নিষিদ্ধ হিযবুতের মিছিল পুলিশের সঙ্গে সংঘাত
Published: 8th, March 2025 GMT
পুলিশের হুমকি উপেক্ষা করে পূর্বঘোষিত ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচি করেছে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহ্রীর। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে থেকে তাদের মিছিল শুরু হয়। হাজারো নেতাকর্মীর মিছিল শুরুতে পুলিশের দুর্বল চেষ্টার কারণে পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগরের দিকে যায়। পরে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করা হয়। তবে আবারও সংগঠিত হয়ে হিযবুতের নেতাকর্মী ইটপাটকেল ছুড়লে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে ঘণ্টাখানেক পল্টন মোড় হয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের ঘোষণা, দৃশ্যমান উপস্থিতির পরও নিষিদ্ধ সংগঠন কর্মসূচি করায় সমালোচনা হচ্ছে। বিশিষ্টজন বলছেন, এর পেছনে কোনো পক্ষের মদদ থাকতে পারে। সরকারের নমনীয় মনোভাব ছিল বলেও মনে করেন কেউ কেউ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো.
সরেজমিন দেখা যায়, জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে মিছিল বের করেন হিযবুতের কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক। তাদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন। স্লোগান দেন– মুক্তির এক পথ, খেলাফত খেলাফত; আসবে যখন খেলাফত, বিশ্ব হবে নিরাপদ; খেলাফত আসছে, দিল্লি কাঁপছে, ওয়াশিংটন কাঁপছে ইত্যাদি। মসজিদের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিট স্লোগান দেওয়া হয়। এর পর মিছিল নিয়ে পল্টন মোড়ের দিকে গেলে ১০ জনের মতো পুলিশের একটি দল বাধা দেয়। বাধা ভেঙে হিযবুত কর্মীরা পল্টন মোড়ে আসেন। এখানে আরেক দফা বাধা ভেঙে তারা এগোতে থাকেন। এর পরই অ্যাকশনে যায় পুলিশ। তখন হিযবুত কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করেন।
মিছিলকারীদের বড় অংশ বিজয় নগর পানির ট্যাঙ্কির দিকে যান। একটু পর আবারও সংঘবদ্ধ হয়ে মিছিল নিয়ে তারা পল্টন মোড়ের দিকে আসতে চাইলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে এবং লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়। মিছিলকারীরা অলিগলিতে ঢুকে পড়ে। এর পর কয়েক দফা অলিগলিতে ধাওয়া দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বেলা আড়াইটার দিকে পল্টন ও আশপাশের এলাকার অলিগলিতে অভিযান চালিয়ে হিযবুতের সদস্য সন্দেহে কয়েকজনকে ধরে পুলিশের গাড়িতে তুলতে দেখা যায়। সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন দৈনিক কালবেলার সাংবাদিক সুশোভন অর্ক।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার শাহরিয়ার আলী বলেন, ‘ছত্রভঙ্গ করার সময় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে।’
হিযবুতের কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় ছিল সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের যৌথ নিরাপত্তা। মসজিদে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের তল্লাশি করা হয়। পল্টন মোড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও এপিবিএন সদস্য ছিলেন। প্রস্তুত ছিল এপিসি, জলকামান ও প্রিজনভ্যান।
বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরা-১১ ও ১২ নম্বর সেকশনে অভিযান চালিয়ে মার্চ ফর খিলাফত কর্মসূচি পালন-সংক্রান্ত পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত হিযবুত তাহ্রীরের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন– মনিরুল ইসলাম, মোহতাসিন বিল্লাহ ও মাহমুদুল হাসান।
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে হিযবুত তাহ্রীরের প্রকাশ্য কর্মসূচির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা এবং তাদের কার্যক্রম ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ব্যর্থতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রকাশ্যে তৎপরতা শুরু করে হিযবুত। সর্বশেষ তুরস্কে খিলাফত পতনের ১০১ বছরের প্রেক্ষাপটে তারা ঢাকায় ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচি দেয়। এ প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার সংগঠনটির কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয় ডিএমপি। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় পুলিশ সদরদপ্তরের এক বার্তায় বলা হয়, আইন অনুযায়ী হিযবুত তাহ্রীরের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আরমানকে ছাড়িয়ে ঢামেক নিলেন উপদেষ্টা
হিযবুত তাহ্রীরের মিছিল ছত্রভঙ্গ করার সময় রাজধানীর পল্টন থেকে আরমান আলীকে আটক করে পুলিশ। তবে গতকাল বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয় থেকে তাঁকে ছাড়িয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সেখানে আসিফ জানান, আরমানকে সেনাবাহিনী সন্দেহভাজন হিসেবে ধরে ডিবি পুলিশে দিয়েছিল।
আরমান আলী জানান, তিনি কারওয়ান বাজারে একটি আড়তে কাজ করেন। বাসা ফকিরেরপুল পানির ট্যাঙ্কের কাছে। ঘটনার সময় তিনি বাসায় যাচ্ছিলেন। হিযবুত তাহ্রীরের সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন। তখন সেখান থেকে তাঁকে আটক করা হয়। পল্টনের ঘটনায় অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তিকে পুলিশ পেটাচ্ছে। তখন আরমানও লাঠি হাতে তার ওপর চড়াও হন।
সামনে ঘটতে পারে বড় ঘটনা
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি ঠিক থাকলেও মনোবল দৃঢ় ছিল না। কারণ বিপুলসংখ্যক মানুষ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ভালো না। তাই কৌশলগত কারণে হয়তো ভিন্ন পদ্ধতিতে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেছে পুলিশ। যদিও যথেষ্ট সাফল্য দেখাতে পারেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মসূচির বিষয়ে সরকারের নমনীয় মনোভাব ছিল। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সেভাবে কঠোর হতে পারেনি। অনুকূল পরিবেশ পেয়ে সংগঠনটি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। সামনে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, ‘প্রকাশ্যে কর্মসূচির পেছনে কোনো পক্ষের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদ আছে কিনা দেখা দরকার। তাদের এমন কর্মকাণ্ড গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সংস্কার ও নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে পারে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র সময় সদস য আরম ন মসজ দ গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।”
উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”
পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।”
তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস