দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) উদ্যোগ হিসেবে ভারতের নয়াদিল্লিতে প্রতিষ্ঠিত হয় দক্ষিণ এশীয় বিশ্ববিদ্যালয় (এসএইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বাংলাদেশের বকেয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ কোটি টাকার কিছু বেশি। এই বকেয়া পরিশোধের পাশাপাশি নিয়মিত চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। 
এ পটভূমিতে পররাষ্ট্র সচিব মো.

জসিম উদ্দিন সম্প্রতি অর্থ সচিবের কাছে চিঠি দিয়ে ৩০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দের পাশাপাশি পরের বাজেটগুলোতেও এ খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।  

পররাষ্ট্র সচিব চিঠিতে জানিয়েছেন, দক্ষিণ এশীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২০১০ সাল থেকে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সম্প্রসারণে অনন্য ভূমিকা 
পালন করে আসছে। আন্তর্জাতিক মানের এই বিশ্ববিদ্যালয় সার্কের আটটি সদস্য রাষ্ট্রের যৌথ সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত, যা দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণার বিকাশে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। প্রতিষ্ঠাকালীন চুক্তি অনুযায়ী ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো মূলধনি ব্যয় ভারত সরকার বহন করে আসছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিচালন খরচ বাবদ প্রতিবছর সার্ক সদস্য রাষ্ট্রগুলো চাঁদা দিয়ে থাকে। 
উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে গঠিত হয় সার্ক। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ২০০৭ সালে যোগ দেয় আফগানিস্তান। আঞ্চলিক এ সংস্থাটির লক্ষ্য ছিল সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বিশ্বাস গড়ে তোলা। তবে দীর্ঘস্থায়ী সংকট ও সম্পর্কে টানাপোড়েনের কারণে এক দশকের বেশি সময় ধরে সার্কের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব চিঠিতে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত চাঁদা দিয়ে এলেও করোনা মহামারি এবং পরে কৃচ্ছ্রসাধন নীতির কারণে সম্পূর্ণ চাঁদা পরিশোধের বদলে টোকেন চাঁদা দেওয়া হয়। এতে করে গত জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের বকেয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০ লাখ ৫৩ হাজার ৬৯০ মার্কিন ডলার, স্থানীয় মুদ্রা যা ৩৬ কোটি ৬৪ লাখ ৪২ হাজার ৮০০ টাকা। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের জন্য নিয়মিত চাঁদা ১৪ কোটি ৪৩ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ টাকা। অর্থাৎ মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৫১ কোটি ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৪০০ টাকা। অথচ চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা।

এ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি মহাপরিচালকের (সার্ক ও বিমসটেক) সভাপতিত্বে অর্থ বিভাগের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির সব বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিবছরের নিয়মিত চাঁদা পরিশোধের পাশাপাশি আগামী তিন অর্থবছরের মধ্যে বকেয়া চাঁদা পরিশোধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। এরই অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেট বরাদ্দ ও পুনঃউপযোজনের মাধ্যমে বকেয়া চাঁদার কিছু অংশ পরিশোধ করা যেতে পারে। একই সঙ্গে আগামী দুই বাজেটে নিয়মিত চাঁদাসহ বকেয়া পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
পররাষ্ট্র সচিব চিঠিতে উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য জোটটির বর্তমান চেয়ারম্যান নেপাল, সার্ক সচিবালয়, বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বিশেষায়িত সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দক্ষিণ এশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের বকেয়া চাঁদা পরিশোধ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এটি শুধু আমাদের আঞ্চলিক দায়বদ্ধতা পূরণ নয়, বরং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে দেশের শিক্ষার্থীর জন্য একটি মূল্যবান সুযোগ নিশ্চিত করা।
গত পাঁচ বছরে ১৪১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছেন বলে চিঠিতে জানানো হয়। এর মধ্যে ১৩৫ জন, অর্থাৎ মোট শিক্ষার্থীর ৯৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন বৃত্তি ও আর্থিক অনুদান পেয়েছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষিণ এশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, বৃত্তি ও আর্থিক অনুদানপ্রাপ্ত এবং শিক্ষক ও স্টাফ কর্মরত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির শতভাগ মূলধনি ব্যয় এবং পরিচালন ব্যয়ের ৫৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ ভারত সরকার বহন করে থাকে। তার পরও এই বকেয়া পরিশোধের 
মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে, যা ভবিষ্যতে সার্কের কার্যক্রমে বাংলাদেশের নেতৃত্ব এবং অংশগ্রহণকে আরও শক্তিশালী করবে। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের দায়িত্বশীল অবস্থান প্রতিফলিত করতে এ বকেয়া চাঁদা পরিশোধ  করা প্রয়োজন। তাই ৫১ কোটি টাকা বকেয়া চাঁদা পরিশোধের জন্য প্রাথমিকভাবে ৩০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ অনুমোদনে অনুরোধ জানানো হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সমকালকে বলেন, যে কোনো ক্ষেত্রে বাড়তি বরাদ্দের বিষয়টি নির্ভর করে সরকারের রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধির ওপর। সাম্প্রতিক সময়ে রাজস্ব সংগ্রহে বড় ধরনের ধস নেমেছে। তাই কী পরিমাণ বরাদ্দ রাখা যায়, তা নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যেই সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত হবে। তখন এ বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বক য় ব ল বর দ দ র পর শ ধ র সহয গ ত র জন য সরক র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ৩২১ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের প্রায় সমান। গত অর্থবছরে (২০২৩–২৪) মোট ৩৩৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মানে হলো, এবার প্রথম ৯ মাসেই গত অর্থবছরের কাছাকাছি ঋণ পরিশোধ হয়ে গেছে।

আজ বুধবার বিকেলে প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তৈরি জুলাই–মার্চ মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের এই তথ্য পাওয়া গেছে।

ইআরডির তথ্য অনুসারে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) দেশে মোট প্রায় ৪৮১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে। এ সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে অর্থছাড়ের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশের সমান।

অন্যদিকে আলোচ্য ৯ মাসে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধের মধ্যে আসলের পরিমাণ ২০১ কোটি ডলার। আর সুদ বাবদ ১২০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।

এদিকে গত জুলাই–মার্চ সময়ে ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গতবারের একই সময়ে পাওয়া প্রতিশ্রুতির অর্ধেকের কম। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭২৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল।

জুলাই–মার্চ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১২২ কোটি ডলার ছাড় করেছে এডিবি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ১০৭ কোটি ডলার ও জাপান ৮৯ কোটি ডলার দিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল
  • তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমেছে স্কয়ার ফার্মার
  • ৯ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা
  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
  • ২০২৭ সালের জুনের পর ‘করছাড়’ থাকবে না
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ