৪৪ ফুট নকশিকাঁথায় সেজেছে ধানমন্ডির আড়ং
Published: 11th, March 2025 GMT
৪৪ ফুট দৈর্ঘ্যের নকশিকাঁথা দিয়ে সাজানো হয়েছে আড়ংয়ের ধানমন্ডির নতুন বিক্রয়কেন্দ্র। নিচতলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত এক দেয়ালে সাঁটানো আছে এই নকশিকাঁথা। এ নিয়ে ক্রেতা–দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় নকশিকাঁথা বলে অনেকেই বলছেন।
জানা গেছে, ২৫০ জন কারিগর প্রায় ৬ মাস সময় নিয়ে তৈরি করেন ৪৪ ফুট দৈর্ঘ্যের এই নকশিকাঁথা। যা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে পুরোনো কাপড়, অব্যবহৃত পুঁতি আর ফেলে দেওয়া অলংকারের টুকরা। বিক্রয়কেন্দ্রটির মূল আকর্ষণ এই নিচতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত দেয়ালে লাগানো ‘মহারঙ্গ’ নামের নকশিকাঁথা। সেখানে এই মহারঙ্গের পরিচিত তুলে ধরা হয়েছে।
কাঁথাটির এক অংশে ভেসে উঠেছে গোধূলির আলো, আবার ঠিক এর ওপরই দেখা মেলে পরিচিত নগরীর দৃশ্যপট। একেবারে ওপরের অংশে ফুটে উঠেছে এক বৃদ্ধার আপনমনে তাঁত বোনার দৃশ্য। তাঁর চারপাশে নীল ও সাদার মিশেলে আভা দিচ্ছে মহাজাগতিক রশ্মি। কাঁথাটির প্রতিটি ভাঁজে যেন লুকিয়ে আছে বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও শত বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাসের স্পন্দন ও প্রতিধ্বনি।
ঈদ উপলক্ষে গত শুক্রবার উদ্বোধনের পর থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে এই নকশিকাঁথা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নতুন এই বিক্রয়কেন্দ্রে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা আসছেন। তাঁদের অনেকেই আগ্রহ নিয়ে এই নকশিকাঁথা দেখছেন।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুধু কেনাকাটা নয়, নান্দনিক বিক্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখতে এসেছেন অনেকে। বন্ধুদের নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা মেডিকেল শিক্ষার্থী তাসফিয়া তারান্নুম লাবণ্য বলেন, ‘নকশিকাঁথাটি দেখে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বলতে পারবে, আমাদের লোকসংস্কৃতি কতটা জনপ্রিয় ও সমৃদ্ধ।’
শুধু ধানমন্ডি আড়ং নয়; দেশের সব বিক্রয়কেন্দ্রেই দেশীয় কারুপণ্য ও নকশাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। গ্রামবাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে তুলে আনা হয়। বিশ্বের অন্যতম বড় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হলো আড়ং।
কেনাকাটার পাশাপাশি ঘুরতেও আসেন অনেকে৬০ হাজার বর্গফুটের আটতলাবিশিষ্ট বিক্রয়কেন্দ্রটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারুশিল্পের বিক্রয়কেন্দ্র বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আড়ংয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, উদ্বোধনের দিন প্রায় ২৬ হাজার ক্রেতা ও দর্শনার্থী এসেছেন বিক্রয়কেন্দ্রে। তবে ঈদ সামনে রেখে সকালেও ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা যায়।
সরকারি চাকরিজীবী সেলিনা আক্তার বলেন, ‘বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি বরাবরই উঠে আসে আড়ংয়ের পণ্যে। এখানে কাপড়ের মান ভালো এবং পোশাক পরে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। তাই আড়ংয়ে কেনাকাটা করতে আসি। জায়গা বড় হওয়ায় হাঁটাহাঁটি করে পছন্দমতো পোশাক কেনা যাচ্ছে।’
ভবনজুড়ে দেখা মিলবে ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্পের। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামীণ ইতিহাস ঐতিহ্য উঠে এসেছে। এ ছাড়া আছে তামা ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাচের ঝুলন্ত শিল্পকর্ম। ভবনটি এখন শুধু বিক্রয়কেন্দ্রই হয়ে ওঠেনি, তুলে ধরেছে মানুষের ঐতিহ্য ও সৃষ্টিশীলতা। প্রায় পাঁচ মাস সময় নিয়ে তৈরি করা হয় ভবনজুড়ে করা শিল্পকর্ম।
আরেক ক্রেতা রাইস আল দীন বলেন, ‘পণ্যের ভিন্নতা বেশি হওয়ায় এখানে এসেছি। ছোট ভাইকে পাঞ্জাবি কিনে দিলাম, ভিডিও কলের মাধ্যমে পরিবারের বাকি সদস্যদের পছন্দের পোশাক কিনেছি।’
কোথায় কী পাওয়া যায়ভবনের ভূগর্ভস্থ তলায় (বেজমেন্ট) গৃহস্থালি পণ্য; আর প্রথম তলায় আড়ং আর্থ ও ডেইরি পণ্য। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় নারীদের জন্য শাড়ি, জুয়েলারি, জুতা, ব্যাগসহ অন্যান্য পণ্যের সমাহার। পঞ্চম তলায় শিশুদের জন্য রংবেরঙের পোশাক ও জুতা। পাশাপাশি এই তলায় রয়েছে শিশুদের খেলার জায়গা (গ্রিন প্লে গ্রাউন্ড)। যেখানে মা, বাবা বা অভিভাবকেরা শিশুদের নিরাপদে রেখে যেন কেনাকাটা করতে পারেন।
এ ছাড়া ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় পাওয়া যাবে পুরুষদের জন্য শার্ট, পাঞ্জাবি, বই ও গাছ। সপ্তম তলায় রয়েছে বাংলা খাবারের রেস্তোরাঁ অরেঞ্জ প্যারট। অবশ্য এখনো তা চালু হয়নি। ভবনটিতে আছে গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা।
আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের জন্য প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত খোলা থাকে বিক্রয়কেন্দ্রটি। এ ছাড়া বিক্রয়কেন্দ্রটিতে তাদের উপ-ব্র্যান্ড তাগা, তাগা ম্যান ও হারস্টোরিরও আলাদা স্থান রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ক রয়ক ন দ র দ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।