Prothomalo:
2025-06-16@08:42:42 GMT

জাকাতে সামাজিক তাৎপর্য

Published: 15th, March 2025 GMT

ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে জাকাত একটি। এটি শুধু ধর্মীয় ইবাদতই নয়, বরং এটি সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও দারিদ্র্য বিমোচনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। জাকাত শব্দটি আরবি। এর অর্থ পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। ইসলামে জাকাত হলো ধনীদের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বণ্টন করা, যা সম্পদকে পবিত্র করে এবং সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করে।

জাকাতের ধারণা ইসলামের আগে থেকেই বিভিন্ন সমাজে বিদ্যমান ছিল। তবে ইসলামে এটি একটি সুসংগঠিত ও বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে (৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ) জাকাত ফরজ করা হয়। ইসলাম-পূর্ব সমাজে ধনী ও গরিবের মধ্যে বিশাল ব্যবধান ছিল। ধনীরা তাদের সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখত, আর গরিবরা চরম দারিদ্র্য ও অনাহারে জীবনযাপন করত। ইসলাম এই বৈষম্য দূর করতে জাকাতের বিধান চালু করে।

আরও পড়ুনজাকাত কীভাবে দেবেন১২ আগস্ট ২০২৩

ইসলামি পণ্ডিত ইউসুফ আল-কারযাভী (রহ.

) তার বই ইসলামের যাকাত বিধান-এ উল্লেখ করেছেন, প্রাচীন মিশর, ব্যাবিলন, গ্রিস ও স্পার্টার মতো সভ্যতাগুলোতে ধনীরা গরিবদের প্রতি কোনো দায়িত্ববোধ দেখায়নি। গরিবদের জন্য উচ্ছিষ্ট বা তলানি ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট রাখা হতো না। ইসলাম এই অমানবিক ব্যবস্থার বিপরীতে জাকাতের মাধ্যমে সম্পদের সুষম বণ্টনের নীতি প্রতিষ্ঠা করে।

জাকাত ফরজ হওয়ার পেছনে ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা এবং সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। পবিত্র কোরআনের সুরা জারিয়াতের ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর তাদের (ধনীদের) সম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ১৯)

জাকাতের মাধ্যমে ধনীদের সম্পদে গরিবদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি সম্পদকে পবিত্র করে এবং দাতার মনকে লোভ ও স্বার্থপরতা থেকে মুক্ত করে। সুরা তওবার ১০৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তুমি তাদের সম্পদ থেকে সদকা আদায় করো, এর মাধ্যমে তুমি তাদের পবিত্র করবে।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ১০৩)

আরও পড়ুনযাদের জাকাত দেওয়া যাবে০৭ মার্চ ২০২৫

জাকাত শুধু গরিবদের সাহায্য করাই নয়, এটি সম্পদকে বৃদ্ধিও করে। সুরা রুমের ৩৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যা সুদে দাও, তা আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জাকাত দান করে, তাদের সম্পদ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।’ (সুরা রুম, আয়াত: ৩৯)

জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকা আবশ্যক, যাকে ইসলামি পরিভাষায় ‘নিসাব’ বলা হয়। নিসাব হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত সম্পদ কমপক্ষে ৮৫ গ্রাম সোনা বা ৫৯৫ গ্রাম রুপা অথবা এর সমমূল্যের নগদ অর্থ বা সম্পদ। তবে এই পরিমাণ সম্পদ এক বছর থাকলে এর পরে জাকাত ফরজ হয়। নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে একজন মুসলমানের ওপর তার সম্পদের ২.৫ শতাংশ হারে জাকাত দিতে হয়।

জাকাতের অর্থ সঠিক খাতে বণ্টন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পবিত্র কোরআনের সুরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে জাকাতের আটটি খাত উল্লেখ করা হয়েছে:

১. ফকির: যার কোনো সম্পদ নেই বা খুব সামান্য সম্পদ আছে।

২. মিসকিন: যার আয় তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়।

৩. আমিলিন: জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণে নিয়োজিত কর্মচারী।

৪. মুয়াল্লাফাতুল কুলুব: নব্য মুসলিম বা ইসলাম গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তি।

৫. রিকাব: দাসমুক্তির জন্য জাকাতের অর্থ ব্যবহার।

৬. গারিমিন: ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি।

৭. ফি সাবিলিল্লাহ: আল্লাহর পথে জিহাদ বা ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি।

৮. ইবনে সাবিল: বিপদগ্রস্ত মুসাফির।

আরও পড়ুনজাকাত কেন গুরুত্বপূর্ণ২০ এপ্রিল ২০২৩

জাকাতের মাধ্যমে ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের চেষ্টা করে। এটি ধনী ও গরিবের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখে। জাকাতের অর্থ গরিবদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হয়, যা সমাজের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখে।

জাকাত ইসলামের একটি মৌলিক বিধান, যা শুধু ধর্মীয় কর্তব্যই নয়, বরং এটি সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যের প্রতীক। জাকাতের মাধ্যমে সম্পদ পবিত্র হয়, দাতার আত্মা পরিশুদ্ধ হয় এবং সমাজে দারিদ্র্য দূর হয়। এটি ইসলামের সার্বজনীনতা ও মানবতার প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। জাকাতের সঠিক প্রয়োগ একটি সুন্দর ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের পথ প্রশস্ত করে।

আরও পড়ুনজাকাত আদায়ের সর্বোত্তম সময় রমজান২৫ মে ২০১৭

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ক ত ফরজ ইসল ম র র আয় ত র একট

এছাড়াও পড়ুন:

দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়। 

সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সে পথেই দেশ অগ্রসর হবে।

প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন।

তিনি মনে করেন, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।

বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।

সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।

জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং, সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই নিজেদের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”

বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়। এবং এত সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরো দীর্ঘ সময়। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।

আমীর খসরু বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”

তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করব, যেখানেই সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”

তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো— একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ