বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়নে দৃষ্টি দিয়েছে নয়া দিল্লি
Published: 7th, March 2025 GMT
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগিতা একটি অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হিসেবে রয়ে গেছে বলে জানিয়েছে নয়া দিল্লি। শুক্রবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ভারত ও বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক জোরদার করছে, পারস্পরিক সম্মত প্রকল্পগুলো সময়মত বাস্তবায়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে।
তিনি আরো জানান, সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং স্থানীয় সমস্যাগুলি প্রকল্প বাস্তবায়নকে প্রভাবিত করলেও, উন্নয়ন সহযোগিতা তাদের সম্পর্কের একটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য সরকারি আলোচনাগুলো প্রকল্পের পোর্টফোলিওকে যৌক্তিকীকরণ এবং দক্ষতার সাথে প্রকল্পগুলো সম্পাদনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে। বাংলাদেশের কাছ থেকে সহায়তা এবং ছাড়পত্র না পেয়ে ভারত এই প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, “উন্নয়ন সহযোগিতা বাংলাদেশের জনগণের সাথে আমাদের সম্পর্কের একটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র। সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং দীর্ঘস্থায়ী স্থানীয় সমস্যা এই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের গতিকে প্রভাবিত করেছে। তাই, আনুষ্ঠানিক আলোচনা প্রকল্পের পোর্টফোলিওকে যুক্তিসঙ্গত করার এবং পারস্পরিক সম্মত প্রকল্পগুলো সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সমর্থন এবং মুলতুবি থাকা অনুমোদন প্রাপ্তির সাপেক্ষে, আমরা এই প্রকল্পগুলো নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি।”
গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি পর্যালোচনা করতে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) ৮৬তম বৈঠক বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে। কলকাতার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি প্রসঙ্গে জয়সওয়াল বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার পানি চুক্তি বাস্তবায়নের তদারকির জন্য গঠিত যৌথ কমিটির ৮৬তম সভা ২০২৫ সালের ৬ মার্চ কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়। এই নিয়মিত কারিগরি সভা, যা বছরে তিনবার অনুষ্ঠিত হয়, ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়নের সাথে সম্পর্কিত একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত ব্যবস্থার অংশ। বৈঠকে, উভয় পক্ষ গঙ্গার পানি চুক্তি, পানি প্রবাহ পরিমাপ এবং পারস্পরিক স্বার্থের অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই
ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।
এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি