সন্তানদের দেখাশোনার জন্য আনা ভাগ্নিকে নির্যাতনের অভিযোগ, মামা-মামি কারাগারে
Published: 7th, March 2025 GMT
চাঁদপুরে সদরে মামাতো দুই ভাই-বোনকে দেখাশোনার জন্য বাড়িতে রাখা এক তরুণীকে নির্যাতনের অভিযোগে ওই তরুণীর মামা ও মামিকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার চাঁদপুর আমলি আদালতের বিচারক তাদের দুজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নির্যাতনের শিকার রোজিনা সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাকে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আসামিরা হলেন, ভুক্তভোগীর মামা আবুল মোল্লার ছেলে রুবেল মোল্লা ও তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই পিন্টু দত্ত।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের মাদ্রাসা সড়কের মোল্লা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ওই তরুণীকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মো.
রোজিনার বাবা বাদী হয়ে প্রধান আসামি মামী রোকেয়া বেগম ও দ্বিতীয় আসামি মামা রুবেলের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনে মামলা দায়ের করেন।
ওই সড়কের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষার্থী মোরশেদ আলম ও ফরহাদ হোসেন জানান, রাস্তার পাশে ২০ বছরের ওই তরুণীকে কান্না করতে দেখে কারণ জিজ্ঞাসা করেন তারা। উত্তরে ওই তরুণী তাদের জানান, মামার বাসা থেকে তিনি পালিয়ে এসেছেন। পরে তারা বিষয়টি পুলিশকে জানান।
খবর পেয়ে সদর থানার এএসআই কাউসার ওই তরুণীকে উদ্ধারের পাশাপাশি রুবেল মোল্লা ও রোকেয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।
নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী বলেন, ৬ মাস আগে মামাতো ভাই-বোনকে দেখাশোনার জন্য আমাকে আনা হয়। বাড়িতে কাজ করার সময় কারণে-অকারণে মামি আমাকে মারধর করতেন। কোনো ভুল হলেই গালমন্দ করতেন। কাজ করলে ভুল হতে পারে। আমাকে পুতা, কাঠ ও দা দিয়ে পিটিয়ে জখম করেন মামি। চার মাস এভাবে মারধর করা হয়। মামা কয়েকবার ওষুধ এনে দিয়েছে, কিন্তু জখম ভালো হয় না।
ঘটনাটি জেনে থানায় যান ওই তরুণীর বাবা আলী আহম্মদ ভুঁইয়া। মেয়েকে নির্যাতনের চিত্র দেখে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি বলেন, আমার মেয়ে এমন নির্যাতনের শিকার আমি জানতাম না। সে ঢাকায় আমার বড় মেয়ের কাছে ছিল। আমাকে না জানিয়ে সেখান থেকে তাকে রুবেলের বাসায় নেওয়া হয়। আমি মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য বললে, পরে নিয়ে আসব বলত। রোকেয়া আমার মেয়েকে এমন নির্যাতন করেছে কেউ না দেখলে বিশ্বাস করবে না। এই নিষ্ঠুর মহিলার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করি।
ওসি বাহার মিয়া বলেন, খবর পেয়ে গৃহকর্মী মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। আটক স্বামী-স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই
ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।
এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি