ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে জাকাত একটি। এটি শুধু ধর্মীয় ইবাদতই নয়, বরং এটি সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও দারিদ্র্য বিমোচনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। জাকাত শব্দটি আরবি। এর অর্থ পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। ইসলামে জাকাত হলো ধনীদের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বণ্টন করা, যা সম্পদকে পবিত্র করে এবং সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করে।
জাকাতের ধারণা ইসলামের আগে থেকেই বিভিন্ন সমাজে বিদ্যমান ছিল। তবে ইসলামে এটি একটি সুসংগঠিত ও বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে (৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ) জাকাত ফরজ করা হয়। ইসলাম-পূর্ব সমাজে ধনী ও গরিবের মধ্যে বিশাল ব্যবধান ছিল। ধনীরা তাদের সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখত, আর গরিবরা চরম দারিদ্র্য ও অনাহারে জীবনযাপন করত। ইসলাম এই বৈষম্য দূর করতে জাকাতের বিধান চালু করে।
আরও পড়ুনজাকাত কীভাবে দেবেন১২ আগস্ট ২০২৩ইসলামি পণ্ডিত ইউসুফ আল-কারযাভী (রহ.
জাকাত ফরজ হওয়ার পেছনে ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা এবং সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। পবিত্র কোরআনের সুরা জারিয়াতের ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর তাদের (ধনীদের) সম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ১৯)
জাকাতের মাধ্যমে ধনীদের সম্পদে গরিবদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি সম্পদকে পবিত্র করে এবং দাতার মনকে লোভ ও স্বার্থপরতা থেকে মুক্ত করে। সুরা তওবার ১০৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তুমি তাদের সম্পদ থেকে সদকা আদায় করো, এর মাধ্যমে তুমি তাদের পবিত্র করবে।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ১০৩)
আরও পড়ুনযাদের জাকাত দেওয়া যাবে০৭ মার্চ ২০২৫জাকাত শুধু গরিবদের সাহায্য করাই নয়, এটি সম্পদকে বৃদ্ধিও করে। সুরা রুমের ৩৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যা সুদে দাও, তা আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জাকাত দান করে, তাদের সম্পদ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।’ (সুরা রুম, আয়াত: ৩৯)
জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকা আবশ্যক, যাকে ইসলামি পরিভাষায় ‘নিসাব’ বলা হয়। নিসাব হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত সম্পদ কমপক্ষে ৮৫ গ্রাম সোনা বা ৫৯৫ গ্রাম রুপা অথবা এর সমমূল্যের নগদ অর্থ বা সম্পদ। তবে এই পরিমাণ সম্পদ এক বছর থাকলে এর পরে জাকাত ফরজ হয়। নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে একজন মুসলমানের ওপর তার সম্পদের ২.৫ শতাংশ হারে জাকাত দিতে হয়।
জাকাতের অর্থ সঠিক খাতে বণ্টন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পবিত্র কোরআনের সুরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে জাকাতের আটটি খাত উল্লেখ করা হয়েছে:
১. ফকির: যার কোনো সম্পদ নেই বা খুব সামান্য সম্পদ আছে।
২. মিসকিন: যার আয় তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
৩. আমিলিন: জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণে নিয়োজিত কর্মচারী।
৪. মুয়াল্লাফাতুল কুলুব: নব্য মুসলিম বা ইসলাম গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তি।
৫. রিকাব: দাসমুক্তির জন্য জাকাতের অর্থ ব্যবহার।
৬. গারিমিন: ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি।
৭. ফি সাবিলিল্লাহ: আল্লাহর পথে জিহাদ বা ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি।
৮. ইবনে সাবিল: বিপদগ্রস্ত মুসাফির।
আরও পড়ুনজাকাত কেন গুরুত্বপূর্ণ২০ এপ্রিল ২০২৩জাকাতের মাধ্যমে ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের চেষ্টা করে। এটি ধনী ও গরিবের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখে। জাকাতের অর্থ গরিবদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হয়, যা সমাজের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখে।
জাকাত ইসলামের একটি মৌলিক বিধান, যা শুধু ধর্মীয় কর্তব্যই নয়, বরং এটি সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যের প্রতীক। জাকাতের মাধ্যমে সম্পদ পবিত্র হয়, দাতার আত্মা পরিশুদ্ধ হয় এবং সমাজে দারিদ্র্য দূর হয়। এটি ইসলামের সার্বজনীনতা ও মানবতার প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। জাকাতের সঠিক প্রয়োগ একটি সুন্দর ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের পথ প্রশস্ত করে।
আরও পড়ুনজাকাত আদায়ের সর্বোত্তম সময় রমজান২৫ মে ২০১৭উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ক ত ফরজ ইসল ম র র আয় ত র একট
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?