শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহাদাত হোসেনের পরিবারে সদস্য সংখ্যা পাঁচ। ফুলের দোকানের কর্মচারী হিসেবে দৈনিক তাঁর গড় আয় ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। জমানো কিছু টাকার সঙ্গে মা-ভাইয়ের কাছ থেকে ধার করে ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর প্রথম দফায় স্থায়ী আমানত হিসেবে (ফিক্সড ডিপোজিট) দুই লাখ টাকা জমা দেন স্থানীয় একটি সমিতিতে। ২০২২ সালের ১০ আগস্ট তিনি আরও তিন লাখ টাকা জমা দেন। ২০২৩ সালে মেয়াদ শেষে তাঁকে মোট সাড়ে সাত লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। বহু দেন-দরবার করে সোয়া লাখ টাকা ফেরত পেলেও বাকি টাকার জন্য হয়রান শাহাদাত। 
তাঁর মতোই ১২৫ জনের কাছ থেকে এভাবে স্থায়ী আমানত সংগ্রহ করে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার জনসেবা উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের সমবায়ী প্রতিষ্ঠানটি। সব মিলিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সমবায়ী এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর টাকা দিতে পারেননি তিনি। এখন টাকা জমা দেওয়া ব্যক্তিদের রোষানল থেকে রক্ষায় তিনিসহ প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীই পলাতক। 
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালে যশোর জেলা সমবায় অধিদপ্তর থেকে জনসেবা উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেড নিবন্ধন পায় (নং ৬৩/জে/২০১৬)। মনিরামপুর পৌর শহরের দক্ষিণমাথায় একটি সুসজ্জিত অফিস ভাড়া নিয়ে সমিতির কার্যক্রম শুরু হয়। একজন ব্যবস্থাপকসহ কয়েকজনকে মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা পর্যায়ক্রমে ৩৫০ জনকে সমিতির সদস্য করেন। সমবায় অধিদপ্তর ওই সমিতিকে কোনো প্রকার ফিক্সড ডিপোজিট বা মাসিক মুনাফাভিত্তিক স্কিম চালুর অনুমতি দেয়নি। এরপরও বিপুল অঙ্কের মুনাফার লোভ দেখিয়ে তারা ১২৫ জনের কাছ থেকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে টাকা জমা নিতে থাকেন। 
শুরুতে যে ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, সেই শাহাদাতের বাড়ি উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের মাছনা গ্রামে। তিনি দুই দফায় পাঁচ লাখ টাকা জমা দেন। মেয়াদ শেষে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল তাঁকে। সম্প্রতি এ প্রতিবেদককে শাহাদাত বলেন, তাঁর বাবা নেই। মা ও ভাই দিনমজুর। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও ফুলের দোকানে কাজ করেন। মা-ভাইসহ চেনা-পরিচিত লোকজনের কাছ থেকে ধার করে ওই সমিতিতে দুই দফায় টাকা জমা দেন পাঁচ লাখ। ২০২৩ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অনেক ঘোরাঘুরি করে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা ফেরত পান। বাকি টাকার জন্য স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) তারিখবিহীন একটি চেক দেওয়া হয়। ব্যাংকে গিয়ে দেখেন সেই হিসাবে টাকা নেই। 
ভুক্তভোগী আরও কয়েকজনের ভাষ্য, সমবায় অধিদপ্তরের অনুমতি না থাকলেও সমিতির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান ও সেক্রেটারি এমএ গফ্‌ফার সমবায় আইন উপেক্ষা করেন। তারা দেড় থেকে দ্বিগুণ লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে চার বছর থেকে সাত বছর মেয়াদি ফিক্সড ডিপোজিট স্কিম ও মাসিক মুনাফাভিত্তিক ডিপোজিট স্কিম চালু করেন।
এমন ভুক্তভোগীদের একজন শ্যামকুড় ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের ভাজা বিক্রেতা মাসুদুর রহমান। তিনি জমা দিয়েছিলেন চার লাখ টাকা। আমিনপুর গ্রামের পল্লিচিকিৎসক মনিরুজ্জামানও জমা দেন পাঁচ লাখ টাকা। মনিরুজ্জামান ওই টাকা জমা দেন ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি। ৬ বছর পর ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁকে সমিতি থেকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। তাঁকে এ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে সব মিলিয়ে ৩ লাখ টাকা।
মনিরুজ্জামান বলেন, অধিক লাভের প্রলোভনে অন্য একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এই টাকা জমা দেন। তাঁকেও এসআইবিএলের পাঁচ লাখ টাকার তারিখবিহীন চেক দেওয়া হয়। ব্যাংকে গিয়ে দেখেন অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। 
এসব গ্রাহকের ভাষ্য, গত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রাতারাতি অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাইনবোর্ড নামিয়ে সমিতির সভাপতি মাহাবুবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা পালিয়ে যান।
এই চক্রের হোতা মাহাবুবুর রহমান। তিনিই সমিতির সভাপতি। মাহাবুবুর রহমানের বাড়ি উপজেলার ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামে। যদিও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি শ্যামকুড় ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। 
জনসেবা সমিতির সেক্রেটারি এম এ গফ্‌ফার দাবি করেন, তিনি সেক্রেটারি হলেও সমিতির সব টাকা-পয়সা ছিল সভাপতি মাহাবুবুর রহমানের হেফাজতে। এসব টাকার দায়ভার সভাপতির ওপরই চাপিয়ে দেন তিনি। এম এ গফ্‌ফারের ভাষ্য, ইতোমধ্যে মাহাবুবুরের কাছ থেকে এ ঘটনায় নিজের দায়মুক্তির একটি লিখিত নিয়েছেন। 
ভুক্তভোগীদের রোষানল থেকে রক্ষা পেতে মাহাবুবুর রহমান, সমিতির ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান, মাঠকর্মী মোস্তাফিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা আত্মগোপনে চলে যান। তবে অনেক চেষ্টার পর মাহাবুবুর রহমানের মোবাইল ফোনে সংযোগ মেলে। তিনি বলেন, পাওনাদারের টাকা পারিশোধের জন্য নিজের সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করছেন। বিক্রি করতে পারলে শিগগিরই সব শোধ করে দেবেন। 
কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে এমন অভিযোগ দেওয়া হয়নি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা তারিকুল ইসলামের কাছে। তিনি বলেন, জনসেবা সমিতিকে কোনোরকম ফিক্সড ডিপোজিট বা মাসিক মুনাফাভিত্তিক স্কিম চালুর অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারা সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ কারণে ২০২৪ সালের জুনে সমিতিটির নিবন্ধন জেলা সমবায় অধিদপ্তর বাতিল করেছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সমব য় ম হ ব ব র রহম ন র মন র জ জ ম ন জনস ব উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘মাস্তান’কে ছাড়া রিয়ালের অ্যানফিল্ড–অভিযান এবং সালাহর রেকর্ডের হাতছানি

অ্যানফিল্ডে যাওয়ার ঠিক আগে হঠাৎ দুঃসংবাদ পেল রিয়াল মাদ্রিদ। লিভারপুলের বিপক্ষে আজ রাতে খেলতে পারবেন না ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো। দলের মেডিকেল বিভাগ জানিয়েছে, আর্জেন্টাইন এই মিডফিল্ডার ভুগছেন ‘স্পোর্টস হার্নিয়া’-তে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা লিখেছে, মাস্তানতুয়োনো কবে ফিরতে পারবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে আজকের ম্যাচে তাঁর না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত।

গতকাল অনুশীলনেও ছিলেন না মাস্তানতুয়োনো। সাধারণত প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন করে রিয়াল। কিন্তু এবার কোচ জাবি আলোনসো একটু ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছেন। অ্যানফিল্ডে সাংবাদিকদের সামনে কৌশল প্রকাশ না করে তিনি শেষ অনুশীলন সেরেছেন ক্লাবের নিজস্ব মাঠ ভালদেবাসে। মার্কার বিশ্লেষণ, প্রতিপক্ষ যেন শেষ মুহূর্তে কিছু বুঝে না ফেলে, সে জন্যই আলোনসোর এ সিদ্ধান্ত।
রিয়ালের বর্তমান ফর্ম অবশ্য কোনোভাবেই লুকানো যাচ্ছে না। লা লিগায় গত পরশু রাতে ভ্যালেন্সিয়াকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে তারা। এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৪ ম্যাচে এটি তাদের ১৩তম জয়। একমাত্র হারের স্বাদ লিগে। ১২৬ বছরের ইতিহাসে রিয়ালের এর চেয়ে ভালো সূচনা হয়েছে মাত্র দুবার, সর্বশেষ ১৯৬১-৬২ মৌসুমে।

লিভারপুলের অনুশীলনে ভার্জিল ফন ডাইক ও মোহাম্মদ সালাহ

সম্পর্কিত নিবন্ধ