করল সাধ্যের সবটুকু দিয়ে। ব্যাটে-বলে সহজে হাল ছাড়ল না তারাও। হৃদয় জিতলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাত্তাই পেল না। ভারতের শক্তি-সামর্থ্যের গভীরতার কাছে হার মানতেই হলো প্রোটিয়া নারীদের।
আরো পড়ুন:
৪১১ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৯ রানে হারল জিম্বাবুয়ে
কেন বিপিএল থেকে বাদ পড়ল চিটাগং কিংস
মুম্বাইয়ের নাভি স্টেডিয়ামের নীল সমুদ্রে সব আতশবাজি আজ রাতে ফুটল ভারতের বিশ্বকাপ উদ্যাপনে। প্রথমবার ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডেতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ৫২ রানের বিশাল জয় বুঝিয়ে দেয় হারমানপ্রীত কৌর, জেমিমা রদ্রিগেজ, দীপ্তি শর্মা কিংবা শেফালি বার্মা, স্মৃতি মান্ধানা, রিচা ঘোষরা ২২ গজকে কতটা আপন করে নিয়েছেন। শিরোপা জয়ের মঞ্চে ছাড় দেননি একটুও। ২০০৫ ও ২০১৭ বিশ্বকাপে যে ভুলগুলো হয়েছিল...সেগুলো আজ ফুল হয়ে ঝরল।
বৃষ্টি বাঁধায় বিঘ্ন ম্যাচে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ২৯৮ রানের স্কোর পায় ভারত। ৪৫.৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২৪৬ রান করতে পারে প্রোটিয়া নারীরা। নাডিন ডি ক্লার্ক শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হলেন, স্টেডিয়ামের প্রায় ষাট হাজার ভারতীয় সমর্থকদের মুখে একটাই স্লোগান, চাক দে ইন্ডিয়া।
ওই জনসমুদ্রের স্লোগান, ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’।
বিস্তারিত আসছে …
ঢাকা/ইয়াসিন