পিএইচডি স্তরের এআই এজেন্ট কী, কতটা বাস্তবসম্মত
Published: 12th, March 2025 GMT
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির নতুন আলোচিত ধারণা ‘পিএইচডি স্তরের এআই এজেন্ট’। সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ নির্বাহী ও বিশ্লেষকদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। শক্তিশালী এই এআই মডেলগুলোর সক্ষমতা নিয়ে যেমন আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তেমনি বাস্তব প্রয়োগ ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
সম্প্রতি দ্য ইনফরমেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওপেনএআই কয়েকটি বিশেষায়িত এআই এজেন্ট চালুর পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে গবেষণা সহায়ক এজেন্টকে বলা হচ্ছে পিএইচডি স্তরের এআই এজেন্ট। এআই এজেন্টটি ব্যবহারের জন্য প্রতি মাসে খরচ করতে হবে ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা ২৪ লাখ টাকা (প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ১২০ টাকা ধরে)। ওপেনএআইয়ের দাবি, পিএইচডি স্তরের এআই এজেন্ট গবেষকদের মতো তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারবে। জটিল গবেষণা পরিচালনায় সহায়তা করার পাশাপাশি বিশাল তথ্যভান্ডার থেকে গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে দেবে।
ওপেনএআইয়ের দাবি, ওওয়ান ও ওথ্রি এআই মডেল গবেষকদের চিন্তার প্রক্রিয়া অনুকরণ করতে সক্ষম। এই মডেলগুলো ‘প্রাইভেট চেইন অব থট’ নামে একটি কৌশল ব্যবহার করে। এ কৌশলের মাধ্যমে গবেষকেরা সমস্যা সমাধানের সময় যে পদ্ধতিতে চিন্তা করেন, তা অনুকরণ করা হয়। প্রচলিত লার্জ ল্যাংগুয়েজ মডেল (এলএলএম) সাধারণত ব্যবহারকারীর প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেয়। কিন্তু ওপেনএআই এর নতুন মডেলগুলো ধাপে ধাপে অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ করে যুক্তিসম্মত সমাধান দিয়ে থাকে। আর তাই এই এআই এজেন্ট চিকিৎসা গবেষণা বিশ্লেষণ, জলবায়ু মডেলিং এবং গবেষণার বিভিন্ন পর্যায়ে সহায়তা করতে পারবে।
ওপেনএআইয়ের তথ্যমতে, ওথ্রি মডেল এআরসি-এজিআই ভিজ্যুয়াল বিশ্লেষণ পরীক্ষায় ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছে, যেখানে মানুষের গড় নম্বর ৮৫ শতাংশের বেশি হয়ে থাকে। তা ছাড়া এটি জিপিকিউএ ডায়মন্ড পরীক্ষায় ৮৭ দশমিক ৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে এ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প এইচড
এছাড়াও পড়ুন:
এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনবেন যেভাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত লেখা যায়। আর তাই বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট, প্রবন্ধ, ই–মেইল থেকে শুরু করে গবেষণাপত্র, পত্রিকার কলাম লেখায় এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে অনেক এআই মডেল মানুষের লেখার মতোই সাবলীলভাবে লিখতে পারায় সেগুলো মানুষ না এআই লিখেছে, তা সহজে বোঝা যায় না। তবে বেশ কিছু বিষয় পর্যালোচনা করে এআই দিয়ে লেখা বার্তা বা লেখা শনাক্ত করা সম্ভব। এআই দিয়ে তৈরি লেখা চেনার পদ্ধতিগুলো দেখে নেওয়া যাক।
এম ড্যাশ ব্যবহারবিভিন্ন এআই টুলে যে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহার করা হয়, সেখানে প্রায়ই এম ড্যাশের অতিরিক্ত ব্যবহার দেখা যায়। সাধারণ লেখার ক্ষেত্রে আমরা এম ড্যাশ ব্যবহার করি না। সে ক্ষেত্রে কোনো লেখায় এম ড্যাশের উপস্থিতি থাকলে তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই মডেলগুলো মূলত নিজস্ব তথ্যভান্ডারে থাকা তথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। এম ড্যাশ সাধারণত বই বা লেখা ছাপানোর সময় বিরতি বা অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য প্রকাশে ব্যবহার করা হয়। এআই বিভিন্ন প্রকাশিত বইপত্রের লেখার শৈলী অনুকরণ করে বলে এম ড্যাশ বেশি ব্যবহার করে থাকে। আর তাই লেখায় অতিরিক্ত এম ড্যাশ ব্যবহার হলে তা এআই দিয়ে তৈরি বলে ধারণা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনএআই দিয়ে বানানো ছবি চিনবেন কীভাবে২২ আগস্ট ২০২৪যান্ত্রিক শব্দচয়নএআই মডেলগুলো প্রায়ই কিছু প্যাটার্ন ও শব্দকে পুনরাবৃত্ত করে, আর তাই এআই দিয়ে লেখায় পুনরাবৃত্তিমূলক বাক্য গঠন ও শব্দচয়ন বেশি দেখা যায়। শুধু তা–ই নয়, এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় একই ধরনের বাক্য গঠন বেশি চোখে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের সংযুক্তমূলক শব্দ যেমন এ ছাড়া, অতএব, ফলস্বরূপ বেশি ব্যবহার করে এআই মডেলে। আবার বিশেষ কিছু বিশেষণ বারবার ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। আর তাই লেখায় যান্ত্রিক শব্দচয়ন বেশি থাকলে বুঝতে হবে সেটি এআই দিয়ে লেখা।
গভীরতার অভাবএআই তথ্য সংগ্রহে পারদর্শী হলেও মানুষের মতো জটিল বা মৌলিক বিশ্লেষণ করতে পারে না। আর তাই এআইয়ের তৈরি লেখায় গভীরতা ও বিশ্লেষণের অভাব দেখা যায়। এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় তথ্য উপস্থাপন বেশি থাকলেও লেখকের ব্যক্তিগত মতামত বা মানবীয় ভাব অনুপস্থিত থাকে। এআই দিয়ে তৈরি লেখাতে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, আবেগ বা গভীর চিন্তার অভাব থাকে। ফলে লেখাগুলোতে তথ্যের সারসংক্ষেপ বা অতিরঞ্জিত তথ্য দেখা যায়। এআই প্রায়ই এমন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে, যা ব্যাকরণগতভাবে সঠিক হলেও মানুষের স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন আলাপে অনুপস্থিত থাকে।
আরও পড়ুনএআই দিয়ে কণ্ঠ নকল করে প্রতারণা শনাক্ত করবেন যেভাবে২৫ মে ২০২৫মানবিক দিক অনুপস্থিতখুব স্বাভাবিকভাবে এআই দিয়ে লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা আবেগের অনুপস্থিতি থাকে। কিন্তু মানুষের লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, হাস্যরস বা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। এআই মডেল গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন সমাধান করতে পারলেও মানবিক স্পর্শ তৈরি করতে পারে না। যখন লেখা নিরপেক্ষ বা আবেগহীন মনে হয়, তখন তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই দিয়ে তৈরি লেখায় বেশ অনাকাঙ্ক্ষিত অসংগতি বা তথ্যের ভুল দেখা যায়।
আরও পড়ুনএআই প্রযুক্তি দিয়ে প্রতারণা বাড়ছে জিমেইলে, নিরাপদ থাকবেন যেভাবে১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এআই দিয়ে লেখা চেনার একাধিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পরও নিজের বিচার–বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। শুধু তা–ই নয়, বিষয়ে সঙ্গে লেখার প্রাসঙ্গিকতাও বিবেচনা করতে হবে। এ বিষয়ে ছোট একটি পরীক্ষা করা যাক। দুটি অনুচ্ছেদ পড়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিন কোন লেখাটি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে।
ক. সুন্দরবনের শ্বাসমূল থেকে কক্সবাজারের বেলাভূমি—বাংলাদেশ এক বৈচিত্র্যময় দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত এই ব-দ্বীপ সুজলা-সুফলা। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেলে এটি যেন এক জীবন্ত জাদুঘর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই ভূমি সত্যিই মন মুগ্ধ করে তোলে।
খ. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ, যেখানে সবুজ গ্রাম আর নদীর ঢেউয়ে জীবন প্রবাহিত হয়। এখানকার মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতা, আর সংস্কৃতিতে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য।
লেখাগুলো পড়ে অনেকেই বলবেন ‘ক’ অনুচ্ছেদের লেখাটি এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কেউ বলবেন ‘খ’ অনুচ্ছেদের কথা। তবে মজার বিষয় হচ্ছে ‘ক’ ও ‘খ’ দুটি অনুচ্ছেদই গুগলের জেমিনি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে। আর তাই এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনতে বেশ সতর্ক থাকতে হবে।
সূত্র: সেলজি ও ইস্ট সেন্ট্রাল কলেজ