মাদারীপুরে তিনজনকে হত্যা প্রধান আসামিসহ দু’জন গ্রেপ্তার
Published: 13th, March 2025 GMT
মাদারীপুরে দুই ভাইসহ তিনজনকে হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত মঙ্গলবার রাতে তাদের পৃথক স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, র্যাব-৮ ও র্যাব-৪ যৌথভাবে মঙ্গলবার গভীর রাতে ঢাকার আশুলিয়ায় অভিযান চালায়। এ সময় কাঁঠালতলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে তিনজনকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি হোসেন সরদারকে (৬০) গ্রেপ্তার করে তারা। অন্যদিকে মাদারীপুর র্যাব ক্যাম্পের একটি দল একই রাতে শরীয়তপুরের পালং থানার আরিগাঁও এলাকা থেকে অপর আসামি সুমন সরদারকে (৩৩) গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় এর আগে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
র্যাব জানায়, চাঞ্চল্যকর এ হত্যার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে র্যাব-৮ এর নজরে আসে। তারা আসামিদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। এ মামলার আসামিরা দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। গোয়েন্দা তথ্য ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে র্যাব-৪ এর সহযোগিতায় তারা প্রধান আসামি হোসেন সরদারকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। একইভাবে শরীয়তপুরে অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত অন্যতম আসামি সুমন সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার হোসেন সরদার নিহত সাইফুল সরদার ও আতাউর সরদারের চাচা মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুরের মৃত আছমত আলী সরদারের ছেলে। গ্রেপ্তার সুমন সরদার সদর উপজেলার বাবনাতলা এলাকার হাছেন সরদারের ছেলে।
গত শনিবার মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের খোয়াজপুর এলাকায় অবৈধ বালু ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আপন দুই ভাই সাইফুল সরদার (৩৫) ও আতাউর সরদার (৪০) এবং চাচাতো ভাই পলাশ সরদারকে (১৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনজনকে হত্যার ঘটনায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৮০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। নিহত দুই ভাইয়ের মা সুফিয়া বেগম পরদিন রোববার সকালে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ন সরদ র ত নজনক র সদর
এছাড়াও পড়ুন:
‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে চাঁদাবাজি, ৩ যুবককে গণপিটুনি দিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর
সাতক্ষীরার দেবহাটায় সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় তিন যুবককে আটক করেছে স্থানীয় জনতা। এ সময় তাদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলও আটক করা হয়। তবে আটক তিনজনের সাথে থাকা অপর দু’জন পৃথক একটি মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার পুষ্পকাটি সরদার বাড়ি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
আটককৃতরা হলো- দেবহাটা উপজেলার বহেরা গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে মো. নাহিদ হোসেন (৩০), আশাশুনি উপজেলার গোদাড়া গ্রামের আব্দুস সবুর গাজীর ছেলে মো. আব্দুর রহমান (৩২) ও শ্যামনগর উপজেলার কালিঞ্চি গ্রামের আফতাব আলীর ছেলে মো. আব্দুর রহিম (৩৫)।
পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে পালিয়ে যাওয়া দুই সহযোগীসহ আটককৃতরা পুষ্পকাটি গ্রামের আ’লীগ নেতা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম রব্বানীর বাড়িতে গিয়ে চাঁদা দাবি করে। বাদানুবাদের সূত্র ধরে তারা ওই বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর শুরু করে। একপর্যায়ে তারা নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা গোলাম রব্বানীকে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় স্থানীয়রা সংঘবদ্ধ হয়ে তিনজনকে আটক করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আটককৃতদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে রাতে আটক তিন যুবককে দেবহাটা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
আ’লীগ নেতা গোলাম রব্বানীর ভাই আব্দুর রব জানান, বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে পাঁচ যু্বক দু’টি মোটরসাইকেলযোগে তার ভাইয়ের বাড়িতে যায়। এ সময় তারা নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে স্থানীয় জনৈক রফিকের কাছে পাওনা ৫০ হাজার টাকার জন্য এসেছেন বলে গোলাম রব্বানীকে জানান। কথোপকথনের একপর্যায়ে তারা গোলাম রব্বানীকে বাড়ির বাইরে ডেকে নিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় বাদানুবাদের সময় আটককৃতরা তার ভাইকে ছুরিকাঘাত করে এবং বাড়িতে ঢুকে ভাংচুরসহ লুটতরাজ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা সম্মিলিতভাবে হামলাকারীদের ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলে।
পরে ওই গ্রামের নৌবাহিনীতে কর্মরত এক ব্যক্তির মাধ্যমে সেনা ক্যাম্পে যোগাযোগ করে। পরে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর আটককৃতদের সেনাবাহিনীর হাতে ও মোটরসাইকেল পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
আব্দুর রবের দাবি, তার ভাই আ’লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হওয়ায় এবং ইট ভাটার মালিক হওয়ার সুযোগে আটককৃতরা চাঁদা দাবি করেছিল। দুই সহযোগী পালিয়ে গেলেও আটক তিন তরুণকে স্থানীয়রা গণপিটুনি দেয় বলেও তিনি স্বীকার করেন।
গোলাম রব্বানী জানান, তিনি ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। পাঁচ তরুণ দুপুরের দিকে অস্ত্রসহ তার বাড়িতে প্রবেশ করে চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা না পেয়ে তার দুই বাহুসহ পিঠে ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত করে। এ সময় স্থানীয়দের সহায়তায় তিনজনকে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। তার দাবি পালিয়ে যাওয়া দুই তরুণ তার বাড়ি থেকে ৯ লাখ টাকাসহ স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। আটককৃতদের মোটরসাইকেল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর সাতক্ষীরা সদর ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর ইফতেখার আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনজনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
এবিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেবহাটা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক মুজাহিদ ফিরোজ জানান, গোলাম রব্বানী আওয়ামী লীগের নেতা। সমন্বয়করা বৃহস্পতিবার তার বাড়িতে গেলে তাদের উপর পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে তিনজনকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। এটা একটি গভীর ষড়যন্ত্র।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলা কমিটির আহ্বায়ক আরাফাত হোসেনের ভাষ্য, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী ছিল তারা (আটককৃতরা)। তবে বর্তমানে তাদের কেউ কোনো কমিটিতে নেই। বরং নানা অপরাধমূলক অপতৎপরতায় জড়িত। সমন্বয়ক পরিচয়ে তারা যে কাণ্ড ঘটিয়েছে তা জুলাইয়ের চেতনার পরিপন্থী। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম কিবরিয়া জানান, রাতে সেনাসদস্যরা চাঁদাবাজির সাথে জড়িত তিনজনকে থানায় হস্তান্তর করেছে। গোলাম রব্বানীর দায়েরকৃত মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হবে। পালিয়ে যাওয়া দুইজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।