ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের আর্থিক সম্পর্ক নিয়ে সাংবাদিকেরা কেন লেখেন না, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘অমুক অমুক ব্যবসায়ীর সঙ্গে অমুক অমুক রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক রয়ে গেছে, আছে। কখনো ১৫০০ কোটি টাকা, কখনো ১০০ কোটির কথা কেন শুনি আমরা? কেন আপনারা লেখেন না এগুলা।’

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে শুক্রবার সন্ধ্যায় এ প্রশ্ন তোলেন মির্জা আব্বাস।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সাংবাদিকদের দায়দায়িত্ব অনেক।.

..সাংবাদিক ছোট হতে পারেন, কিন্তু আপনার কলমের কালিটা কিন্তু অনেক দামি।’

অসির চেয়ে মসির জোর অনেক—সে কথা স্মরণ করিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনাদের লেখা, আপনাদের বলা, আপনাদের কথায় কিন্তু জাতির অনেক লাভ হবে।’
মির্জা আব্বাসের মতে, দেশের ক্ষয়ক্ষতি কিংবা ভালো–মন্দের দায়দায়িত্বের ২৫ ভাগ রাজনীতিবিদেরা বহন করেন। আর ৫০ ভাগ বহন করেন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকেরা।

সাংবাদিকেরা যদি কারও মাধ্যমে প্রভাবিত না হন এবং যদি সঠিক কথাটা বলেন, তাহলে দেশটা অনেক এগিয়ে যায়।

ঢাকা শহরের রাস্তা আগের চেয়ে পাঁচ ফুট উঁচু করার পরও ভারী বৃষ্টি হলে কেন জলাবদ্ধতা হয়, সে বিষয়ে গৃহায়ণ ও পূর্তমন্ত্রী থাকা অবস্থায় কী বলেছিলেন, সেটিও বক্তব্যে উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘দখলদারদের বিরুদ্ধে আমি কথা বলেছিলাম। আমি কথা বলেছিলাম বসুন্ধরার বিরুদ্ধে। আমি কথা বলেছিলাম যমুনার বিরুদ্ধে। আমি কথা বলেছিলাম অনেক ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে।’

মির্জা আব্বাস বলেন, অনেক সংবাদমাধ্যম বাস্তব চিত্র ঘুরিয়ে–পেঁচিয়ে লেখে। অনেক সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক, মালিক কিংবা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কারণে সঠিক সংবাদ লিখতে পারেন না। তিনি বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আছে, সাংবাদিকের নেই।

গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ উল্লেখ করে ডিআরইউর ইফতার অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, সমালোচনাকে তাঁরা স্বাগত জানান। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে দেশের স্বার্থকে বিবেচনায় রাখতে হবে। তাহলে এই সমালোচনা সংশোধন ও পরিমার্জনে সহযোগিতা করবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউর সভাপতি আবু সালেহ আকন। সঞ্চালক ছিলেন ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল ছ ল ম র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ডিআরইউর সদস্যদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেবে ‘খোলা জানালা’

পেশাগত মানসিক চাপ মোকাবিলায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্যদের জন্য প্রথমবারের মতো নিয়মিত ও বিনা মূল্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ‘খোলা জানালা’ কার্যক্রম চালু করল সংগঠনটি।

আজ মঙ্গলবার ডিআরইউর শফিকুল কবির মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

উদ্যোগটির অংশ হিসেবে প্রতি ১৫ দিন পরপর ডিআরইউ প্রাঙ্গণে সদস্য সাংবাদিকদের জন্য গোপনীয়, পেশাদার ও সম্মানজনক পরিবেশে মনোবিজ্ঞানী ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বিনা মূল্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে। এই সেবা দেবেন আন্তর্জাতিক মানের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা ‘মনের বন্ধু’র প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ পেশাজীবীরা।

ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ‘মনের বন্ধু’র হেড অব মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রাম ও লিড সাইকোলজিস্ট কাজী রুমানা হক এবং স্কুল অব লিডারশিপ নির্বাহী পরিচালক জামিল আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিআরইউর যুগ্ম সম্পাদক নাদিয়া শারমিন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডিআরইউর সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও মুরসালিন নোমানী, বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি গাযী আনোয়ার এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাই তুহিন। অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করা সাংবাদিকদের কেউ কেউ তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যসচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় অনেক শিশুশিক্ষার্থী অস্বাভাবিক আচরণ করছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সাংবাদিকসহ যাঁরা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় রয়েছেন, তাঁদের কাছে পৌঁছাতে হবে। মরদেহ গোপনের কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেককে প্রত্যেকের পাশে থাকতে হবে। কাঙ্ক্ষিত দেশ গড়তে সবার সহযোগিতা খুব জরুরি। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকদের বুদ্ধিভিত্তিক চর্চার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা প্রয়োজন। তিনি ডিআরইউর এ আয়োজনকে সাধুবাদ জানান এবং সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, ‘হাঁসের মতো সাংবাদিকদের সব দুঃখ, ভয়, সমস্যা ঝেড়ে ফেলতে হবে। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধে বিশ্বাসী হতে হবে। প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে কর্মপরিবেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে।’

সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, বছরব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনার অংশ হিসেবে এ আয়োজন। এর আগে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছে। কোভিডের সময় বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারিভাবে কোভিড বুথ স্থাপনসহ ডেন্টাল, ডায়াবেটিস, গাইনি, মেডিসিন, কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প চালু রেখেছে ডিআরইউ। এ ছাড়া সদস্যদের সেবাদানের জন্য শিগগিরই হেলথ কর্নার, জরুরি সেবাদানে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, নারী সদস্য ও সন্তানদের জরায়ু ক্যানসারের টিকা এবং সদস্যদের নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

‘খোলা জানালা’ সেবা কার্যক্রমের আহ্বায়ক নাদিয়া শারমিন বলেন, ‘আমরা সাংবাদিকেরা অন্যের কণ্ঠস্বর হই, কিন্তু নিজেদের মানসিক যুদ্ধের কণ্ঠস্বর চাপা পড়ে যায়। “খোলা জানালা” সেই অন্ধকার দূর করার একটি সাহসী উদ্যোগ।’

অনুষ্ঠানে বলা হয়, ‘খোলা জানালা’ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হচ্ছে সাংবাদিকদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা। ট্রমা, উদ্বেগ, বিষণ্নতা, অনিদ্রা ইত্যাদি সমস্যা মোকাবিলায় সহায়তা করা, পেশাগত মানসিক স্থিতি ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা। এ ছাড়া সহানুভূতিশীল ও সহায়ক সাংবাদিকতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা। ডিআরইউ মনে করে ‘খোলা জানালা’ মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উদ্যোগটি শুধু একটি সেবা নয়, এটি সাংবাদিকদের মানসিক সুস্থতাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার একটি প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ। এটি দেশের অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠন ও গণমাধ্যম সংস্থার জন্যও একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সংস্কার ভেঙে সাংবাদিক সমাজে সচেতনতা ও সহানুভূতির নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানে ডিআরইউর কার্যনির্বাহী কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান, আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ, কল্যাণ সম্পাদক রফিক মৃধা, কার্যনির্বাহী সদস্য সুমন চৌধুরীসহ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডিআরইউর সদস্যদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেবে ‘খোলা জানালা’