নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির উদ্দেশে নৌযানে পণ্য মজুদ রেখে ‘ভাসমান গুদাম’ হিসেবে ব্যবহার করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। রমজানে এসব পণ্য অতিরিক্ত দামে বিক্রি করাই তাদের লক্ষ্য। তবে বিষয়টি জানতে পেরে এরই মধ্যে অভিযানে নেমেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। ঢাকা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত নৌপথের বিভিন্ন পয়েন্টে লাইটারেজ জাহাজসহ পণ্যবাহী অন্যান্য নৌযানে তল্লাশি করা হচ্ছে।

কোস্ট গার্ডের ঢাকা অঞ্চলের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তাকিউল আহসান সমকালকে বলেন, ঈদ সামনে রেখে যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযানের নিরাপত্তায় চলছে বিশেষ টহল। চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জের পাগলা স্টেশনের দ্রুতগতির ১৮টি স্পিড বোট দিন-রাত নৌপথে টহল দিচ্ছে। বিশেষ করে এ সময়ে নৌযানে ভাসমান গুদাম বানানোর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এভাবে মজুদ করে কোনো পণ্যের দাম যেন বাড়াতে না পারে, সেজন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। 

সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা–চাঁদপুর নৌপথে টহল দিচ্ছে কোস্ট গার্ডের দ্রুতগতির কিছু নৌযান। সন্দেহজনক বাল্কহেড ও লাইটারেজ জাহাজকে সংকেত দিয়ে থামানো হচ্ছে। এরপর চালানো হচ্ছে তল্লাশি। আবার কেউ সংকেত অমান্য করলে টহলে থাকা স্পিড বোটগুলো গতি বাড়িয়ে দলবদ্ধভাবে সংশ্লিষ্ট নৌযানকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলছে। তখন থামতে বাধ্য হচ্ছে সেই নৌযান।

কোস্ট গার্ড সূত্র বলছে, চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫টি বাণিজ্যিক ও লাইটারেজ জাহাজে যৌথ অভিযান চালানো হয়েছে। এ ধরনের অভিযানের মাধ্যমে রমজান মাসে অন্যান্য খাদ্যপণ্যের মতো ভোজ্য তেলের সংকট ও দাম কমে যাবে বলে আশা তাদের।

কোস্ট গার্ডের এক কর্মকর্তা জানান, চাঁদপুরের হাইমচরে গত বছরের ডিসেম্বরে সারবাহী জাহাজে সাতজনকে হত্যার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোয় ২৪ ঘণ্টা টহল দেওয়া হচ্ছে। দেশের সমুদ্র বন্দর, বহির্নোঙরে অবস্থানরত বৈদেশিক বাণিজ্যিক জাহাজ ও অভ্যন্তরীণ রুটের নৌযানের সার্বিক নিরাপত্তা দিচ্ছে কোস্ট গার্ড। অভ্যন্তরীন রুটের নৌযানগুলোর নিয়মিত রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস ইত্যাদি যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করছে তারা। বহির্নোঙ্গরে ছিঁচকে চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদক পাচার ও বাণিজ্যিক জাহাজে অবৈধভাবে পণ্য কেনাবেচা বন্ধে বছরব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। চোরাই মালপত্র বিক্রির স্থানে নিয়মিত যৌথ অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে এসব অপরাধ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া কোষ্ট গার্ড সুন্দরবন ও সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজের নিরাপত্তায় কাজ করছে। সুন্দরবনের গহিনে পর্যটকদের জরুরি সেবা এবং অসুস্থ পর্যটকদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর মাধ্যমে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।  

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ খাদ্যসামগ্রী ও ভোজ্য তেলবাহী জাহাজকে নোঙ্গর এলাকায় ৭২ ঘন্টার বেশি অবস্থানের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব জাহাজ যেন দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারে তা নিশ্চিত করতে কোস্ট গার্ড নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। সুনীল অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে সমুদ্র, উপকূলীয় ও নদী তীরবর্তী অঞ্চলে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অভ য ন

এছাড়াও পড়ুন:

দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত

নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।

সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাট

আজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।

জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।

গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খুলছে শনিবার, জাহাজ চালাবেন না মালিকরা
  • সুন্দরবনের বড় গেছো প্যাঁচা