ফেনীতে আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় অধিকাংশ আমন ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। ফসল নষ্ট হওয়ার পর জমি খালি পড়েছিল। এ সময় অন্য কোনো ফসল চাষাবাদ করার মতো সময়ও ছিল না। কৃষি বিভাগ চাষিদের পতিত জমিতে সরিষা চাষ করতে বলে। তারা সার ও বীজ দেয়। অনাবাদি সেই জমিতে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। সরিষা চাষে আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের তেরবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জাফর আহমদ। তিনি বলেন, ‘বন্যার পর চাষিরা ছিলেন দিশাহারা। কারণ আমন ফসলের ক্ষেত সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সরিষা চাষে আমনের ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নিতে পেরেছি আমরা।’ লেমুয়া ইউনিয়নের তেরবাড়িয়া গ্রামের ফজলুল হক জানান, তিনি ৪২ শতক জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি। পরিবারের জন্য ভোজ্যতেল, জ্বালানি এবং গবাদি পশুর জন্য খৈলও মিলছে সরিষা থেকে। পরিবারের চাহিদার অতিরিক্ত তেল বিক্রি করে ভালো আয়ের আশায় আছেন ফজলুল হক।
কৃষকরা জানান, ধানের চেয়ে সরিষা চাষে খরচ কম। তাই বোরো চাষের আগে খরচ পোষাতে সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন কৃষকরা। যেসব জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে, সেখানে বোরো আবাদে ভালো ফলন পাওয়া যায়। কৃষি বিভাগ সরিষার বীজ, সার দিয়েছে। সরিষা পাকার আগে পাতা ও ফুল ঝরে পড়ে জমিতে জৈব সার তৈরি করে।
কৃষাণী বিবি খোদেজা ও হাছিনা বেগম বলেন, ‘বন্যায় আমন ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেলে সরিষা চাষ করেছি। কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা করেছে। সংসারে তেলের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করতে পারছি।’ কৃষি উদ্যোক্তা নেছার উদ্দিন ও মোহাম্মদ রিমন বলেন, ‘বন্যা-পরবর্তী সময়ে ধানের ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় সরিষা চাষ করেছি। ভালো ফলনও হয়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছর জেলায় ৬ হাজার ৬৬ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর প্রায় ৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ৫০০ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে দেড় মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হয়। চলতি বছর ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শিপন চৌধুরী বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অল্প খরচে বেশি লাভবান হওয়া যায় এমন কিছু ফসল আবাদ করতে চেয়েছিলেন। আমরা তাদের সরিষা আবাদ করতে পরামর্শ দিই। কৃষকরা আমাদের কথা শুনে লাভবান হয়েছেন।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫