সংখ্যালঘু আক্রমণকারীদের দ্রুত সাজা চায় ভারত
Published: 7th, March 2025 GMT
ভারত বাংলাদেশ সরকারকে আরও একবার মনে করিয়ে দিল, তারা চায় সে দেশের সরকার সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত সাজা দিক। অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সব বিষয়ের নিষ্পত্তি করুক।
আজ শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের জীবন, সম্পত্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষার দায়িত্ব সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের। সেই দায়িত্ব তারা পালন করুক।
এই প্রথম ভারতের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর ‘নির্যাতনের’ একটি খতিয়ানও দেওয়া হয়। মুখপাত্র সেই খতিয়ান দিয়ে বলেন, গত বছর ৫ আগস্ট থেকে এই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ হাজার ৩৭৪টি ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে সে দেশের পুলিশ ১ হাজার ২৫৪টি ঘটনা যাচাই করেছে। এসব ঘটনার ৯৮ শতাংশ ‘রাজনৈতিক’। তিনি বলেন, ভারত চায়, প্রতিটি ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত শেষে অপরাধীদের সাজা দেওয়া হোক।
সম্প্রতি ওমানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর দেশে ফিরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এক মন্তব্যে বলেছিলেন, সংখ্যালঘুদের রক্ষার বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কারণ নেই। সেই প্রশ্নের উত্তরেই জয়সোয়াল ‘নির্যাতনের’ খতিয়ান তুলে ধরে এই মন্তব্য করেন।
জয়সোয়াল দাবি করেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। গুরুতর অপরাধে আটক ও সাজাপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী এবং উগ্রপন্থীদের ছেড়ে দেওয়ার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
বাংলাদেশের আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজ সম্প্রতি রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। সে বিষয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে দল গঠন নিয়ে জয়সোয়াল কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেন, ভারত সব সময় স্থিতিশীল, প্রগতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের সমর্থক। ভারত চায়, তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সব বিষয়ের নিষ্পত্তি করুক।
শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের ঋণ ও সেই ঋণভিত্তিক প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য সম্প্রতি সে দেশের একটি প্রতিনিধিদল ভারতে এসেছিল বলেও মুখপাত্র জানান। এক প্রশ্নের উত্তরে সেই আলোচনার উল্লেখ করে জয়সোয়াল বলেন, উন্নয়ন সহযোগিতা নিয়ে সম্প্রতি দিল্লিতে দুই দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছে।
জয়সোয়াল বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সংক্রান্ত উদ্ভূত পরিস্থিতি, নিরাপত্তাহীনতা ও বহুদিন ধরে চলা স্থানীয় বিষয়ের কারণে প্রকল্পগুলোর গতি ব্যাহত হয়েছে।
মুখপাত্র বলেন, এসব উন্নয়ন কর্মসূচি ভারতের অগ্রাধিকার। কিন্তু নানা কারণে অগ্রগতি ব্যাহত হওয়ায় দুই দেশ ঠিক করেছে, প্রকল্পগুলো যুক্তিযুক্ত করে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। তবে সেই সঙ্গে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুত সমর্থন ও প্রকল্প রূপায়ণে প্রয়োজনীয় অনুমতি দেওয়ার ওপর।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প জয়স য় ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ