দেশে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক হারে উর্ধ্বমুখী। কিডনি রোগের কারণে শুধু ব্যক্তিগত জীবনই বিপর্যস্ত হয় না বরং এই রোগ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপরও বিশাল অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে। কিডনি রোগের মারাত্মক পরিণতি, অতিরিক্ত চিকিৎসা খরচ এবং চিকিৎসা ব্যয় সাধ্যাতীত হওয়ায় সিংহভাগ রোগী প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।

বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটির (ক্যাম্পস) আয়োজনে আজ  মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এমন তথ্য জানান।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা.

এম এ সামাদ। তিনি তার মূল প্রবন্ধে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কিডনি রোগ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে একটি। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কিডনি রোগের প্রকোপ বাড়ছে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থূলতার মতো অসংক্রামক রোগের কারণে। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ শুধু দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। এই সংখ্যা ডায়াবেটিস রোগীদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ এবং ক্যান্সার রোগীদের চেয়ে প্রায় বিশ গুণ। মৃত্যুর কারণ হিসেবে কিডনি রোগ ১৯৯০ সালে ছিল ১৯তম স্থানে, বর্তমানে দাঁড়িয়েছে সপ্তম স্থানে, এভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সালে দখল করে নেবে পঞ্চম স্থান। আবার উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশে কিডনি রোগের হার সবচেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশেও কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক। তথ্য মতে, প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কিডনি রোগী ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল হয়। শহর ও গ্রামাঞ্চলে সমানভাবে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। দারিদ্র্য, অসচেতনতা, চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। আরও ২৪ থেকে ৩০ হাজার রোগী হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে সাময়িক ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। এই রোগ আমাদের দেশের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা। পক্ষান্তরে, সবাই যদি কিডনি রোগের ব্যাপকতা, ভয়াবহতা, পরিণতি ও কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং স্বাস্থ্য সম্মত জীবনযাপন করে তা হলে ৬০-৭০ ভাগ ক্ষেত্রে এই মরণঘাতী কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব।

কিডনি রোগের সাধারণ কারণগুলো হলো- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, স্থূলতা, নেফ্রাইটিস, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, ব্যাথানাশক ঔষধের অতিরিক্ত ব্যবহার, জন্মগত ও বংশগত কিডনি রোগ, মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ ও পাথুরে রোগী। আমরা একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবো যে, প্রায় সবগুলো কারণই আমাদের অস্বাস্থ্যকর জীবন ধারার সঙ্গে জড়িত, একটু সচেতন হলে প্রতিরোধ যোগ্য। তাছাড়া যারা ঝুঁকিতে আছেন যেমন যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বেশি, বংশে কিডনি রোগ আছে, যারা ধূমপায়ী, যারা তীব্র মাত্রার ব্যাথার ঔষধ খেয়েছেন, যাদের পূর্বে কোনো কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে তাদের বছরে অন্তত ২ বার প্রস্রাব ও রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করে নেওয়া উচিৎ। কেননা প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ডা. সামাদ বলেন, কিডনি বিকলের চিকিৎসা সর্বাধিক ব্যয়বহুল। ফলে চিকিৎসা করতে গিয়ে পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। তাই ক্যাম্পস এর স্লোগান ‘কিডনি রোগ জীবননাশা-প্রতিরোধই বাঁচার আশা’ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই। অর্থাৎ কিডনি রোগ প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করে চিকিৎসার মাধ্যমে মরণব্যাধি কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ডন ক ডন র গ এই র গ

এছাড়াও পড়ুন:

ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে মামলা খুবই বিরক্তিকর: ফারুকী

অভিনেতা ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ার বিষয়টি খুবই বিরক্তিকর ও উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

আজ সোমবার সচিবালয়ে কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশি শর্টফিল্ম ‘আলী’র প্রদর্শনীর আমন্ত্রণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথাগুলো বলেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মিরপুরে গুলিতে বিএনপিকর্মী মাহফুজ আলম (শ্রাবণ) হত্যার অভিযোগে অভিনেতা ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এখন সরকারের অংশ, অ্যাকটিভিস্ট নই। অ্যাক্টিভিস্ট হলে কথা বলতাম বেশি। সরকারের অংশ হওয়ায় আমাকে কথা কম বলে কাজ বেশি করতে হয়।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘ইরেশ জাকেরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। জুলাই আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন। ফলে এটা ডিপলি ট্রাবলিং অ্যান্ড ডিপলি ডিস্টার্বিং (খুবই বিরক্তিকর ও উদ্বেগজনক)।’ তিনি বলেন, ‘মামলা করেছেন একজন, এটি রাষ্ট্রপক্ষের মামলা নয়। আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, মামলা করার স্বাধীনতা সবার আছে। সেই স্বাধীনতার কেউ অপব্যবহারও করছেন।’

সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, পুলিশ এটার সঠিক তদন্ত করবে। যেটা সত্য, সেটার পক্ষে থাকবে, যেটা মিথ্যা, সেটা বাতিল করবে।’

এ বিষয়ে আপনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারের অনেক কাজ আমরা প্রকাশ্যে বলতে পারি না। আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কোনো কিছু কিংবা যা কিছু সাংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত, সেগুলোর সঙ্গে আমি বা আমার মন্ত্রণালয় জড়িত থাকি। তবে সব ক্ষেত্রে আমরা বলি না এই কাজ আমরা করছি।’

সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা অনেক কাজ করছি। যেটা আমাদের দায়িত্ব। সেই বিষয়ে পিআর (জনসংযোগ) করি না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে মামলা খুবই বিরক্তিকর: ফারুকী