Samakal:
2025-11-03@02:20:39 GMT

দেয়ালের ওপারে

Published: 13th, March 2025 GMT

দেয়ালের ওপারে

বাঘাইর চরটি উত্তাল যমুনা নদীর মাঝ বরাবর। শুষ্ক মৌসুমে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। বর্ষায় সময় কম লাগলেও প্রমত্তা নদীর স্রোত ভেঙে মানুষ একান্ত অনন্যোপায় না হলে নদীতীরে আসে না। এই চরের উৎপত্তি কবে, কত বছর আগে থেকে মানুষ বসবাস শুরু করেছে, তা বৃদ্ধরাও বলতে পারে না। চরের মাঝ বরাবর মানববসতি। 
ফি-বছর বন্যার পানি যখন নেমে যায়, রেখে যায় নষ্টবিনষ্ট ধানক্ষেত, ভেঙে পড়া বাড়িঘর– সেই সাথে মানুষের স্বপ্ন। তবু মানুষ এখানে আছে। যাওয়ার জায়গা নেই। নদী পয়স্তি এই চর খাসজমি– নদী শিকস্তি পরিবারগুলো মামলা-মোকদ্দমা চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর– সমাধান নেই। 
কালাম এসব নিয়ে ভাবে– নাহ, এসব চিন্তা করে লাভ নেই, বরং বাড়িঘর মেরামত, জমিতে ফের আবাদ– এই তাদের নিয়তি। 
সে এটুকু জেনেছে, তার জীবন মানে, বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করা। বউ সুলতানা প্রতিদিন সকালে উঠে নীরবেই তার নির্ধারিত কাজ শুরু করে। ভাঙাচোরা ঘরটিতে রান্না করে, মোরগ-মুরগিকে খাবার দেয়, ছেঁড়া কাপড় সেলাই করে, আর ছেলের দেখাশোনা করে। অবসর সময়ে তার চোখেও শূন্যতা।
এমন নয় যে তার স্বপ্ন ছিল না। তারও স্বপ্ন ছিল, তবে এখন সে স্বপ্ন দেখার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। 
কালাম মাঝে মাঝে তাকে দেখে ভাবে, ‘আমি কি ওর জন্য, বাচ্চাটার জন্য কিছু করতে পারি? এই জীবন কি বদলানো সম্ভব?’ ভাবতে ভাবতে খেই হারিয়ে আবারও সে নিজের কাজে মনোনিবেশ করে।
২.


গ্রামের দক্ষিণ কোণে জলাভূমি পেরিয়ে একটা সাদা দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে। এই গ্রামের ইতিহাসের মতো পুরোনো। কেউ জানে না এটি কে তৈরি করেছে, কেন তৈরি করেছে! তবে দেয়ালটি নিয়ে অনেক গল্প রয়েছে। 
একজন বয়স্ক মানুষ– কাসেম মাতবর, প্রায়ই বলে, ‘এই দেয়ালের ওপারে যা আছে, তা মানুষের চোখে দেখার জন্য নয়। সেখানে গেলে কেউ আর ফিরে আসে না। এ পর্যন্ত যারা দেয়াল টপকে গিয়েছে তারা কেউই ফিরে আসেনি। দেয়ালের ওপারে স্বপ্নের পৃথিবী।’
কালাম জলাভূমি পেরিয়ে কখনও দেয়ালের কাছে যায়নি। যেতে ইচ্ছে করে। অনেক মানুষই জলাভূমিতে ছোট ছোট কোশা নৌকা নিয়ে মাছ ধরে। দেয়ালের কাছে যায় না। 
কাসেম মাতবরের বলা গল্পগুলো তার মনে কৌতূহল জাগায়। বিশেষ করে যখন তার নিজের জীবন ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে গেছে। গেল বছরের মতো এ বছরেও বন্যায় তার জমির সব ফসল শেষ। ঘর ভেঙে গেছে। অর্পণের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দেওয়াও কষ্ট। 
রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে, তখন সে ভাঙা জানালার ফাঁক দিয়ে জলাভূমির ওপারে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ভাবে, ‘এমনও তো হতে পারে দেয়ালেরই ওপারে আমার স্বপ্ন পূরণের চাবি।’ 
শিশুকাল থেকেই দেয়ালটি নিয়ে তার মনে নানা কৌতূহল। সেই কৌতূহলের কথা শুধু সুলতানাকেই বলেছে– আর কাউকে নয়। সাহসী কালাম কিশোর বয়স থেকেই ভাবে, সুযোগ পেলে সে দেয়ালের ওপরে উঠে দেখবে কী আছে। দেয়ালের ওপারে যাবে না।
পূর্ণিমার এক রাতে কালাম সুলতানাকে না বলে চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে জলাভূমির কাছে আসে। আকাশে তখন সোনার থালার মতো পূর্ণ চাঁদ। 
আকাশের গায়ে সেঁটে থাকা অসংখ্য তারকা যেন কালামকেই দেখছে। চাঁদের আলোয় জলাভূমির পানিতে ভেসে থাকা সাদা শাপলা, লাল পদ্ম ফুলগুলো অপূর্ব এক সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। 
জলাভূমির ঘাটে বেঁধে রাখা একটা কোশা নৌকা নিয়ে সে দেয়ালের দিকে বৈঠা চলায়। দূরে নদীর দিকে তাকালে মনে হয়, সে যেন তাকে পেছনে ডাকছে। নদীর স্রোতের গর্জনও পরিষ্কার শোনা যায়। তবুও কালাম দৃঢ়প্রতিজ্ঞ– যেহেতু ঘর থেকে বের হয়েছে, আজ সে ফিরে যাবে না। 
জলাভূমি পেরিয়ে কালাম দেয়ালের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কাছে থেকে দেয়ালটি আরও অদ্ভুত মনে হয়। তার গায়ে কোনো ফাটল নেই, তবু এটি যেন স্থির কিছু নয়। ধোঁয়ার মতো কাঁপে। কালাম হাত বাড়িয়ে দেয়াল ছোঁয়ার চেষ্টা করে। ধোঁয়া তার আঙুলের ভেতর দিয়ে চলে যায়। 
সে ভয় পায়, আবার কৌতূহলও হয়। ধীরে ধীরে সে দেয়ালের গায়ে পা রাখে। দেয়ালের গায়ে পা রাখতেই সে দেখে দেয়াল নেই। 
ওপারে নানা বর্ণের ফুলের বাগান। পৃথিবী যেন স্বপ্নের মতো! সবকিছু নিখুঁত সাজানো। আকাশে উজ্জ্বল আলো। বাতাসে মিষ্টি গন্ধ। মূল্যবান পোশাক পরিহিত লোকেরা হাসছে– সুখী মানুষের মতো। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে কালাম কিছু অস্বাভাবিকতাও লক্ষ করে। মানুষগুলোর চোখে যেন একধরনের শূন্যতা। তারা জীবিত না মৃত বোঝা যায় না।
কালাম ভাবে, ‘স্বর্গে চলে এলাম?’
একটি লোক এগিয়ে আসে। তার মুখে হাসি, কিন্তু তার চোখ পুরোটাই সাদা– চোখের অক্ষিগোলক নেই। সে বলে, ‘এখানে তুমি নতুন বুঝি? তোমার গায়ে নোংরা পোশাক দেখে তাই মনে হয়। এখানে তুমি সব পাবে। কোনো দুঃখ নেই, কোনো কষ্ট নেই। যা চাইবে, তাই হবে।’
কালাম অবাক হয়ে চারপাশ দেখে। সত্যিই তার যা প্রয়োজন, তা সে শুধু মনে চাইলেই উপস্থিত হয়। কিন্তু তার মন অস্বস্তিতে ভরে যায়। এখানে কোনো কাজ নেই, পরিশ্রম নেই, আশেপাশের বাগানে অসংখ্য খাবার সাজিয়ে রাখা– হাত বাড়িয়ে খেয়ে নিতে হয়। এখানে ঝাঁ চকচকে রোদ নেই, ঝোড়ো বাতাস নেই, ঘনঘোর বৃষ্টি নেই, অন্ধকার নেই। শুধুই কৃত্রিম সুখ। 
কালাম কয়েকদিন সেই পৃথিবীতে থাকে। তার মনে হয়, সে বেঁচে নেই, বরং একধরনের ঘোরের মধ্যে আছে। দিনগুলো যেন একঘেয়ে। কিছুই বদলায় না। সুলতানার কথা, অর্পণের কথা খুব মনে পড়ে। ওরা কীভাবে আছে? খাচ্ছেই-বা কী? একদিন সে দেয়ালের কাছে ফিরে আসে এবং গ্রামে ফেরার চেষ্টা করে। কিন্তু দেয়ালটি যেন শক্ত হয়ে গেছে। ধোঁয়ার বদলে সেটি পাথরের মতো হয়ে গিয়েছে। 
হঠাৎ তার চারপাশের লোকেরা তার দিকে তাকায়। তাদের চোখে অদ্ভুত শূন্যতা, কিন্তু এবার সেই শূন্যতা ভয়ানক। তারা এগিয়ে আসে। 
কালাম চিৎকার করে, ‘আমি এখানে থাকতে চাই না! আমাকে আমার গ্রামে ফিরতে দাও!’
একজন লোক বলে, ‘তুমি ফিরতে পারবে না। তুমি আমাদের মতো হয়ে যাও। এখানে সুখ আছে।’
এই পৃথিবী একধরনের মায়া। এ পৃথিবী সুখী দেখায়, কিন্তু এতে কোনো প্রাণ নেই। মনে মনে ভাবে, ‘আমাকে ফিরতেই হবে।’
আবারও শক্তি জড়ো করে সে দেয়ালের দিকে দৌড়ায়। দেয়াল ভেদ করার চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়। কিন্তু চেষ্টা থামায় না। সমগ্র ইচ্ছাশক্তি জড়ো করে সে বারংবার চেষ্টা করতে থাকে। 
হঠাৎ মনে হলো দেয়াল বুঝি ক্ষণিকের জন্য আবারও ধোঁয়ায় পরিণত হলো। পরের চেষ্টাতেই কালাম দেয়ালের ভেতর দিয়ে ছুটে বেরিয়ে আসে। তার রেখে যাওয়া কোশা নৌকা তেমনই আছে। ভয়ে কেউ নিশ্চয় নৌকার খোঁজে এতদূর আসেনি। 
গ্রামে ফিরে এসে কালাম দেখতে পায়, সবকিছু ঠিক আগের মতো। নদী তার স্বভাবসুলভ গর্জনে বইছে। সুলতানা তাকে দেখে কিছু বলতে পারে না– শুধু কাঁদে। অর্পণ ছুটে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। গ্রামের লোকেরা জড়ো হয়। তারা জানতে চায়, ‘দেয়ালের ওপারে কী দেখেছ?’
কালাম তাদের বলে, ‘দেয়ালের ওপারে যা দেখেছি, তা আমাদের জন্য নয়। সেখানে সুখ আছে, কিন্তু প্রাণ নেই।’
“সেটা কেমন?”
“সেখানে কিছু পেতে কোনো কষ্ট করতে হয় না। আমি বুঝেছি, এই কষ্টই আমাদের প্রাণ।’
তার কথা কেউ বিশ্বাস করে, কেউ করে না। কালাম সিদ্ধান্ত নেয়, সে আর দেয়ালের দিকে ফিরে তাকাবে না। আবার জমিতে কাজ শুরু করে। সুলতানা তাকে দেখে হাসে। অর্পণ বাবার পাশে বসে তার গল্প শোনে।
একদিন অর্পণ বলে, ‘বাবা, আমরা কি কখনও সেই দেয়ালে যাব না?’
কালাম মাথা নাড়ে। ‘না, বাবা। আমরা এখানেই থাকব। যা খুঁজছি, তা এখানেই আছে।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ত র মন ক ত হল শ ন যত

এছাড়াও পড়ুন:

চীনের ‘৯৯৬’ ছড়িয়ে পড়ছে সিলিকন ভ্যালিতে, আপনি কী করবেন

‘৯টা থেকে ৫টা’ পর্যন্ত কাজ করাকে সাধারণ জীবিকা উপার্জনের উপায় বলা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে এখন প্রতিযোগিতামূলক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে হলে ‘৯৯৬’ কাজ করতে হয়। অন্তত আশপাশের মানুষকে দেখাতে হয় যে আপনি কাজটাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

‘৯৯৬’ মানে হচ্ছে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করা। এ ধারার যাত্রা শুরু হয় চীনের কঠিন পরিশ্রমী টেক ইন্ডাস্ট্রি থেকে। ২০২১ সালে চীনের একটি উচ্চ আদালত কোম্পানিগুলোকে ৭২ ঘণ্টার কাজের সপ্তাহ চাপিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ করে। কিন্তু তবু ক্যালিফোর্নিয়ার টেক কর্মীরা এই ধারণাটিকে আঁকড়ে ধরে আছে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় এক্স আর লিংকডইনে এটি নিয়ে অবিরত পোস্ট করে যাছে।

আরও পড়ুনএআই বাড়াচ্ছে কাজের চাপ, চীনের ‘৯৯৬’ সংস্কৃতি কি ফিরছে১২ অক্টোবর ২০২৫

এখনো এর প্রমাণ মূলত গল্প-গুজব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই সীমিত। তবে কিছু কোম্পানি চাকরির বিজ্ঞাপনে কর্মী ৭০ ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন সপ্তাহে—এই প্রত্যাশা স্পষ্ট করা থাকছে। শোনা যাচ্ছে, নির্বাহীরা চাকরিপ্রার্থীদের জিজ্ঞাসা করছেন, তাঁরা কি এ ধরনের সময়সূচি মানতে রাজি। আর ‘র‍্যাম্প’ নামের একটি ফাইনান্সিয়াল অপারেশন স্টার্টআপ এক ব্লগ পোস্টে জানিয়েছে, এ বছরের প্রথমভাগে সান ফ্রান্সিসকোতে শনিবারের দিনে করপোরেট ক্রেডিট কার্ড লেনদেন বেড়েছে, যেটি তারা ধরে নিয়েছে, মানুষ বেশি উইকেন্ডেও কাজ করছেন।

যদিও সিলিকন ভ্যালির জন্য শব্দটি নতুন, ৯৯৬ আসলে বহুদিনের চর্চার এক তীব্র সংস্করণ। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ মার্গারেট ও’মারা, যিনি ‘দ্য কোড: সিলিকন ভ্যালি অ্যান্ড দ্য রিমার্কিং অব আমেরিকা’ বইয়ের লেখক, বলছেন, ১৯৬০ সাল থেকেই যখন সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলো তীব্র প্রতিযোগিতায় ছিল, তখন থেকেই অনেক টেক কোম্পানির কঠোর, দীর্ঘ সময় কাজ করার সংস্কৃতি ছিল। বাইরে থেকে তারা ছিল ‘ক্যালিফোর্নিয়া ক্যাজুয়াল’ কিন্তু ভেতরে ‘পুরোনো দিনের কর্মপাগল’।

বার্কলের সমাজবিজ্ঞানী ক্যারোলিন চেন। তিনি ‘ওয়ার্ক প্রে কোড’ বইয়ের লেখক। তিনি বলেন, টেক কর্মীদের একধরনের তীব্র, প্রায় ধর্মীয় ভক্তিভরে কাজ করার মানসিকতা সিলিকন ভ্যালির সংস্কৃতির অংশ। তিনি আরও বলেন, টেকে একধরনের ‘নায়কোচিত পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি’ আছে, যা সবার কাছেই সব সময় কাজ করার প্রত্যাশা তৈরি করে।

মার্গারেট ও’মারা মনে করেন, এই হ্যাস্টল কালচার যাদের পরিবার বা অন্য দায়িত্ব আছে, তাদের নাগালের বাইরে এবং এটি এমনিতেই একরঙা (কম বৈচিত্র্যময়) শিল্প খাতকে আরও সংকীর্ণ করে তুলতে পারে। তবে যারা বড় কোনো আইডিয়ায় প্রথমেই ঢুকে পড়তে পেরেছে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে রাজি ও সক্ষম, তাদের জন্য পুরস্কার বিশাল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এখন যেভাবে বিপুল বিনিয়োগ আসছে, তা ভবিষ্যতের সম্পদকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। একই সময়ে টেক কর্মীরা আগের তুলনায় অনেক বেশি অনিরাপদ বোধ করছেন।

কয়েক বছরের ছাঁটাই, উচ্চ সুদের হার আর অনিশ্চিত মুনাফার পরে টেক ইন্ডাস্ট্রি—যা একসময় দারুণ বেনিফিটের জন্য পরিচিত ছিল—এখন কড়াকড়ি চালু করেছে। ইলন মাস্কের নিজেকে ঘোষিত ‘অত্যন্ত কঠোর’ কাজের ধরন এখন আর পুরো ইন্ডাস্ট্রি থেকে আলাদা নয়। সিলিকন ভ্যালিতে এখন ‘হার্ড টেক’ যুগ চলছে, আর পাগলের মতো কাজ করা (অথবা অন্তত এমনভাবে কাজের কথা বলা) হয়ে উঠেছে নতুন নিয়ম।
ও’মারা বলেন, ২০২০ সালের সিলিকন ভ্যালি আর ২০২৫ সালের সিলিকন ভ্যালির অগ্রাধিকার ভিন্ন।

আরও পড়ুনদৈনিক ১২ ঘণ্টা, সপ্তাহে ছয় দিন কাজের দিকেই কি যাচ্ছে যুক্তরাজ্য১৩ অক্টোবর ২০২৫

অতিরিক্ত কাজে মানবিক ক্ষতি

অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার মানবিক ক্ষতি প্রমাণিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করলে ৩৫ শতাংশ বেশি স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয় এবং ১৭ শতাংশ বেশি হৃদ্‌রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত কাজের ফলে কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যায়, মনোযোগ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয় এবং সৃজনশীলতা হ্রাস পায়।

ব্যবসার জন্যও ক্ষতিকর ‘৯৯৬’

কোম্পানিগুলো মনে করতে পারে, ৭০ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহ উৎপাদনশীলতা বাড়ায়, কিন্তু গবেষণা বলছে, উল্টো কথা। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ জন পেনক্যাভেল দেখিয়েছেন, সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টার পর উৎপাদনশীলতা দ্রুত কমতে থাকে। সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করা কর্মীদের উৎপাদন প্রায় ৫৫ ঘণ্টা কাজ করা কর্মীদের সমান, অর্থাৎ বাড়তি পরিশ্রম কোনো ফল দেয় না।

কর্মীদের করণীয়: সচেতনতা ও আত্মরক্ষা

এই সংস্কৃতি অর্থাৎ সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টার কর্মসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ার আগেই কর্মীদের সচেতন হওয়া জরুরি।

১. সতর্ক থাকুন
চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে যদি ‘২৪/৭ উপস্থিতি’ বা ‘অসীম প্রাপ্যতা’র উল্লেখ থাকে, সাবধান হোন। সাক্ষাৎকারে সরাসরি জিজ্ঞাসা করুন সাপ্তাহিক গড় কাজের সময় ও ওভারটাইম নিয়ে।

২. আইনি অধিকার সম্পর্কে জানুন
আপনি আওয়ারলি (ঘণ্টা অনুযায়ী) নাকি এক্সেম্পট (ওভারটাইম ছাড়া স্থায়ী বেতনভুক্ত), তা বুঝুন।

৩. সীমানা নির্ধারণ করুন
নিজের কাজের সময় নথিবদ্ধ করুন, ছুটি (পিপিও) অবশ্যই ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত কাজের সময়ের বাইরে প্রাপ্যতার বিষয়ে স্পষ্ট যোগাযোগ রাখুন।

দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকার কৌশল: বেশি নয়, স্মার্ট কাজ

চীনের ৯৯৬ অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, অতিরিক্ত কাজ স্বল্প মেয়াদে ফল দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা ভালো ফল আনে না। কর্মীর চাকরি ছেড়ে দেওয়া, উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া এবং সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

স্মার্ট কোম্পানিগুলো এখন এআইকে ব্যবহার করছে মানুষের কাজের চাপ কমাতে, যাতে কর্মীরা সৃজনশীল ও কৌশলগত কাজে মনোযোগ দিতে পারেন সীমিত ও ভারসাম্যপূর্ণ সময়ের মধ্যে। যেসব প্রতিষ্ঠান ফ্লেক্সিবল কাজের সুযোগ, সত্যিকারের ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স এবং টেকসই ক্যারিয়ার তৈরি করছে, তারা এখন প্রতিভাবান কর্মী নিয়োগে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাচ্ছে।

তথ্যসূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও ফোর্বস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জামায়াতের
  • চীনের ‘৯৯৬’ ছড়িয়ে পড়ছে সিলিকন ভ্যালিতে, আপনি কী করবেন