ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলের মুক্তির দাবিতে নিউইয়র্কের আদালতের বাইরে শত শত মানুষের বিক্ষোভ
Published: 13th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে বিতাড়িত করার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ওপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
গতকাল বুধবার এই মেয়াদ বাড়ান যুক্তরাষ্ট্রের এক বিচারক। এদিন শুনানি চলাকালে নিউইয়র্কের আদালতের বাইরে শত শত মানুষ খলিলের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।
গত বছর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন খলিল। গত রোববার তাঁকে গ্রেপ্তার করেন মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তারা।
খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করার বিরুদ্ধে গত সোমবার সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেন ডিস্ট্রিক্ট জজ জেসি ফারম্যান। তিনি গতকাল শুনানির পর একটি লিখিত আদেশে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ান।
খলিলকে গ্রেপ্তার করাটা অসাংবিধানিক কি না, তা বিবেচনা করার জন্য আরও সময় নেওয়ার লক্ষ্যে বিচারক এমন আদেশ দিয়েছেন।
গতকাল নিউইয়র্ক শহরের আদালতকক্ষে শুনানি চলার সময় বাইরে খলিলের মুক্তির দাবিতে শত শত মানুষ বিক্ষোভ করেন। তাঁরা মুহুর্মুহু স্লোগান দেন, ‘মাহমুদ খলিলকে এখনই মুক্তি দিন।’
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের একটি নথি দেখেছে রয়টার্স। নথিটির বরাতে বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে, ২৯ বছর বয়সী খলিলকে একটি আইনি বিধানের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অভিবাসীদের কারও উপস্থিতিকে যদি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হচ্ছে না বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে, তাহলে তাঁকে বিতাড়িত করার কথা এই বিধানে বলা আছে।
গতকাল আদালতে খলিলের আইনজীবী রামজি কাসেম বলেন, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হওয়ায় তাঁর মক্কেলকে শনাক্ত করে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
খলিলকে গ্রেপ্তারের পর প্রথমে নিউ জার্সিতে আটক রাখা হয়। পরে তাঁকে লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালতের সবশেষ আদেশের ফলে খলিল সম্ভবত আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত লুইজিয়ানার আটককেন্দ্রেই আটকাবস্থায় থাকবেন। তাঁর আইনজীবীরা চান, তাঁকে নিউইয়র্কে ফিরিয়ে আনা হোক। তাঁকে আটকাবস্থা থেকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হোক।
ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত খলিলের স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক। খলিল ২০২২ সালে শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যান। তিনি গত বছর স্থায়ী বাসিন্দা হন।
গতকাল আদালতের সংক্ষিপ্ত শুনানিতে আইনজীবী কাসেম বলেন, লুইজিয়ানার আটককেন্দ্র থেকে তাঁর মক্কেল আইনজীবী দলের সঙ্গে ফোনে মাত্র একবার কথা বলতে পেরেছেন। কিন্তু কথা শেষ হওয়ার আগেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফোনের কথোপকথন সরকারি কর্তৃপক্ষ রেকর্ড করেছে, নজরদারি চালিয়েছে।
খলিলকে গ্রেপ্তার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট। সংস্থাটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশে তারা খলিলের গ্রিন কার্ড বাতিল করার পরিকল্পনা করেছে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার১০ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ব ত ড় ত কর ন উইয়র ক আইনজ ব গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সুবিচার মিলবে কত বছরে
হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের মামলাটির সুবিচার কত বছরে মিলবে– এমন প্রশ্ন তুলেছেন রাঙামাটির রাজনীতিকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার আলোচিত এই ঘটনার ২৯ বছর উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় এমন প্রশ্ন করেন তারা।
এ সময় বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকার মামলাটির তদন্তের নামে ২৯ বছর ধরে তামাশা করে যাচ্ছে। এই বিচার না হওয়ার জন্য তারা দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতিকেও দায়ী করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা শাখা যৌথভাবে আশিকা হল রুমে সভাটির আয়োজন করে। এতে কল্পনা চাকমা মামলার আইনজীবী জুয়েল দেওয়ান বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০২৪ সালে অপহরণ মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এ সময় আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে বাদী কল্পনা চাকমার বড় ভাই কালেন্দী কুমার চাকমা রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তা গৃহীত হয়। আগামী ১৭ জুন মামলাটির শুনানি হবে।
তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা প্রতিবেদনে কল্পনা চাকমা অপহরণের শিকার হয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন। তবু বিচার ও তদন্তের নামে তামাশা চলছে। তিনি প্রকৃত সত্য উদঘাটনের মাধ্যমে মামলার সমাপ্তি টানার দাবি জানান।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘কল্পনা চাকমার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা স্পষ্ট করে দেখেছিলেন, কারা এই অপহরণ করেছিলেন। বিষয়টি শুধু আমাদের দেশে সীমাবদ্ধ নয়, সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। মানবধিকার সংস্থা থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ সবাই স্বীকার করেছে কল্পনা চাকমা অপহৃত হয়েছেন। কিন্তু বিচারের বাণী নিভৃতে কেঁদে কেঁদে মরছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় এক বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও আলোর মুখ দেখেনি। এ স্বাধীন-সার্বোভৌম দেশে শুধু পাহাড়ের মানুষই নয়, দেশের সুবিধাবঞ্চিত সব মানুষ অধিকার থেকে বঞ্চিত।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির জেলা শাখার সভাপতি রিতা চাকমার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন আইনজীবী কক্সি তালুকদার, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কবিতা চাকমা।